আজীবন সম্মাননা পেলেন কৃষিবিজ্ঞানী কাজী এম বদরুদ্দোজা
দেশের কৃষিখাতে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন গুণী কৃষিবিজ্ঞানী কাজী পেয়ারার জনক ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা। বয়স ৯০ পেরোলেও দেশের কৃষিখাতে এখনো নানা পরামর্শ ও সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি । ২০১২ সালে দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ অর্জন করেন এই কৃষিবিজ্ঞানী।
শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘অ্যাগ্রো অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ অনুষ্ঠানে চ্যানেল আই এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ কৃষিবিজ্ঞানীকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়। কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ষষ্ঠবারের মতো ১০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক-চ্যানেল আই অ্যাগ্রো অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এ বছর দুটি নতুন ক্যাটাগরিসহ মোট ০৯ ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান।
পুরস্কার পাওয়াদের মধ্যে রয়েছেন, বছরের সেরা (পুরুষ) কৃষক মাল্টা চাষি সাখাওয়াৎ হোসেন, বছরের সেরা (নারী) কৃষক ফরিদপুরের পেঁয়াজবীজ চাষি শাহিদা বেগম, কৃষি উদ্যোক্তা এরশাদ মাহমুদ, জুরি স্পেশাল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক লুৎফুল হাসান ও চট্টগ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা কোহিনুর কামাল, সেরা কৃষি প্রতিষ্ঠান (গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি) জনতা ইঞ্জিনিয়ারিং, সেরা কৃষি প্রতিষ্ঠান (সহযোগিতা ও বাস্তবায়ন) আরবান, সেরা কৃষি সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম হিরু ও দুর্যোগ প্রতিরোধে সেরা কমিউনিটি 'লিডার্স' নামের প্রতিষ্ঠান।
ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি অ্যাগ্রি ডিগ্রি শেষ করার আগে ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানে বিভাগীয় পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অনুমোদনে অ্যাগ্রিকালচার রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে একজন রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। প্রতিষ্ঠানটিতে দক্ষতার সাথে পেশাগত দায়িত্ব পালন ও নেতৃত্বের গুণাবলীর স্বীকৃতি হিসেবে ‘ফুলব্রাইট’ স্কলারশিপ পেয়ে উচ্চতর শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি।
১৯৫৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্রপ বোটানিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ দেশে ফিরে এসে কৃষি গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেন ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা। এরপর থেকে সারা জীবন তিনি নিজের গবেষণা এবং এ দেশের কৃষির উন্নতির জন্যই কাজ করে যাচ্ছেন।
কাজী এম বদরুদ্দোজা ১৯৫৭ সালে ইকোনমিক বোটানিস্ট (ফাইবার) পদ লাভ করেন। সে সময়ের কৃষকদের কাছে ফসল বলতে ছিল প্রধানত ধান ও পাট। স্বল্প পরিচিত ফসল গম ও ভুট্টা চাষ সম্পর্কে জানার জন্য তিনি সুইডেনের বিশ্বখ্যাত স্তালভ গবেষণা কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ লাভ করেন।
এর পরপরই লুগন্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিপ ইন জেনেটিকস ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬১ সালে দেশে ফেরেন এবং নতুন উদ্যমে কৃষি গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের পাকিস্তান অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ কাউন্সিলের পরিচালক, নির্বাহী পরিচালক ও মহাপরিচালকের দায়িত্ব নিয়ে তিনিই প্রথম বাংলাদেশে উচ্চ ফলনশীল গম প্রবর্তন করার উদ্যোগ নেন।
ধানের বাইরে বাংলাদেশের প্রধান দুটি দানাদার ফসল চাষ শুরুর ক্ষেত্রেও কাজী বদরুদ্দোজা নেতৃত্ব দেন। দেশে আধুনিক জাতের গম উদ্ভাবন ও চাষ শুরু করা আর ভুট্টার বাণিজ্যিক আবাদ তার হাত দিয়ে শুরু। ভুট্টা থেকে তেল উদ্ভাবন এবং তা পোল্ট্রি শিল্পের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার শুরুর ধারণাটিও তার কাছ থেকে আসা।
একে/এসআরএস