ঢাবিতে ছাত্রলীগের হাতে সাংবাদিক হেনস্তা, তদন্ত কমিটি গঠন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মাস্টারদা সূর্যসেন হলে সাংবাদিককে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে হল ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) রাত ১১টায় হলের রিডিংরুমের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিকের নাম তাওসিফুল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ডেইলি অবজারভার পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।
এ ঘটনায় আজ (বুধবার) দুপুরে অভিযুক্ত ছাত্রলীগকর্মীদের শাস্তি চেয়ে প্রক্টর ও হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিক। পরে ঘটনা তদন্তে চার সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে হল কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞাপন
এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন, মার্কেটিং বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তুষার হোসাইন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মুনতাসির মামুন রিফাত এবং ফাইনান্স বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের সিরাজুল ইসলাম। তুষার ও রিফাত হল ছাত্রলীগ সভাপতি মারিয়াম জামান সোহানের অনুসারী। অন্যদিকে সিরাজুল ইসলাম হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমানের অনুসারী।
অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী তাওসিফ বলেন, ‘গত মঙ্গলবার রাত ১১টা ২০ মিনিট নাগাদ হল ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা হলের রিডিং রুমে যাচ্ছিলেন। আমিও সেখানে যাই এবং দুইটি রিডিং রুমে একই নির্দেশনা দেওয়ায় আমি ছোট করে বললাম ‘অহ দ্যাট সেইম লেকচার’ এবং বের হয়ে চলে আসছিলাম। তখন তুষার হুসাইন, মুনতাসির মামুন রিফাত এবং সিরাজুল ইসলামসহ কয়েকজন আমার ‘লেকচার’ শব্দটি শোনেন এবং আমার পথ অবরুদ্ধ করেন। আমাকে বারবার জেরা করতে থাকেন। আমার পরিচয় জানতে চাইলে আমি বলি আমি জাতীয় দৈনিক অবজারভারের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।’
বিজ্ঞাপন
‘তারা আমাকেসহ সাংবাদিক সমিতি, সমিতির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে গালিগালাজ করতে থাকেন। তুষার হুসাইন আমাকে মেরে হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। এক পর্যায়ে একজন আমাকে ধাক্কা দেন। আমার ধারণা, তুষার হুসাইনের বিরুদ্ধে ডেইলি অবজারভারে ছিনতাইয়ের নিউজ করায় তিনি আগে থেকেই আমার ওপর ক্ষিপ্ত। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বের হয়ে আসলে তাদের আমি বিষয়টা জানাই। পরে তাদের উপস্থিতিতেই আমাকে শাসানো হয় ও উগ্রভাবে বারবার তেড়ে আসতে থাকেন।’
এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত তুষার হোসাইন দাবি করেন, ‘গতকাল হল ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আমরা শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে রিডিংরুমে যাই। তখন হলের একটা ছেলে নিজে নিজে আজেবাজে ভাষায় মন্তব্য করে বের হচ্ছিল। তখন আমাদের একজন সিনিয়র তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করেন। তখন ছেলেটি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিলে আমি তাকে বলি, তুমি কী সাংবাদিকতার পাওয়ার দেখাচ্ছ? আমি বা কেউ তাকে ধাক্কা দেয়নি ও গালিগালাজও করিনি।’
অভিযুক্ত মুনতাসির মামুন রিফাত বলেন, ‘ছেলেটি রিডিংরুম থেকে বের হওয়ার সময় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে উদ্দেশ্য করে বলেছে যে, ‘বড় বড় লেকচার দিচ্ছে।’ তখন আমি তার কাছে একথা বলার কারণ জানতে চাই। তখন কিছু জুনিয়র উল্টা-পাল্টা কথা বলেছে। আমি ওদের থামিয়ে দিয়েছি।’
এ বিষয়ে হল ছাত্রলীগের সভাপতি মারিয়াম জামান সোহান বলেন, ‘আমরা রিডিং রুম থেকে বের হয়ে কোনো ধাক্কাধাক্কি বা গালিগালাজ শুনিনি, একটু জটলা দেখেছি। পরে আমি তাওসিফকে বলেছি তুমি আমার সঙ্গে এসো ও আর তুষারদের সরিয়ে দিয়েছি।’
সূর্যসেন হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ মকবুল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক আমি ব্যবস্থাগ্রহণ করেছি। হলের আবাসিক শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলামকে প্রধান করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজকে রাতেই তদন্ত কমিটি সবার সঙ্গে বসবেন। এতে যদি কারো দোষ বা অপরাধ থেকে থাকে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে আমি জানতে পেরেছি এবং আমি হল প্রভোস্টকে বলে দিয়েছি যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
উল্লেখ্য, গত আগস্ট মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর এলাকা থেকে প্রজিত দাশ নামের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে একটি মোটরসাইকেল, ১৭ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন ছিনতাই করেছিলেন অভিযুক্ত তুষার ও তার কয়েকজন সহযোগী। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পরে ছিনতাইয়ের জিনিসপত্র ফেরত দিয়ে এমন কাজ আর করবেন না মর্মে মুচলেকা দিয়েছিলেন তিনি।
এইচআর/কেএ