যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ভবনের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় খুবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের মানুষকে মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়েছেন এবং দেশ স্বাধীনের মাধ্যমে সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন। সেসময় বঙ্গবন্ধুকে নানা পরামর্শ দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তাদের চিন্তা-চেতনা বঙ্গবন্ধুর দর্শনে উঠে আসে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে আমাদের দেশপ্রেম ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আগামী প্রজন্মকে দেশপ্রেমিক ও দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের চেতনা আমাদের লালন করতে হবে। দেশকে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে এগিয়ে নিতে হবে। নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারলে দেশ এগিয়ে যাবে। আর দেশ এগিয়ে গেলে তাদের জীবন উৎসর্গের সার্থকতা লাভ করবে। তারা প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন।

তিনি আরও বলেন, বুদ্ধিজীবীরা নিজেদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে ভাবতেন না, তারা পাকিস্তানিদের হাত থেকে আপামর মানুষের মুক্তির দর্শন নিয়ে ভেবেছেন। তাদের এই দৃষ্টিভঙ্গি পাকিস্তানের প্রশাসনের রোষানলে পড়েন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের একটি পরিকল্পিত লক্ষ্য ছিল বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে দেশকে মেধাশূন্য করা।

উপাচার্য বলেন, ১৯৫২ সাল থেকেই আমাদের স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন শুরু হয়। যার চূড়ান্ত রূপ ছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম ও জনযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের সময় যে সকল বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিলেন শিক্ষক। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পর্যন্ত বেছে বেছে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিকদেরও হত্যা করা হয়। শিক্ষকদের হত্যার একটি বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল। মুক্তিযুদ্ধকালে দেশের আপামর জনসাধারণ ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে শিক্ষকরাই দেশপ্রেমের বীজ বপন করেছিলেন। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের মহান ব্রতকে যথাযথ ব্যবহার করেছিলেন, শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। যার কারণে তাদের হত্যা করা হয়। যা দেশ স্বাধীনের পরও অব্যাহত ছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. কামরুল হাসান তালুকদারের সভাপতিত্বে ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক বায়েজীদ খানের সঞ্চালনায় 
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান স্কুলের ডিন ও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস। মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড  ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের শিক্ষক প্রফেসর ড. রামেশ্বর দেবনাথ। এছাড়া আরও বক্তব্য দেন শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মো. মতিউল ইসলাম।

এর আগে দিবসটি উপলক্ষে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে অদম্য বাংলায় শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, ডিনবৃন্দ, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত), ডিসিপ্লিন প্রধান, ছাত্রবিষয়ক পরিচালক, প্রভোস্টবৃন্দ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। এরপরই বিভিন্ন ডিসিপ্লিন, বিভিন্ন আবাসিক হল, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, খুবি অফিসার্স কল্যাণ পরিষদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়।

দিবসের শুরুতে সকাল ৯টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ভবনের সম্মুখে কালো ব্যাজ ধারণ এবং সকাল ৯টা ১০ মিনিটে উপাচার্য কর্তৃক জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত ও উপ-উপাচার্য কর্তৃক কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে উপাচার্যের নেতৃত্বে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের প্রাক্কালে শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ প্রশাসন ভবনের সামনে থেকে একটি র‌্যালি শুরু হয়ে অদম্য বাংলা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দোয়া মাহফিল, বেলা ১২টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্দিরে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। দিবসের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিল- সন্ধ্যা ৫.৩০ মিনিটে শহীদ মিনার ও অদম্য বাংলায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন।

মোহাম্মদ মিলন/এমজেইউ