হল খুলে দেওয়ার দাবিতে ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন/সংগৃহীত

স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষার আগে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খুলে দেওয়াসহ চার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। একই দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারেও মানববন্ধন করা হয়েছে।

ছাত্র অধিকার পরিষদ বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নেয়। সংগঠনের ঢাবি শাখার সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহবায়ক তারিকুল ইসলাম তারেক, ঢাবি শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাকিল মিয়া, সদস্য মোহাম্মদ সানাউল্লাহ, মোয়াজ্জেম হোসেন, মোহাম্মদ রাসেল প্রমুখ সেখানে অবস্থান করেন।

অবস্থান কর্মসূচি থেকে ঘোষিত দাবিগুলো 
১.অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরীক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল খুলে দিতে হবে। এক্ষেত্রে মেডিক্যাল সেন্টারে করোনা ইউনিট স্থাপন ও পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে। বহিরাগত প্রবেশ সীমিত করতে হবে। হলে আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত চেকিং ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। প্রতি ফ্যাকাল্টিতে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। অসুস্থ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে ভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।

২.পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে প্রয়োজনে মেকআপ ক্লাসের ব্যবস্থা করতে হবে।

৩. ডিভাইস সমস্যায় থাকা শিক্ষার্থীদের ডিভাইস দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। অতিসত্বর ডিভাইস দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

৪. সব শিক্ষার্থীদের নেট প্যাকেজ কেনার ন্যূনতম খরচ দিতে হবে।

অবস্থান কর্মসূচি সম্পর্কে বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, হল না খোলে পরীক্ষা নেওয়া মানে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া। বিশেষ করে ছাত্রীরা রীতিমতো খারাপ অব্স্থায় পড়বে। শিক্ষার্থীরা নানাভাবে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও প্রশাসনের নীরব ভূমিকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, অনিশ্চয়তা আর ক্ষোভ সৃষ্টি করছে। আমরা ছাত্র অধিকার পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এই অবস্থান কর্মসূচি থেকে প্রশাসনকে আহবান করছি, জেনে বুঝে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মধ্যে না ফেলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আবাসিক হল খুলে দিন। না খোলা পর্যন্ত আমরা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাব।

ছাত্র অধিকার পরিষদের অবস্থান কর্মসূচি 

পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহবায়ক তারিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আপনারা জানেন অনার্স ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমপক্ষে ১২ হাজার। এত সংখ্যক শিক্ষার্থীকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলার অধিকার প্রশাসনের নেই। প্রশাসনের নিকট আমাদের দাবি আপনারা পরীক্ষা নিন সমস্যা নেই তবে আবাসিক হল খুলে দিতে হবে।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর আগে আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের দাবিতে মানববন্ধন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। 

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত কী 
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের পরীক্ষাগুলো স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ২৬ ডিসেম্বর থেকে অনুষ্ঠিত হবে৷ শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে প্রয়োজনে পরীক্ষাগুলো তুলনামূলক কম বিরতিতে বা একই দিনে দুটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে৷ তবে আবাসিক হলগুলো বন্ধই থাকবে৷ একইভাবে ল্যাবকেন্দ্রিক ব্যবহারিক পরীক্ষাগুলোও নেয়া হবে৷ বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের আবাসিক সুবিধা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ-ইনস্টিটিউট নিজ নিজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও উপস্থিতি নিশ্চিত করে বিভিন্ন পরীক্ষা নেবে৷ শিক্ষার্থীদের ইনকোর্স-মিডটার্ম ও টিউটরিয়াল পরীক্ষা অনলাইনে অ্যাসাইনমেন্ট, মৌখিক বা টেকহোম পদ্ধতিতে নেওয়া হবে৷ 

মানববন্ধনের আহ্বায়ক রাকিবুল হাসান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতান্তই অমূলক, অযৌক্তিক ও অমানবিক। আমরাও পরীক্ষার পক্ষে, তবে স্পষ্ট করে বলতে চাই হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা আমরা কোনোভাবেই মেনে নিব না। ঢাবি প্রশাসন যদি তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে, তাহলে আমরাও আমাদের আন্দোলনে অনড় থাকব। প্রয়োজনে আরও কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিব।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাসে সবাই অংশগ্রহণ করতে পারেনি সেটা কর্তৃপক্ষ জেনেও পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাও আবাসন ব্যবস্থাও নিশ্চিত না করে! শিক্ষার্থীদের দাবিকে প্রাধান্য না দিয়ে প্রশাসন এখনও তাদের সিদ্ধান্তে অনড়। সব কিছু আপনারা আমাদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছেন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কার জন্য?

২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী আতিক মোর্শেদ বলেন, শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা না করে পরীক্ষা নেওয়া সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। কিন্তু আমাদের ভিসি স্যার মহোদয় যে মন্তব্য করছেন সেটা কখনও যুক্তিযুক্ত হতে পারে না। হয় পরীক্ষা বন্ধ করা হউক, না হয় স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে হল খুলে দেওয়া হউক।

শিক্ষার্থীদের সাথে অন্যায় করা হচ্ছে উল্লেখ করা হচ্ছে উল্লেখ করে ২০১৭-১৮ সেশনের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা পড়তে আসে, শহরে তাদের আবাসনের কোনো ব্যবস্থা থাকে না। আবাসিক হলগুলো তাদের একমাত্র ভরসা। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলতে চাই, আজ আমরা কিছু শিক্ষার্থী এখানে দাঁড়িয়েছি, যদি আমাদের দাবি মেনে না নেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা আন্দোলনে নামব।

আগেও মানববন্ধন হয়েছে 
আজকের মতো একই দাবিতে গেল ১১ ডিসেম্বর মানববন্ধন করেন একদল শিক্ষার্থী। তাদের যুক্তি ছিল, অধিকাংশ শিক্ষার্থীই স্বল্প সময়ের মধ্যে ঢাকায় এসে নিজেদের আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারবেন না। অনেক শিক্ষার্থী আছেন যাদের দূর থেকে দূরতম কোনো আত্মীয় ঢাকায় থাকেন না এবং অনেকের কোথাও ভাড়া থাকার আর্থিক সামর্থ্য নেই। তাই শুধু পরীক্ষার্থীদের জন্য হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবি করেন তারা।

মানববন্ধনে হল খোলা এবং পরীক্ষার ঘোষিত রুটিন বাতিল করে পুনরায় তারিখ ঘোষণাসহ ছয়টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন ২০১৭-১৮ সেশনের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আবিদ হাসান খান।

প্রস্তাবনাগুলো হলো:
১. আবাসিক হলগুলাকে বসবাসের উপযোগী ও সঠিক ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করে খুলে দিতে হবে।

২. সব কোর্সের রিভিউ ক্লাস নিতে হবে যেন যারা অনলাইনে ক্লাস করতে পারেনি তাদের প্রতি অবিচার না হয়।

৩. একসাথে দুটো সেমিস্টার ফাইনাল নেয়া যাবে না। এক সেমিস্টার শেষ করে পরবর্তী সেমিস্টারের প্রস্তুতির জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় দিতে হবে।

8. অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য যাতায়াতের বিষয়ে নিশ্চিত করতে হবে।

৫. যেসকল বিভাগের পরীক্ষার রুটিন ঘোষণা করা হয়েছে তা বাতিল করে পুনরায় তারিখ ঘোষণা করতে হবে।

৬. স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্যাম্পাসের সকল কার্যক্রম অতিদ্রুত স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরিয়ে আনতে হবে।

কবে থেকে বন্ধ হল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কী অবস্থা  
করোনা পরিস্থিতির কারণে গত মার্চ থেকে বন্ধ আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়৷ গত জুন থেকে অনলাইনে ক্লাস চললেও কোনো পরীক্ষা হয়নি। অফিস-আদালত, দোকানপাটে মানুষের উপস্থিতি অনেকটা অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এলেও  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটি কয়েক দফায় বাড়িয়েছে সরকার। সর্বশেষ ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়েছে। করোনার কারণে এ বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা/মূল্যায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়। অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষাও বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া গত ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে বাতিল করে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

ওএফ/এনএফ