নতুন বাইক কেনার আনন্দটাই আলাদা। অনেকেই বছরের পর বছর অপেক্ষার পর পছন্দের বাইকটি হাতে পান। কিন্তু বাইক পাওয়ার পরপরই প্রায় সবারই এক অভিজ্ঞতা হয়— বন্ধু বা পরিচিত কেউ এসে বাইক চালানোর জন্য চাবি চেয়ে বসেন। সামাজিক কারণে অনেক সময় সরাসরি ‘না’ বলা যায় না। তবে মোটরসাইকেল বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন বাইক কেনার পর অন্তত ব্রেক-ইন পিরিয়ড শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্য কারও হাতে বাইক তুলে দেওয়া ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।

ব্রেক-ইন পিরিয়ড কেন গুরুত্বপূর্ণ

প্রত্যেকটি নতুন বাইকের একটি নির্দিষ্ট ব্রেক-ইন পিরিয়ড থাকে। সাধারণত প্রথম ৮০০ থেকে ১,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত সময়কে এই পর্যায় ধরা হয়। এই সময়ে বাইকের ইঞ্জিন, গিয়ারবক্স, ব্রেকসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ আস্তে আস্তে নিজেদের মধ্যে খাপ খাইয়ে নেয়।

কোন কোন দিক মেকানিকালি গুরুত্বপূর্ণ

• ইঞ্জিন সেটআপ: নতুন ইঞ্জিনে পিস্টন রিং, সিলিন্ডার ওয়াল ইত্যাদি ধীরে ধীরে মানিয়ে নেয়। যদি হঠাৎ অতিরিক্ত গতিতে বা লোডে চালানো হয়, তাহলে অস্বাভাবিক ঘর্ষণ তৈরি হয়ে স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।

• গিয়ারবক্সের সমন্বয়: প্রথম দিকে গিয়ার পরিবর্তন মসৃণ হয় না। সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে গিয়ারের দাঁত ক্ষয়ে যেতে পারে।

• ব্রেকিং সিস্টেম: নতুন ব্রেক প্যাড ও ডিস্ক ধীরে ধীরে ঘষে একে অপরের সঙ্গে মানিয়ে নেয়। ব্রেক অতিরিক্ত চাপ দিলে বা হঠাৎ ঝাঁকুনি দিলে ব্রেকিং পারফরম্যান্স কমে যেতে পারে।

• টায়ার গ্রিপ: একেবারে নতুন টায়ারের বাইরের স্তর মসৃণ থাকে, যা ধীরে ধীরে রাস্তায় ঘষে ভালো গ্রিপ তৈরি করে। প্রথম কয়েকশ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ থাকে, তাই সাবধানে চালানো জরুরি।

• ইঞ্জিন অয়েল সঞ্চালন: শুরুতে ইঞ্জিন অয়েলে মাইক্রো-মেটাল কণিকা জমতে থাকে, তাই প্রথম অয়েল পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময়ে অয়েল না বদলালে ভবিষ্যতে ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

অন্যের হাতে দিলে ঝুঁকি

মালিক নিজে সাধারণত নিয়ম মেনে ও সচেতনভাবে বাইক চালান। কিন্তু অন্য কেউ হয়তো অজান্তেই বেশি রেভ করবে, হঠাৎ ব্রেক চাপবে বা টায়ার স্লিপ করাবে। এতে শুধু দুর্ঘটনার আশঙ্কাই বাড়ে না, বরং বাইকের ভেতরের মেকানিক্যালও ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

এছাড়াও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নতুন বাইক যত যত্ন পায়, তার স্থায়িত্ব তত বেশি হয়। শুরুতে সঠিকভাবে ব্যবহার করলে ইঞ্জিন থেকে শুরু করে ব্রেক, গিয়ার— সবই দীর্ঘদিন ভালো পারফরম্যান্স ধরে রাখে; অন্যদিকে অবহেলা করলে বাইকের আয়ু দ্রুত কমে যেতে পারে।

‘না’ বলার সাহস রাখুন

বাইক শুধু যাতায়াতের মাধ্যম নয়, এটি মালিকের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন ও পরিশ্রমের প্রতিফলন। তাই সম্পর্কের খাতিরে চাপে পড়ে বাইক অন্যকে না দেওয়াই ভালো। নিজের স্বার্থেই এই জায়গায় স্পষ্টভাবে ‘না’ বলতে শেখা জরুরি।

ডিএ