ইলেকট্রিক বাইক চার্জের সময় সতর্ক না থাকলে যে বিপদ ঘটতে পারে
বর্তমানে পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী বাহন হিসেবে জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে ইলেকট্রিক বাইকের। জ্বালানি খরচ নেই ও চালাতে সহজ হওয়ায় শহুরে জীবনে এটি একটি আদর্শ বিকল্প। কিন্তু এই ই-বাইককে কেন্দ্র করে শোনা যায় বিভিন্ন দুর্ঘটনার খবর। কখনো ই-বাইক বিস্ফোরণ হচ্ছে, আবার কখনও ই-বাইক চার্জে দিতে গিয়ে বিভিন্নভাবে বিপদের মুখে পড়ছেন ব্যবহারকারীরা।
ই-বাইক রক্ষণাবেক্ষণ যতটা সহজ মনে হয়, ততটা নয়। বিশেষ করে চার্জ দেওয়ার সময় সামান্য অসাবধানতা ডেকে আনতে পারে মারাত্মক বিপদ। সঠিক নিয়ম মেনে না চললে ব্যাটারি থেকে আগুন লাগা বা বিস্ফোরণের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
বিজ্ঞাপন
এবার আমরা জানব, ইলেকট্রিক বাইক ব্যবহারে অসাবধানতা কীভাবে বিপদ ডেকে আনতে পারে এবং কীভাবে এর থেকে নিরাপদ থাকা যায়।
যেভাবে ঘটে দুর্ঘটনা
বিজ্ঞাপন
বৈদ্যুতিক বাইকের ব্যাটারি সাধারণত লিথিয়াম-আয়ন বা লিথিয়াম-পলিমার প্রযুক্তির হয়ে থাকে। এই ব্যাটারিগুলো যদি ত্রুটিপূর্ণ হয় অথবা ভুল উপায়ে চার্জ করা হয়, তাহলে তা অতিরিক্ত গরম হয়ে আগুন ধরতে পারে।
বাইক চার্জ করার সময় খেয়াল রাখুন যেন জায়গাটি খোলামেলা হয়। বদ্ধ বা কম বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় রাখলে ব্যাটারির অতিরিক্ত তাপ বের হতে পারে না, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়।
এছাড়াও...
ভুল চার্জার ব্যবহার: বাইকের সঙ্গে দেওয়া নির্দিষ্ট চার্জার ব্যবহার না করে অন্য কোনো চার্জার ব্যবহার করলে তা ব্যাটারির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। চার্জারের ভোল্টেজ ও কারেন্ট রেটিং যদি ব্যাটারির সঙ্গে না মেলে, তাহলে অতিরিক্ত চার্জের কারণে ব্যাটারি ফুলে যেতে পারে বা শর্ট সার্কিট হতে পারে।
অতিরিক্ত চার্জিং: অনেক ব্যবহারকারী রাতে ঘুমানোর আগে বাইক চার্জে দিয়ে রাখেন এবং সারা রাত চার্জ হতে থাকে। এতে ব্যাটারি ওভারচার্জ হয়ে যায়। বেশিরভাগ চার্জারে ‘অটো কাট অফ’ সিস্টেম থাকলেও, চার্জার বা বাইকের ব্যাটারিতে ত্রুটি থাকলে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা কাজ নাও করতে পারে, যা ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ বিপদ।
আরও পড়ুন
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাটারি: বাইক পড়ে গেলে বা অন্য কোনো দুর্ঘটনায় ব্যাটারির ভেতরের অংশে ক্ষতি হতে পারে। বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও ব্যাটারি চার্জের সময় থাকে বিস্ফোরণের শঙ্কা। তাই বাইক দুর্ঘটনার শিকার হলে ব্যাটারি ভালো আছে কী না, তা পরীক্ষা করে নেওয়া জরুরি।
নিম্নমানের চার্জার বা ব্যাটারি: বাজারে অনেক সময় সস্তা ও নিম্নমানের চার্জার এবং নকল ব্যাটারি পাওয়া যায়। এগুলো নির্ভরযোগ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই তৈরি হয়, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
কীভাবে নিরাপদ থাকবেন?
বৈদ্যুতিক বাইক চার্জের সময় কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললে এসব দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব:—
সঠিক চার্জার ব্যবহার করুন: সব সময় বাইকের সঙ্গে সরবরাহকৃত আসল চার্জারটি ব্যবহার করুন।
সঠিক জায়গায় চার্জ দিন: চার্জিংয়ের সময় বাইকটি উন্মুক্ত, শুকনো এবং বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় রাখুন। দাহ্য পদার্থ যেমন আসবাবপত্র, পর্দা বা কাগজের কাছাকাছি চার্জ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
সরাসরি নজরে রাখুন: বাইক চার্জ করার সময় সম্ভব হলে পাশে থাকুন এবং লক্ষ্য রাখুন। সারা রাত চার্জে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়া থেকে বিরত থাকুন।
ব্যাটারির অবস্থা পরীক্ষা করুন: চার্জ দেওয়ার আগে ব্যাটারিটি ভালোভাবে দেখুন। যদি ব্যাটারি ফোলা বা কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মনে হয়, তাহলে তা চার্জ করা থেকে বিরত থাকুন এবং দ্রুত সার্ভিস সেন্টারে যোগাযোগ করুন।
সার্ভিসিং করান: ফ্রি সময় পেলেই ই-বাইকের ব্যাটারি পেশাদার টেকনিশিয়ানকে দিয়ে পরীক্ষা করান। এতে যেকোনো সম্ভাব্য ত্রুটি আগে থেকেই ধরা পড়বে।
মনে রাখবেন, ই-বাইকের ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার সময় বৈদ্যুতিক আঘাত বা শকের ঝুঁকিও থাকে। ভেজা হাত দিয়ে চার্জার স্পর্শ করবেন না। চার্জের স্থান যেন বৃষ্টি কিংবা অন্য কোনো কারণে ভেজা বা স্যাঁতস্যাঁতে যেন না থাকে, সেদিকটা খেয়াল রাখবেন। চার্জার কিংবা ব্যাটারি- উভয়ই পানিতে ভিজে গেলে শর্ট সার্কিটের ঝুঁকি বাড়ে বহুগুণ। কাজেই, বৈদ্যুতিক বাইকের চার্জার ও সকেট এমনভাবে রাখুন যেন তাতে পানি না লাগে। আর অবশ্যই চার্জার প্লাগে লাগানোর আগে নিশ্চিত হয়ে নিন আপনার হাত বা চার্জারটি ভেজা নয়। ভেজা অবস্থায় এটি স্পর্শ করলে বৈদ্যুতিক শক লাগতে পারে, যা হতে পারে প্রাণঘাতী।
ডিএ