সংস্কৃতির একটি অপরিহার্য উপাদান সংগীত। পৃথিবীর প্রত্যেকটা জাতির নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে, আর এসব সংস্কৃতিতে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের সঙ্গীত রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে লোকসংগীত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সবার মাঝে। বর্তমানে ক্যাম্পাসগুলোতেও জনপ্রিয় গানের তালিকায় স্থান পেয়ে আছে লোকসংগীত। সেই লোকসংগীতকে টিকিয়ে রাখতে কাজ করে যাচ্ছে বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীরা। কেউবা দলবদ্ধভাবে নিয়মিত করে যাচ্ছে গান। আবার কেউবা তৈরি করেছেন নিজস্ব কোনো ব্যান্ড। তেমনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী রিপন তৈরি করেছেন তার নিজস্ব ব্যান্ড ‌‘সপ্তক’।

২০১২ সাল থেকে গানের সঙ্গে পথ চলা শুরু হয় তার। তখন থেকেই তার এলাকা (বাগমারা, রাজশাহীতে) বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান করতেন। ২০১৪ সালে রাজশাহীতে আসেন মূলত ভালোভাবে গান শেখা, গান করা এবং উচ্চতর পড়াশোনার জন্যে। শহরে সংগীতশিল্পী হিসেবে তার পরিচিতি শুরু হয় জেলা শিল্পকলা একাডেমির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার মাধ্যমে। এরপর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যান্ডের কণ্ঠশিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। এক পর্যায়ে মনে হলো তারও একটা নিজস্ব ব্যান্ড থাকা উচিত। কিন্তু একা তো কোনো ব্যান্ড গড়ে তোলা যায় না। খুঁজতে থাকেন তার মনের মতো দক্ষ মিউজিশিয়ানদের। এরপর একে একে বিভিন্ন প্রফেশনাল কাজ করা মিউজিশিয়ানদের সমন্বয়ে ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘সপ্তক’। 

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রোগ্রামে গান করেন তারা। সম সাময়িক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের হীরক জয়ন্তীতে গানের তালে মাতিয়েছেন দর্শকদের। এছাড়াও বিভিন্ন বিভাগের অ্যালামনাই, নবীন বরন-প্রবীণ বিদায়, হল সমাপনীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশনা করে ‘সপ্তক’। শুধু ক্যাম্পাসেই নয় তাদের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে পুরো রাজশাহীতে এবং দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা উপজেলাতে। তার ফলশ্রুতিতে তারা রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন কর্পোরেট প্রোগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় সংগীত পরিবেশনা করে থাকেন।

বর্তমানে ‘সপ্তক’ এর সদস্য হিসেবে আছেন ৬ জন। তাদের মধ্যে তিনজনই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী। বাকিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের। এর মধ্যে প্রধান কণ্ঠশিল্পী, গিটার ব্যাঞ্জ ও ম্যান্ডোলিন বাদক হিসেবে আছেন প্রতিষ্ঠাতা রিপন প্রামানিক , কিবোর্ড বাদক ও কণ্ঠশিল্পী হিসেবে আছেন রওশান রোমিও, ড্রামস ও অক্টোপ্যাড প্লে করেন জনি ইসলাম, বেজগিটার প্লে করেন মহিদুলন ইসলাম, পারকিউশন করেন সিজার ও বাঁশিবাদক হিসেবে আছেন রিপন আলী। রিপন প্রামানিক ও রিপন সোনাই একইসঙ্গে লোকসংগীতে মাস্টার্স করছেন এবং তারা খুব ভালো বন্ধু।

‘সপ্তক’ নিয়ে কথা হয় প্রতিষ্ঠাতা রিপনের সঙ্গে। জানালেন কীভাবে প্রতিষ্ঠা করলেন ‘সপ্তক’। তিনি বলেন, সপ্তকের শুরু ১৮ সালে। ২০১৪-১৮ আমি প্রফেশনালি বিভিন্ন ব্যান্ডের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় পারফরম্যান্স করতাম। তারপর একটা সময় মনে হলো নিজেরই একটা ব্যান্ড থাকা উচিত যার মাধ্যমে লোকসংগীতসহ নিজের পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের গান নতুন আঙ্গিকে নিজেদের মতো করে কম্পোজিশন করে গাইতে পারবো। সেই জায়গা থেকে সপ্তকের পথ চলাটা শুরু।

কোনধরনের গান বেশি করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করি মূলত লোকসংগীতসহ সব ধরনের গানই করার। লোকসংগীত, ব্যান্ড ও আধুনিক গান বেশি করি আমরা। এছাড়াও রবীন্দ্রসংগীত, নজরুল সংগীত, হিন্দি ও ইংলিশ গানও করে থাকি। আর যেহেতু আমি সংগীত নিয়ে পড়াশোনা করি, শুধু আমি না আমার ব্যান্ডের তিনজন মেম্বার মিউজিকের শিক্ষার্থী। সেজন্যেই হয়তোবা আমরা সব ধরনের ভালো গানগুলো করার চেষ্টা করি। ক্লাসিক্যাল, সেমি ক্লাসিক্যাল মিউজিকও আমরা নিজেরা খুব পছন্দ করি এবং চর্চা করি। 

সপ্তক নিয়ে ভবিষ্যতে কি চিন্তা ভাবনা আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যেহেতু লোকসংগীতসহ সব ধরনেরই গান করি। সারা দেশে আমরা আমাদের সব ধরনের গান শোনাতে চাই। আর লোকসংগীত আমাদের দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি। আমরা সপ্তক লোকসংগীত নিয়ে সারা পৃথিবী ভ্রমণ করতে করতে চাই। আমরা সারা বিশ্বকে জানাতে চাই আমাদের দেশের সুর কতটা সমৃদ্ধ। যদিও অলরেডি সারা বিশ্বই আমাদের দেশের লোকসংগীত সম্পর্কে জানেন। 

জুবায়ের জিসান/এএএ