তীব্র সঙ্কটের মুখে দেশের জলাভূমি: পবা
বাংলাদেশের জলাভূমিগুলো তীব্র সঙ্কটের মুখে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান। অনিয়ন্ত্রিতভাবে জলাভূমি ধ্বংসের কারণে ইতোমধ্যে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। জলকেন্দ্রিক জীবনচক্র ও বাস্তসংস্থানের জন্য যা অশনিসংকেত বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে জাতীয় জাদুঘরের সামনে দেশের কৃষি ও পরিবেশের প্রয়োজনে পানি সম্পদ ও জলাভূমি সুরক্ষায় পদক্ষেপের দাবিতে পবা আয়োজিত মানববন্ধনে এসব কথা বলেন আবু নাসের খান।
একাধিক গবেষণা তথ্যের বরাত দিয়ে বক্তারা জানান, দেশের ১৬ কোটি মানুষের জীবন কোনো না কোনোভাবে এইসব জলাভূমির অস্তিত্বের সঙ্গে যুক্ত। বিপন্ন জলাভূমির উপর নির্ভরশীল লাখ লাখ পরিবারের জীবন-জীবিকা। জলাভূমিগুলো দেশের মোট জমির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। জলাভূমির আয়তন কমে এখন তা ৪৫ দশমিক ৮৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি পরিসংখ্যান তথ্য অনুসারে, দেশের মোট আবাদী জমির পরিমাণ ৮৫ দশমিক ৭৭ লাখ হেক্টর, যার মধ্যে ৭৪ দশমিক ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে সেচের মাধ্যমে কৃষিকাজ চলছে। এই সেচ ব্যবস্থার প্রায় ৭৮ শতাংশ পুরোপুরি ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল।
জলাভূমি কমে যাওয়ায় ভূগর্ভের পানির স্তর ক্রমেই নিচে চলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পবা চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর রিচার্জ হচ্ছে না। পানির স্তর ভয়াবহ পরিমাণে নেমে যাওয়ায় শুকনো মৌসুমে আমাদের দেশে সেচের জন্য পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায় না। পানির অভাবে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অথচ খাদ্যনিরাপত্তার জন্য এ জলাভূমির ভূমিকা অনেক বেশি।
তিনি আরও বলেন, সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নদী-নালা-খাল-বিল-হাওর-বাঁওড়-জলাশয়গুলো বাঁচাতে আমাদের সবার এগিয়ে আসতে হবে। ইতোমধ্যে জলাভূমি সমৃদ্ধ ১৩টি এলাকাকে সরকার প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে।
পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান বলেন, জলাভূমি ভরাটসহ নানাভাবে জলাশয় দূষণের মাধ্যমে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করে নিজেদের ভবিষ্যৎ বিপন্ন করে তুলছি। তিনি বলেন, জলাভূমিগুলি না বাঁচলে পরিবেশ-প্রতিবেশ ভারসাম্য বিপন্ন হলে আমরা ভালো থাকবো না। নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই জলাভূমিগুলো রক্ষা করতে হবে। সুরক্ষিত রাখতে হবে পরিবশগত ভারসাম্য।
তিনি আরও বলেন, সরকারের ভূমিকা মুখ্য হলেও জনগণের সক্রিয় সর্মথন ও স্বতঃপ্রণোদিত ভূমিকা ছাড়া এ কাজে সফল হওয়া যাবে না। শুধু আইন প্রয়োগের মাধ্যমে জলাভূমি রক্ষা করা সম্ভব নয়।
মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, পবার সম্পাদক ফেরদৌস আহেমদ উজ্জল, ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ, পরিবেশ রক্ষা উন্নয়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান মো. হুসাইন, সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আ. বাতেন সরকার, হিলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জেবুন নেছা, মার্শাল আর্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আতিক মোর্শেদ, গ্রিন ফোর্সের সদস্য ওবায়দুল ইসলাম, নাসফ এর সহ সম্পাদক মো. সেলিম, বিসিএইচআরডির নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল হক, বাংলাদেশ নদী বাচাঁও আন্দোলনের সম্পাদক শাকিল রেহমান। সঞ্চালনায় ছিলেন পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি আমির হাসান মামুদ।
একে/এইচএন/এসএম