ঢাবিতে শীত ও গ্রীষ্মের ছুটি বাতিল, ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা
শীত ও গ্রীষ্মকালীন ৯ দিনের ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীবান্ধব নয় বলে দাবি তাদের। আবার ছুটি বাতিলের বিষয়টি ‘রাজনৈতিক বিবেচনায় সিদ্ধান্ত’ বলেও মনে করছেন অনেকে।
রোববার (১২ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের পরিচালক মাহমুদ আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ছুটি বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হয়। এ বিজ্ঞপ্তি জারির পরই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কোনো কারণ ছাড়া ছুটি বাতিল অযৌক্তিক বলছেন অধিকাংশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এর বহিঃপ্রকাশ দেখা যাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
কেউ কেউ দাবি করছেন, বছরজুড়ে পড়াশোনার চাপের মধ্যে ছুটি বাতিলের এ নোটিশ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জুলুম। এর ফলে শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক চাপ বাড়বে এবং পড়াশোনা বিমুখের সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩ সালের পূর্বনির্ধারিত শীতকালীন ছুটি থেকে ১০-১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪দিন এবং ২০২৪ সালের পূর্বনির্ধারিত গ্রীষ্মকালীন ছুটি থেকে ২৬-৩০ মে পর্যন্ত ৫দিন ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেমিস্টার পদ্ধতিতে পাঠ্যক্রম চলমান থাকায় ৬ মাসে পরীক্ষাসহ পাঠদান শেষ করেন শিক্ষকরা। তবে করোনাকালীন গ্যাপ দূর করতে ৬ মাসের সেমিস্টার ৪ মাসে শেষ করছে প্রশাসন। এতে শিক্ষার্থীদের সেশনজট কমলেও মানসিক চাপ বেড়েছে। স্বল্প সময়ে অধিক সিলেবাস শেষ করায় নিয়মিত ক্লাস, পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট ও প্রেজেন্টেশন নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের। ফলে সরকারি ছুটি ব্যতীত খুব একটা বিরতি পায়নি শিক্ষার্থীরা।
নতুন করে শীত ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিলের ফলে মানসিক চাপ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।
হাসান তারিক নামের এক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছয় মাসের সেমিস্টার চলছে সাড়ে চার মাসে। ৪টা কোর্সে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশনের মধ্যেই পার করতে হয়। আমরা বিশেষ কিছু সময়ের ছুটির জন্য সবাই অপেক্ষা করি। তার মধ্যে শীতের ছুটি অন্যতম। ডিসেম্বরে বাড়ি যাওয়া আমাদের জন্য সাধারণ বিষয়। কিন্তু ছুটি বাতিল করায় এখন অনেকেই বাড়িতে যেতে পারবে না। এটা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অন্যায় ও জুলুম।
সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে তামান্না আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী লেখেন, এটি নিতান্তই একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। পুরো একটি বছরের ক্যালেন্ডার ক্লাস-পরীক্ষার মধ্যে রাখা কখনো শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত হতে পারে না। একজন শিক্ষার্থীর পড়াশোনা যতটা দরকার তেমনই প্রোডাক্টিভ হতে পর্যাপ্ত বিনোদন ও অবসরেরও প্রয়োজন রয়েছে। মোট কথা আমরা শীতকালীন ছুটি চাই।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আসলে ছুটি বাতিল করা হয়নি। ডিসেম্বরের ১০ তারিখ থেকে ছুটি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেটা ১৪ তারিখ থেকে শুরু হবে এবং পরবর্তীতে বৃদ্ধি করা হবে।
ছুটি বাতিলের পেছনে রাজনৈতিক কোনও কারণ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না এমন কোনও কারণ নেই। যে ছুটিগুলো কর্তন করা হয়েছে, সেটা পরবর্তীতে যোগ করে দেওয়া হবে।
কেএইচ/এমজে