জাতীয় পতাকা বিকৃতি : ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি
বেরোবিতে বিকৃত পতাকা নিয়ে ছবি তোলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) মহান বিজয় দিবসে জাতীয় পতাকা বিকৃত করে উপস্থাপন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করার ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে।
রংপুর জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি ওই ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশসহ এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। প্রতিবেদনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর কাছে পাঠানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বিষয়টি নিশ্চিত ঢাকা পোস্টকে বলেন, জাতীয় পতাকা বিকৃতির ঘটনায় রংপুর জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম রব্বানী মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদনে জাতীয় পতাকা বিকৃতির অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। সে কারণে আমাদের তদন্ত প্রতিবেদনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে পাঠানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ওই প্রতিবেদনে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার তথ্যসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান তদন্ত কমিটির একজন সদস্য। তবে তিনি নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, বিজয় দিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক একটি বিকৃত জাতীয় পতাকা নিয়ে ফটোশেসন করে তা ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন। তদন্তে তার প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) রংপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটির প্রধান ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম রব্বানী। অন্য সদস্যরা হলেন- মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সদরুল আলম দুলু এবং মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার জিন্নাহ আল মামুন।
পতাকা বিকৃতির ঘটনার এক সপ্তাহ পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৭৩তম বিশেষ সভায় তিন সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়। এতে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর নাজমুল ইসলামকে আহ্বায়ক প্রক্টর আতিউর রহমানকে সদস্য সচিব এবং একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য সুচিতা সুচিত্রা শারমিনকে সদস্য করা হয়েছে। তবে কবে নাগাদ প্রতিবেদন জমা দিতে হবে তার সুনির্দিষ্ট কোনো সময় বেধে দেয়নি প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি নিয়েও সমালোচনার ঝড় ওঠেছে। সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অভিযোগ, পতাকা অবমাননার ঘটনায় অভিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর সভাপতিত্বে এবং আরেক অভিযুক্ত শিক্ষক আর.এম হাফিজুর রহমানের উপস্থিতিতে সুপারিশে সিন্ডিকেট সভায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মতামতের ভিত্তিতে গঠিত এ তদন্ত কমিটি মূলত তাদের দায়মুক্তি দিতে পারে।
পতাকা বিকৃতির ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহামুদুল হক বলেন, পতাকা অবমাননার ঘটনায় সাতদিন পর তদন্ত কমিটি গঠন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বহীনতারই বহিঃপ্রকাশ। উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বেশ কয়েকজন পতাকা অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত। এমন অবস্থায় তদন্ত কমিটি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, পতাকা অবমাননার ঘটনায় অভিযুক্ত উপাচার্যসহ সকল অভিযুক্ত শিক্ষকদের প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানাচ্ছি।
বেরোবি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজেই তদন্ত কমিটি করে তার ধৃষ্টতার পরিচয় দেখাল রাষ্ট্রকে। এর মাধ্যমে অভিযুক্ত নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থাকে চরমভাবে অবমাননা করল। এর জন্য রাষ্ট্রের কাছে বিচার দাবি করছি। সেই সঙ্গে এই তদন্ত কমিটিকে আমরা পুরোপুরিভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।
প্রসঙ্গত, মহান বিজয় দিবসে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারকে বিকৃত পতাকা নিয়ে ছবি তোলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক। পরে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় উঠে। এ ঘটনায় ৯ শিক্ষকসহ উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষক ও একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তাজহাট থানায় দুটি মামলা করেছেন। গত রোববার (২০ ডিসেম্বর) রংপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শওকত আলী অভিযোগ দুটি তদন্ত করে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
এছাড়া পতাকা কাণ্ডের পর থেকে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাস ও পার্কের মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
এসপি