শাবির হোস্টেলের পানিতে কেঁচো ও ময়লা, বিপাকে ছাত্রীরা
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের পানিতে মিলছে কেঁচো
কেঁচো আর ময়লা গন্ধযুক্ত পানি পান করছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের অধীন হোস্টেলের শিক্ষার্থীরা। আর এসব ময়লা পানি দিয়েই গোসল, রান্না ও নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এ সমস্যা দীর্ঘ দিনের হলেও সেদিকে যেন ভ্রূক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্ট হল কর্তৃপক্ষের।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হোস্টেলের পানিতে প্রতিদিনই মিলছে কেঁচোসহ নানা ধরনের পোকা। এছাড়াও গন্ধযুক্ত পানির সঙ্গে ময়লা যেন চিরায়িত ঘট্না। তবে এসব সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না হল কর্তৃপক্ষ। গত বেশ কিছুদিন যাবৎ এসব ছাত্রী হোস্টেলের সব ব্লকের বাথরুম ও খাবার পানির ট্যাপ দিয়ে কেঁচো, পোকা আর ময়লাও উঠে আসছে। এছাড়া পানির স্বাভাবিক রং পরিবর্তিত হয়ে ধারণ করেছে লাল রং।
বিজ্ঞাপন
হলের শিক্ষার্থীরা এসব পানি ব্যবহার করছে নিজেদের খাওয়া, রান্না, গোসলসহ প্রতিদিনের কাজে। হলগুলো থেকে সংগৃহীত পানিতে ময়লার পাশাপাশি দেখা যায় কেঁচো সদৃশ একাধিক পোকা নাড়াচাড়া করছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন পানির এমন সমস্যার কারণে বাইরে থেকে পানি কিনতে হচ্ছে তাদের। এতে করে যেমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে, তেমনি অতিরিক্ত টাকাও গুনতে হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী হলের অধীন আমির কমপ্লেক্সে অবস্থানরত ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রী বলেন, এই পানি ব্যবহার করার ফলে আমরা বিভিন্ন চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছি। এছাড়া পেটের পীড়ায়ও ভুগতে হচ্ছে প্রায়ই। এ বিষয়ে আমরা হল সুপারভাইজারকে একাধিকবার জানালেও তারা এসব বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেন নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের অধীন সামাদ হাউজে অবস্থানরত ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমাদের বাধ্য হয়েই এ পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে। তবে অধিকাংশ সময় আমরা বাইরে থেকে পানি কিনে পান করছি। প্রতিদিন এভাবে পানি কিনে কতদিন আর চলা যায়।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক প্রথম ছাত্রী হল ও বেগম সিরাজুন্নেসা ছাত্রী হলের অধীনে হোস্টেল রয়েছে মোট ৫টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক সংলগ্ন ফজল কমপ্লেক্স, আমির কমপ্লেক্স-১ ও ২, মদিনা মার্কেটস্থ সামাদ হাউজ ১ ও ২ এ বাস করছেন মূল হলে সিট না পাওয়া প্রায় ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী। সেখানে প্রতিমাসে নির্দিষ্ট ভাড়া পরিশোধ করেও মিলছে না পর্যাপ্ত সেবা। হল কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর দেখাশোনার অভাবে নানা সমস্যা মেনে নিয়েই থাকতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ফলে দূষিত এসব পানি পান করে কাটাতে হচ্ছে তাদের।
এমন পানি ব্যবহার ও পান করলে শিক্ষার্থীদের কি ধরনের সমস্যা হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. মাশরাবা সুলতানা বলেন, এ ধরনের পানি ফুটিয়ে পান না করলে পানিবাহিত রোগ যেমন- টাইফয়েড, ম্যালেরিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হতে পারেন শিক্ষার্থীরা। তাছাড়া এ ধরনের পানি নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলকানিসহ নানা চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের মেডিকেলে প্রায়ই অনেক শিক্ষার্থী আসেন এ ধরনের সমস্যা নিয়ে। আমাদের পরামর্শ থাকবে যে কোনো পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা অবলম্বন করতে, পানি পান করার আগে ফুটিয়ে পান করতে।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রীহলের প্রভোস্ট জোবেদা কনক খানকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
প্রথম ছাত্রী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জায়েদা শারমিন বলেন, এ বিষয়টি আমি এখন প্রথম শুনছি। শিক্ষার্থীরা আমার কাছে এ নিয়ে কিছু বলে নি। তবে আমি দেখছি বিষয়টি। দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এএএ