তিন বছরে তেলের আমদানি ৪০ ভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব
প্রচলিত শস্য বিন্যাসে আধুনিক উফশী ধানের জাতের পাশাপাশি তৈল ফসলসহ অন্যান্য ক্যাশ ক্রপ বা দামি ফসল সন্নিবেশের ক্ষেত্রে কৃষকদের সহযোগিতা করতে পরস্পর যৌথভাবে কাজ করবেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) বিজ্ঞানীরা
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্সের সভাকক্ষে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের রাইস ফার্মিং সিস্টেমস বিভাগ আয়োজিত শস্য বিন্যাস উন্নয়ন ও ফসলের জাত নির্বাচন পর্যালোচনা কর্মশালায় এ কথা জানানো হয়।
ব্রির পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. খালেকুজ্জামানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর। সম্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রির পরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) ড. মো. আবু বকর ছিদ্দিক, পরিচালক (তৈলবীজ গবেষণা কেন্দ্র) ড. মো. আবদুল লতিফ আকন্দ ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগ) ড. ফেরদৌসি ইসলাম। কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্রির রাইস ফার্মিং সিস্টেম বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধান ড. মুহম্মদ নাসিম।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রির রাইস ফার্মিং সিস্টেম বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ইব্রাহিম ও বারির সরেজমিন গবেষণা বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মাজহারুল আনোয়ার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন শেষে উভয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে দেশের ১৪টি অঞ্চলের শস্য বিন্যাসে আরও কী কী ফসল অন্তর্ভুক্ত করা যায়, সে বিষয়ে সাতটি দলগত কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় ও সরকারের নির্দেশনা হচ্ছে, ধান যেহেতু আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য, সেহেতু ধানের উৎপাদন অক্ষুণ্ন রেখে অন্যান্য দামি ফসল যেমন- তৈলবীজ, ফলমূল ও শাকসবজি চাষ বাড়াতে হবে যাতে চালের পাশাপাশি অন্যান্য ফসলেও আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারি। কেননা, করোনাকালে আমরা দেখেছি অনেক দেশ খাদ্য আমদানিতে হিমশিম খেয়েছে। টাকা থাকার পরও অনেক সময় আমদানি করা যায় না। তাই আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে প্রয়োজনীয় সব ফসলে আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। আমরা সে লক্ষ্যে ব্রি-বারি এ যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, ধান আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য। তাই ধান নির্ভর খাদ্য নিরাপত্তার কোনো ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না। সেটি নিশ্চিত রেখে অন্যান্য ক্যাশ ফসল উৎপাদন করার জন্য আমরা ব্রি ও বারি যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আশা করি এই পদক্ষেপের ফলে উফশী ধানের শস্য বিন্যাসে সরিষা, পেঁয়াজসহ অন্যান্য দামি ফসলের আবাদ এর মাধ্যমে অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।
বর্তমানে দেশের ৮৮ শতাংশ তেলের চাহিদা আমদানি-নির্ভর উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ যৌথ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে আগামী তিন বছরেই তেলের আমদানি ৪০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। বর্তমানে দেশের মোট তেলের চাহিদার মাত্র ১২ ভাগ পূরণ হয় অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে।
কর্মশালায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, আঞ্চলিক কার্যালয়ের বিজ্ঞানী ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা অংশ নেন।
আরএইচ