বাংলাদেশে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি- ইভির বাজার ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানি-সাশ্রয়ী বিকল্প হিসেবে ইভির প্রতি আগ্রহ বাড়ছে গাড়িপ্রেমীদের মাঝে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধুমাত্র ফুয়েল খরচ কমবে ভেবে নয়, ইভি কেনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা প্রয়োজন।

প্রথমত, এক চার্জে গাড়ির চলার দূরত্ব বা ‘রেঞ্জ’ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণত বাংলাদেশের শহুরে পরিবেশে ২০০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার রেঞ্জের গাড়ি যথেষ্ট হলেও দীর্ঘ যাত্রার ক্ষেত্রে অন্তত ৪০০–৫০০ কিলোমিটার রেঞ্জ থাকা প্রয়োজন। ব্যবহার, এয়ার কন্ডিশনিং এবং রাস্তার পরিস্থিতি এই রেঞ্জে প্রভাব ফেলে।

দ্বিতীয়ত, চার্জিং অবকাঠামো ও সুবিধা নিয়ে ভাবা জরুরি। বর্তমানে ঢাকাসহ কয়েকটি বড় শহরে সীমিতসংখ্যক চার্জিং স্টেশন চালু হয়েছে। তবে দীর্ঘ রুটে এখনো চার্জিং নেটওয়ার্ক পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি। অনেক ক্রেতা বাড়িতে চার্জার স্থাপন করছেন, যা বিদ্যুৎ সংযোগ ও খরচের ওপর নির্ভরশীল। দ্রুত চার্জিং (DC Fast Charge) সুবিধা থাকলে তা সময় বাঁচাতে সাহায্য করে।

তৃতীয়ত, মূল্য, কর ও সরকারি প্রণোদনা বিবেচনা করতে হবে। বাংলাদেশে ইভি আমদানিতে তুলনামূলক কম শুল্ক ও প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। তবে শুধুমাত্র গাড়ির দাম নয়, চার্জার স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং ব্যাটারি পরিবর্তনের খরচও হিসাবের মধ্যে রাখতে হয়।

চতুর্থত, রক্ষণাবেক্ষণ ও সার্ভিসিং। ইভি-তে ইঞ্জিন বা গিয়ারবক্সের মতো চলমান যন্ত্রাংশ কম থাকায় রক্ষণাবেক্ষণ খরচ তুলনামূলক কম। তবে ব্যাটারি নষ্ট হলে তা পরিবর্তন করতে বড় অঙ্কের ব্যয় হতে পারে। এছাড়া দেশে দক্ষ ইভি মেকানিক এবং যন্ত্রাংশ সরবরাহ এখনো সীমিত।

সবশেষে, রিসেল ভ্যালু ও ভবিষ্যৎ ব্যবস্থাপনা একটি বড় বিষয়। প্রযুক্তি দ্রুত বদলে যাওয়ায় পুরোনো মডেলের ইভি বিক্রি করা কঠিন হতে পারে। তাছাড়া ব্যাটারি রিসাইক্লিং এবং পুনর্ব্যবহারের সুযোগ এখনো বাংলাদেশে সীমিত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইভি কেনা ভবিষ্যতের জন্য ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে, তবে তা যেন যুক্তিসঙ্গতভাবে ও সচেতনভাবে হয়। ড্রাইভিং রেঞ্জ, চার্জিং সুবিধা, খরচ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং ভবিষ্যৎ ব্যবস্থাপনা, এই পাঁচটি বিষয় বিবেচনায় নিলে ক্রেতা যেমন সাশ্রয়ী হবেন, তেমনি পরিবেশও উপকৃত হবে।

ডিএ