পাট বীজের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে রোডম্যাপ
সোনালী আঁশ পাট উৎপাদন ও রপ্তানিতে বিশ্বে বড় জায়গাও করে নিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু এ পাট বীজের প্রায় ৯০ শতাংশই আমদানি নির্ভর। যার পুরোটাই ভারত আসে থেকে। তাই ভারতের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয় দেশের পাট চাষি ও আমদানিকারকদের।
তবে এবার পাট বীজের আমদানি নির্ভরতা কমতে যাচ্ছে। দেশে উচ্চ ফলনশীল পাট বীজ উৎপাদনে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জনে তৈরি হচ্ছে রোডম্যাপ (২০২১-২০২৫)। আগামী পাঁচ বছর এ রোডম্যাপে হেঁটে পাট বীজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে বাংলাদেশ।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে পাট বীজের চাহিদা প্রায় সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন। এরমধ্যে তোষা পাটের বীজ দরকার হয় সাড়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন। বাকিটা দেশি ও কেনাফ বীজ। আর বীজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা গেলে সাশ্রয় হবে প্রায় সাড়ে ৭৫০ কোটি টাকা।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ উইংয়ের মহাপরিচালক বলাই কৃষ্ণ হাজরা ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ কখন কোনটা বন্ধ হয়ে যায় বলা মুশকিল। তাছাড়া পেঁয়াজ নিয়েও ভারতের সঙ্গে আমাদের একটা তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। এ কারণে পাটের বীজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের বিকল্প নেই।
‘এখন প্রশ্ন হতে পারে তাহলে আমরা কোন জাত নিয়ে এতো লড়াই করবো। উত্তরে বলবো, হ্যাঁ আমরা রবি ১ জাত নিয়ে লড়াই করতে পারি। জাতটি ভারতের বীজের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি ফলনশীল। এই জাতের বীজ কীভাবে তৈরি করতে পারি সে বিষয়ে বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে’ বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, পাঁচ বছর যদি আমরা রোডম্যাপ নিয়ে কাজ করতে পারি তাহলে অবশ্যই পাট বীজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারবো। কয়েক বছরের বীজ নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা থেকে এই কর্মকর্তা বলেন, সভায় পর্যালোচনা করা হবে। সবার মত নেয়া হবে। যদি কোনো কিছু যোগ করতে হয় তাহলে করা হবে।
তিনি জানান, অনেক উদ্যোক্তা ধারণা করছেন, আমাদের দেশে উপযুক্ত মাটি ও পরিবেশ নেই, এ ধারণা ঠিক না। আমাদের জাত ছিলো না তাই। বীজ তিন ধরণের হয়। প্রথমটা হলো প্রজনন বীজ। যা আমাদের লাগবে প্রায় ১ হাজার কেজি। এ বীজটি উৎপাদন করবে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট। এ বীজ উৎপাদনে জায়গারও কোনো সমস্যা নেই। এক কেজি প্রজনন বীজ থেকে ৬৫ কেজি করে ফাউন্ডেশন বা ভিত্তি বীজ হয়। এ বীজটি করবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)। এখানে প্রায় ৬০ মেট্রিক টন বীজ লাগবে। এর প্রায় ৭০ গুণ হয় প্রত্যায়িত বীজ যেটা কৃষকেরা ব্যবহার করবেন। এটাও বিএডিসি করবে। কোন জায়গায় করা সম্ভব সেটাও ঠিক করা হয়েছে। এবং তা চার বছরের মধ্যে সম্ভব।
তবে শুধু উৎপাদন করলেই হবে না, তা কৃষকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। কৃষক যেন গ্রহণ করেন সেটা নিশ্চিত করতে হবে, যোগ করেন এ কর্মকর্তা।
নিজ অভিজ্ঞতা থেকে বলাই কৃষ্ণ হাজরা বলেন, রবি ১ পাটের জাত হিসেবে খুবই ভালো। ভারতের বীজের চেয়ে এই বীজের পাট গাছ আকারেও বড় হয়। এছাড়া অনেক জায়গাতেই চাষ হচ্ছে রবি-১।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে পাটের বীজ আমদানির ক্ষেত্রে একমাত্র ভারতের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সুতরাং পাট বীজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন খুবই সময় উপযোগী।
পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (কৃষি) কৃষিবিদ ড. মো. মুজিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, একমাত্র দেশের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনা খুবই জরুরি। এছাড়া আমাদের দেশে পাট বীজ উৎপাদনের সম্ভাবনাও অনেক বেশি। সুতরাং এটি খুবই ভালো পদক্ষেপ হতে যাচ্ছে। আশা করি আগামী ৫ বছরের মধ্যে আমরা পাট বীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারবো।
একে/এমএইচএস