৭৩ বছরে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ
আজ থেকে ৭৩ বছর আগের কথা। ১৯৪৯ সালের ১১ নভেম্বর নালগলার জুম্মন ব্যাপারী লেনে (ভাওয়ালরাজ এস্টেট) কায়েদ-ই-আজম কলেজ নামেই গোড়াপত্তন হয় সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের। ভাওয়ালরাজ এস্টেটের জমিতে অবস্থিত একটি ভবন নিয়ে যাত্রা শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী এই কলেজটির। তবে জরাজীর্ণ ভবনটিতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে প্রয়োজন হয় সংস্কারের। এগিয়ে আসেন তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। সহায়তা হিসেবে পাঁচ হাজার টাকা দিলে তাৎক্ষণিক কলেজটির সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়। যদিও পরবর্তীতে লক্ষ্মীবাজারের জমি কেনার পর কলেজটিকে বর্তমান স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে। আর নালগলার শুরুর ভবনটিকে রূপান্তর করা হয় ছাত্রাবাসে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে কায়েদ-ই-আজম কলেজের নাম পরিবর্তন করা হয়। প্রবীণ রাজনীতিবিদ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নামানুসারে ১৯৭২ সালে কলেজটির নাম পরিবর্তন করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ করা হয়। ১৯৮৪ সালের ১ নভেম্বর কলেজটি সরকারি কলেজে হিসেবে যুক্ত হলে এর নাম হয় সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ।
বিজ্ঞাপন
দেশের স্বাধিকার আন্দোলনসহ অসংখ্য ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী এই সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। কালের পরিক্রমায় ৭২ বছর পেরিয়ে এই কলেজটি আজ পা রেখেছে ৭৩ বছরে।
ঐতিহ্যবাহী এই কলেজের জন্ম জানতে হলে অর্ধশতাব্দী পেছন ফিরে তাকাতে হবে। জানা গেছে, বিহারের প্রাদেশিক সেবায় নিয়োজিত ভূগোল বিভাগের বিখ্যাত অধ্যাপক সৈয়দ জহির আহসান ১৯৫০ সালে কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব নেন। তবে ১৫ এপ্রিল ১৯৫৪ সালে প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এ.এম.এ.আর. ফাতেমী অধ্যক্ষ হিসাবে যোগদানের পরপরই কলেজের ক্রমবর্ধমান উন্নতি শুরু হয়।
বিজ্ঞাপন
পরবর্তীতে ১৯৫৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান পাঠদান শুরু হয়। ১৯৫৮ সালে স্নাতক শ্রেণিতে বিজ্ঞান কোর্সের সূচনা ছিল যুগান্তকারী। তখন এই কলেজ ছাড়া ঢাকার কোনো কলেজে স্নাতক পর্যায়ে কোনো বিজ্ঞান কোর্স ছিল না। আর এই সকল কর্মকাণ্ডের সফল ব্যক্তি ছিলেন অধ্যক্ষ ফাতেমী। অচিরেই এই কলেজটি প্রদেশের একটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। কলেজ কর্তৃপক্ষ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাক্তন গভর্নরকে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হওয়ার প্রস্তাব দিলে তিনি আন্তরিকভাবে প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন।অধ্যক্ষ ফাতেমীর সময়কালে (১৯৫৪-১৯৭১ সাল পর্যন্ত) ছাত্র ও শিক্ষকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৩৪০০ এবং ৬০ জনে।
২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষে কলেজটিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু করা হয়। ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়।
সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজটি পুরান ঢাকার পুরনো দিনের স্থাপত্য হিসেবে পরিচিত। বাহাদুরশাহ পার্কের পূর্ব পাশে লক্ষ্মীবাজারে মোট এক একর জমির উপর নির্মিত দ্বিতল ভবনটি লাল ইট দিয়ে সজ্জিত। এছাড়াও সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয় মোট তিনটি ভবন থেকে। বর্তমানে কলেজের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। তবে এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা অনেক কম।
অবকাঠামো উন্নয়নসহ কলেজের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আধুনিকতার ছোঁয়া আনতে সরকারের বড় ধরনের সহায়তা প্রয়োজন বলে জানান কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহসিন কবীর। তিনি বলেন, বর্তমানে অনার্স পর্যায়ে ১৬টি বিভাগে পাঠদান চলছে। অতীতের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের কঠোর পরিশ্রমের ফসলই বর্তমান সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ।
তিনি আরও বলেন, একটি প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত ধারা প্রতিফলিত হয় তার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অভিজ্ঞতার গভীরতায়। সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ৭২ বছরের পুরনো প্রতিষ্ঠান। প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী এখানে অধ্যয়ন করছেন। ৭৭ জন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক এখানে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে নিয়োজিত রয়েছেন।
অধ্যক্ষ মোহসিন কবীর বলেন, শিক্ষার্থীদের একাডেমিক সার্টিফিকেট বা ডিগ্রি অর্জনের জন্য প্রস্তুত করা আমাদের মূল উদ্দেশ্য নয়। ভবিষ্যতে জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তাদের আলোকিত মানুষ হিসাবে গড়ে তোলাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমাদের প্রত্যাশা শিক্ষার্থীরা শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবেন। সেজন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে আমরা সবসময়ই নিরলস প্রচেষ্টা করে যাচ্ছি।
আরএইচটি/কেএ