সকালে বাইক স্টার্ট নিতে সমস্যা? কয়েকটি কাজেই মিলবে সমাধান
সকালে বাইক নিয়ে বের হওয়ার সময় ইঞ্জিন স্টার্ট নিতে দেরি হচ্ছে? এই সমস্যাটি রাইডারদের কাছে এক বাড়তি ভোগান্তি। সকালে কাজে বা অফিসের দিকে যাওয়ার সময় যখন বাইকটি বারবার কিক বা সেলফ দেওয়ার পরও চালু হতে চায় না, তখন সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছানো একরকম চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে যায়। মূলত আবহাওয়ার পরিবর্তন, বিশেষ করে শীতকালে তাপমাত্রা কমে গেলে অথবা দীর্ঘদিন বাইক অব্যবহৃত থাকলে এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তবে কিছু সহজ টিপস জানা থাকলে এই ভোগান্তি এড়ানো সম্ভব।
মূলত কেন বাইক স্টার্ট নিতে সমস্যা হয়?
বিজ্ঞাপন
সকালে বাইক সহজে স্টার্ট না নেওয়ার পেছনে প্রধানত কয়েকটি সাধারণ কারিগরি কারণ দায়ী থাকে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- ইঞ্জিন ঠান্ডা হয়ে যাওয়া; বিশেষত শীতকালে। দীর্ঘক্ষণ ইঞ্জিন বন্ধ থাকলে সেটি ঠান্ডা হয়ে যায়। ফলে ইঞ্জিন সচল হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় এয়ার-ফুয়েল মিশ্রণে উপযুক্ত ইগনিশন তাপমাত্রা তৈরি হতে পারে না।
ব্যাটারি দুর্বল বা চার্জ কম থাকার কারণেও বাইক স্টার্ট নিতে চায় না। যেসব বাইকে শুধু সেলফ স্টার্টার থাকে, সেগুলোর জন্য ব্যাটারি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাটারি পুরোনো হলে, চার্জ কম থাকলে বা ঠান্ডার কারণে ব্যাটারি বসে গেলে সেসব বাইক স্টার্ট নেওয়ার সময় ব্যাপক ঝামেলা তৈরি করতে পারে।
বিজ্ঞাপন
স্পার্ক প্লাগের সমস্যাও অন্যতম কারণ। স্পার্ক প্লাগ হলো ইঞ্জিনে আগুন ধরানোর প্রধান যন্ত্রাংশ। এটি ময়লা হয়ে গেলে, অতিরিক্ত তেল বা কার্বন জমে কালো হয়ে গেলে অথবা ঢিলা হয়ে গেলে ইঞ্জিন সহজে চালু হয় না।
সকাল হোক বা সন্ধ্যা, ফুয়েলের সমস্যা থাকলে বাইক স্টার্ট নিতে সমস্যা হবেই! অনেক সময় ফুয়েল লাইনে ত্রুটি থাকলে, ট্যাংকে পর্যাপ্ত জ্বালানি না থাকলে অথবা কার্বুরেটরে পানি ঢুকে গেলে স্টার্ট নিতে সমস্যা দেখা দেয়।
এয়ার ফিল্টারের অবস্থা যাচাই করুন। অনেকের মাথায় থাকে না, এয়ার ফিল্টার অপরিস্কার থাকলেও বাইকের স্টার্ট নিতে সমস্যা হতে পারে। মূলত, এয়ার ফিল্টার ময়লা হয়ে গেলে ইঞ্জিন প্রয়োজনীয় বাতাস পায় না, ফলে ফুয়েল মিশ্রণ সঠিক অনুপাতে থাকে না এবং স্টার্ট নিতে কষ্ট হয়।
দ্রুত স্টার্ট নেওয়ার কার্যকারী টিপস
মোটরযান বিশেষজ্ঞরা কিছু সহজ কৌশল অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যা সকালে আপনার বাইকটিকে দ্রুত সচল করতে সাহায্য করবে।
১. চোক ব্যবহার করুন (কার্বুরেটর বাইকের জন্য)
যদি আপনার বাইকে কার্বুরেটর থাকে, তাহলে স্টার্ট করার আগে চোক (Choke) টেনে ধরুন। চোক টানলে ইঞ্জিনে প্রয়োজনীয় বাতাস-জ্বালানির মিশ্রণ তৈরি হতে সাহায্য করে। বাইক একবার স্টার্ট নিলে দ্রুত চোক ছেড়ে দিন, না হলে অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যবহার হবে।
২. ‘ওয়ার্ম আপ’ করুন
বাইক স্টার্ট করার সঙ্গে সঙ্গেই যাত্রা শুরু করবেন না। এতে ইঞ্জিনের ভেতরের যন্ত্রাংশে ক্ষতি হতে পারে। স্টার্ট করার পর অন্তত ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট বাইকটিকে আইডল (Idle) অবস্থায় চলতে দিন। এতে ইঞ্জিন গরম হবে এবং ইঞ্জিন অয়েল ইঞ্জিনের সব কোণায় ছড়িয়ে যাবে। খুব বেশি রেভ (RPM) করা থেকে বিরত থাকুন।
৩. ব্যাটারি ও স্পার্ক প্লাগ পরীক্ষা
নিয়মিত ব্যাটারির অবস্থা পরীক্ষা করুন। সেলফ স্টার্টের বাইকে ব্যাটারি দুর্বল হলে কিক দিয়েও স্টার্ট নেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। নির্দিষ্ট সময় অন্তর স্পার্ক প্লাগ খুলে পরিষ্কার করুন অথবা পরিবর্তন করে নিন। এটি ঢিলা হয়ে গেলে শক্ত করে লাগিয়ে দিন।
৪. জ্বালানি ও ইঞ্জিন অয়েল নিশ্চিত করুন
নিশ্চিত করুন যে বাইকের ট্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণে মানসম্মত ফুয়েল (পেট্রোল/অকটেন) আছে এবং ফুয়েল চাবি অন করা আছে। নির্দিষ্ট সময় পর পর ভালো মানের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার ও পরিবর্তন করুন। ঠান্ডা আবহাওয়ায় ঘন ইঞ্জিন অয়েল স্টার্ট নিতে সমস্যা করে।
৫. বাইক ঢেকে রাখুন
শীতকালে বা বর্ষাকালে বাইক সরাসরি কুয়াশা বা বৃষ্টির নিচে রাখবেন না। সম্ভব হলে একটি কভার দিয়ে ঢেকে রাখুন। কুয়াশা বা আর্দ্রতা ব্যাটারি এবং ইলেকট্রিক সংযোগে প্রভাব ফেলতে পারে।
এই সাধারণ টিপসগুলো মেনে চললে আপনার দৈনন্দিন বাইক স্টার্টজনিত ভোগান্তি অনেকটাই কমে যাবে। তবে যদি সমস্যার সমাধান না হয়, তবে দ্রুত একজন অভিজ্ঞ মেকানিকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ডিএ