মোটরসাইকেলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ ফুয়েল ট্যাংক; যা বাইকের চালিকাশক্তি জ্বালানিকে ধারণ ও সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু জিনিসটি ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি হওয়ায় দীর্ঘদিন ব্যবহার কিংবা অযত্নে রাখলে এর ভেতরে সহজেই জং কিংবা মরিচা ধরতে পারে। আর এই জং শুধু বাইকের কর্মক্ষমতাই কমায় না, ডেকে আনতে পারে ইঞ্জিনের স্থায়ী ক্ষতি, ভয়ঙ্কর বিপদ ও বাড়তি মেরামত খরচ।

অনেক সময় আমরা ইঞ্জিন, চেইন স্প্রোকেট বা ক্লাচের যত্ন নিতে যতটা মনোযোগ দিই, ফুয়েল ট্যাংকের ক্ষেত্রে সেটি করি না। অথচ অপরিষ্কার ফুয়েল ট্যাংক থেকে জমে থাকা ময়লা বা মাইক্রোপার্টিকেলস কার্বুরেটরে ঢুকে জ্বালানির প্রবাহ ব্যাহত করে, কমিয়ে দেয় ফুয়েল ইফিসিয়েন্সি ও ইঞ্জিনের কর্মদক্ষতা।

কেন ট্যাংকে জং ধরে?

আর্দ্রতা ও পানি জমা: ফুয়েলের ভেতরে পানি মিশে গেলে বা বাইরের আর্দ্রতা ট্যাংকের ভেতরে প্রবেশ করলে দ্রুত মরিচা পড়ে।

নিম্নমানের জ্বালানি: ভেজাল বা অশুদ্ধ ফুয়েলে থাকা পানি ও ময়লা ধীরে ধীরে ট্যাংক ক্ষয় করে। 

দীর্ঘ সময় অব্যবহৃত থাকা: ট্যাংক খালি বা আধাখালি অবস্থায় অনেকদিন রেখে দিলে বাতাসের আর্দ্রতা ঢুকে জং সৃষ্টি করে।

জং ধরলে কী কী সমস্যা হয়?

  • ফুয়েল ফিল্টার বন্ধ হয়ে যায়।
  • কার্বুরেটর বা ফুয়েল ইনজেকশনে ময়লা জমে জ্বালানি প্রবাহে বাধা দেয়।
  • ইঞ্জিন মিসফায়ার, হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া বা স্টার্ট না নেওয়ার সমস্যা দেখা দেয়।
  • গুরুতর ক্ষেত্রে ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে স্থায়ী সমস্যার কারণ হতে পারে।

ট্যাংক ভালো রাখার টিপস

  • ট্যাংক খালি রাখবেন না, সবসময় অন্তত অর্ধেক ফুয়েল ভর্তি রাখুন। এতে আর্দ্রতা কম প্রবেশ করে।
  • ভালো মানের জ্বালানি ব্যবহার করুন, নির্ভরযোগ্য পেট্রোল স্টেশন থেকে ফুয়েল নিন।
  • দীর্ঘ সময় বাইক না চালালে ফুয়েল স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার করুন, এটি জ্বালানিকে নষ্ট হতে দেয় না।
  • ট্যাংক নিয়মিত চেক করুন, সন্দেহ হলে মেকানিক দিয়ে ভেতরের অবস্থা দেখে নিন।
  • কয়েক বছর পরপর ট্যাংক খুলে বিশেষ কেমিক্যাল দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
  • বাইক শুষ্ক স্থানে রাখুন, বৃষ্টির পানি বা অতিরিক্ত আর্দ্র পরিবেশে বাইক পার্কিং এড়িয়ে চলুন।

বলে রাখা ভালো, ট্যাংক বাইকের জ্বালানির মূল ভাণ্ডার। এটি অবহেলায় ফেলে রাখলে জং ধরে যে ক্ষতি করে, তা সামাল দিতে খরচ পড়ে অনেক বেশি। সাধারণত একটি ট্যাংক মেরামত করতে ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়; বিভিন্ন মডেল, আকার ও স্থানভেদে। এছাড়াও সাধারণ কমিউটার বাইকগুলোর ট্যাংকের বর্তমান বাজার মূল্য দশ থেকে ১৫ হাজারের আশেপাশে। তাই নিয়মিত যত্ন, মানসম্মত জ্বালানি ব্যবহার এবং প্রয়োজনমতো পরিষ্কার- এসবই পারে বাইককে দীর্ঘস্থায়ী ও কর্মক্ষম রাখতে; যা ভূমিকা রাখবে আপনার পকেটের টাকা বাঁচাতেও।

ডিএ