সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংবাদ শেয়ার দেওয়াকে কেন্দ্র করে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক আবুল কালামকে বহিষ্কার করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কোনো নিউজ শেয়ার দেওয়া যাবে না মর্মে তার কাছে মুচলেকা চাওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান প্রভাষক সাজ্জাদ আহমেদ শোভন এ হুমকি দেন। এ ঘটনায় নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে আবুল কালামকে হেনস্তার চেষ্টা করে একই বিভাগের আরেক প্রভাষক মো. মনজুর মোর্শেদ।

শুক্রবার (৭ এপ্রিল) বহিষ্কার হুমকি ও মুচলেকা চাওয়ার ঘটনায় শঙ্কার কথা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিক। 

এ বিষয়ে সাংবাদিক আবুল কালাম বলেন, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া ‘শিক্ষক নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষার্থীকে কাছে টানার চেষ্টা, গভীর রাতে ভিডিও কল’ শিরোনামে একটি নিউজ ডিআইইউসাসের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে শেয়ার করি। পরে একই দিন আনুমানিক দুপুরের পরে আমার কাছে কল আসে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার জন্যে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে বিভাগের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ আহমেদ শোভন আমাকে কয়েকঘণ্টা বসিয়ে রেখে নানান প্রশ্ন করেন। একপর্যায়ে এমন সংবাদ শেয়ারের জন্য আমার ছাত্রত্ব বাতিল ও বহিষ্কারের হুমকি দেন। পরে এমন নিউজ শেয়ার করব না মর্মে মুচলেকা চেয়ে বসেন। এই ঘটনায় আমি ভীত ও অনিরাপত্তা বোধ করছি।

এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক সমিতি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতারা বলেন, আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিনিয়ত সাংবাদিকদের হুমকি ও হেনেস্তার ঘটনা বেড়েই চলছে। এসব ঘটনার কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে না। ক্যাম্পাস লাইভ প্রতিবেদক আবুল কালামকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করার হুমকি এবং মুচলেকা চাওয়ার ঘটনা বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বাধা এবং স্বাধীন গণমাধ্যম ও মুক্ত সাংবাদিকতার পরিপন্থি। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তাদের এ ধরনের আচরণ অপেশাদারও বটে। 

নেতৃবৃন্দ বলেন, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে সাংবাদিকদের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করা এবং সাংবাদিককে হেনস্তা করায় সঠিক তদন্তের মাধ্যমে অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইনের আওতায় বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।   

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘটনাস্থলে থাকা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক শিক্ষক জানান, আমি পুরো বিষয়টি অবগত আছি। তিনি (শোভন) যা করেছেন সেটা করতে পারেন না। এ বিষয়টি নিয়ে তিনি আসলেই অতিরিক্ত বলে ফেলেছেন। তবে ট্রাস্টি বোর্ডের চাপ থাকায় এভাবে বলতে বাধ্য হন অনেক শিক্ষক।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক সাজ্জাদ আহমেদ শোভন বলেন, বিষয়টি আসলে ভুল বুঝাবুঝি থেকে হয়েছে। আমি তাকে এভাবে বলতে চাইনি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলামকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। 

এদিকে সাংবাদিককে হুমকি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিরাপত্তা তৈরির অপচেষ্টা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার উল্লেখ করে উদ্বেগ জানিয়েছে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (ইউজেএফ), কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটি, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটি, সোহরাওয়ার্দী কলেজ সাংবাদিক সমিতি, তেজগাঁও কলেজ সাংবাদিক সমিতি, ঢাকা আলিয়া সাংবাদিক সমিতিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন।

প্রসঙ্গত, গত ৫ এপ্রিল ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাংবাদিক সমিতির অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া একটি সংবাদ পোস্ট করা হয়। দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল ক্যাম্পাস লাইভ ডটকম এই সংবাদটিকে ‘শিক্ষক নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষার্থীকে কাছে টানার চেষ্টা, গভীর রাতে ভিডিও কল’ শিরোনামে প্রকাশ করে। এ সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করার জেরে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাংবাদিক সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য ও ক্যাম্পাস লাইভ ডটকমের ডিআইইউ প্রতিবেদক মো. আবুল কালামকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেয় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ও প্রভাষক এস এম সাজ্জাদ আহমেদ শোভন। একই সঙ্গে আগামীতে কোনো নিউজ শেয়ার দেওয়া যাবে না উল্লেখ করে মুচলেকা চাওয়া হয়। অপরদিকে নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে হেনেস্তার চেষ্টা করে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আরেক প্রভাষক মো. মনজুর মোর্শেদ। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা করলে পড়াশোনা করে ঠিকভাবে বের হতে দেবে না বলেও হুমকি দেন তারা।

এমএম/এমএ