ভোট চাইতে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছাত্রলীগ
আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে নৌকাকে পুনরায় বিজয়ী করতে এবং টানা চতুর্থ বারের মত শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করতে আটঘাট বেঁধে নেমেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের নেতৃত্বে দেশের ৬৪ জেলায় চষে বেড়াচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
সংগঠন সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদসহ বিভিন্ন ইউনিটের প্রায় আট লক্ষাধিক নেতাকর্মী সরাসরি নৌকার প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। দেশের ৬৪ হাজার ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের আকৃষ্ট চালিয়েছেন প্রচারণা কার্যক্রম। করা হয়েছে বিভাগীয় ও জেলাগুলোর সমন্বয়ক টিমও। সমন্বয়ক টিমের সদস্যরা নিজ নিজ এলাকায় ভোটারদের মাঝে লিফলেট বিতরণ, নৌকার পক্ষে মিছিল-সমাবেশ ও ক্যাম্পেইন করেছেন।
বিজ্ঞাপন
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান নিজেও প্রচারণা কার্যক্রম শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিদিন কোনো না কোনো সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা চলমান রাখতে ভোটারদের দ্বারে-দ্বারে পৌঁছে দিয়েছেন শেখ হাসিনার সালাম।
বিজ্ঞাপন
এদিকে নির্বাচনকালীন কিছু কৌশলগত কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি দিতে বিলম্ব হচ্ছে এবং নির্বাচনে নেতাকর্মীদের ‘পারফরম্যান্সের পুরস্কারস্বরূপ’ নির্বাচনের ঠিক পরপরই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে নেতাকর্মীদের পদায়ন করা হবে বলে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত। ফলশ্রুতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য পদে নিজের আসন সুপ্রতিষ্ঠিত করতে প্রচেষ্টার কোন কমতি রাখতে চান না পদপ্রত্যাশী নেতারাও।
গত ২৮ ডিসেম্বর শেখ হাসিনাকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে 'নৌকার জন্য ৩০ মিনিট' ক্যাম্পেইন চালু করে ছাত্রলীগ। এ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য প্রচারণা চালাতে বলা হয়।
এ ক্যাম্পেইনের আওতায় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করা হয়। যেমন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মসূচি প্রচার, 'স্মার্ট বাংলাদেশ' কর্মসূচি সম্পর্কে তুলে ধরা, করোনা ও বৈশ্বিক যুদ্ধ মোকাবিলা করে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার প্রেক্ষাপট আলোকপাত করা, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাবিরোধী গোষ্ঠী ও তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানানো, ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট, বিভিন্ন গ্রুপ, পেইজ প্রভৃতিতে উল্লিখিত বিষয়গুলো তুলে ধরা এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিজের বক্তব্য লেখা, ভিডিওগ্রাফি, অ্যানিমেশন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, অনলাইন পেইন্টিং ইত্যাদি মাধ্যমে প্রকাশ করাসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালানো।
এরই প্রেক্ষাপটে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় প্রচার প্রচারণার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা গেছে। নিজ নিজ প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সরাসরি প্রচারণার পাশাপাশি তারা বেছে নিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে। ফলে প্রচারণার কথা ছড়িয়ে যাচ্ছে গ্রাম থেকে শহরে।
আরও পড়ুন
নড়াইল-২ আসনে নৌকার পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেওয়া শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রাব্বি বলেন, আসন্ন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে পুনরায় বিজয়ী করতে কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম ভাইয়ের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ সংসদীয় আসনে কাজ করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় আমিসহ ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা নড়াইল-২ আসলে মাশরাফি বিন মুর্তজা ভাইয়ের আসনে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা নিয়মিত প্রচার-প্রচারণা, মাইকিং, পোস্টারিং, লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করছি। সাধারণ মানুষকে ভোটের প্রতি আগ্রহী করে তোলা ও ভোটকেন্দ্রে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মাশরাফি ভাই জনগণের কাছে অনেক জনপ্রিয়তা পাওয়ায় আমরা মানুষের কাছে বেশ আস্থার প্রতীক হয়েছি। ইনশাআল্লাহ আগামী পরশুদিন নৌকার বিজয়ের মাধ্যমে এই পদযাত্রার সমাপ্ত হবে।
জামালপুর-৫ আসনে কাজ করে যাওয়া জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের নাট্য ও বিতর্ক উপ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ নাঈম বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ আসনভিত্তিক সমন্বয়ক টিম গঠন করেছে, যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রনেতারা তৃণমূল পর্যায়ে নির্বাচনী প্রচারণার কাজে অংশ নিচ্ছে। আমি জামালপুর-৫ আসনের প্রার্থী প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদকে নৌকার প্রার্থী হিসেবে জয়যুক্ত করতে লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করেছি।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, নির্বাচন কেন্দ্র করে আমরা ইতোমধ্যেই সাংগঠনিকভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি এবং সে অনুযায়ী ক্যাম্পেইন চালাচ্ছি। দেশের ৪৩ হাজার ভোটকেন্দ্রে আমাদের আট লাখের অধিক নেতাকর্মী ভোটকেন্দ্রভিত্তিক দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে এবং তারা নিয়মিত প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের কাজ হচ্ছে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসা, ভোট উৎসবে পরিণত করা। এর বাইরে আমাদের বিভাগীয়, জেলা এবং সংসদীয় আসনভিত্তিক সমন্বয়ক টিম রয়েছে। অনলাইন আমরা নৌকার জন্য ৩০ মিনিট ক্যাম্পেইন এবং স্মার্ট ক্যাম্পেইনার অ্যাওয়ার্ড প্রদানের ঘোষণা দিয়েছি। এর বাইরে আমাদের বিভাগীয় ছাত্র সমাবেশ হচ্ছে, আমরা উঠান বৈঠকগুলোতে অংশগ্রহণ করছি।
তিনি বলেন, আমরা তরুণ প্রজন্মের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি। আমরা মনে করি ২০২৪ সাল রাজনৈতিক ইতিহাসের সন্ধিক্ষণ। কারণ এ নির্বাচনটি আমাদের আত্মমর্যাদার প্রশ্ন, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার প্রশ্ন, এবারের নির্বাচন প্রজন্মের স্বপ্ন, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন। আমরা চাই আগামী ৭ জানুয়ারি গণতন্ত্র এবং নৌকার যুগপৎ বিজয় বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ নিশ্চিত করবে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, সারা দেশে প্রায় ৪৩ হাজার ভোটকেন্দ্রে আমাদের কয়েক লাখ নেতাকর্মী তৃণমূল পর্যায়ে দিনরাত পরিশ্রম করে কাজ করছে। আমরা আসনভিত্তিক সমন্বয়ক টিম করেছিলাম যারা গ্রামে গ্রামে মানুষের কাছে ভোট চেয়েছেন নৌকার পক্ষে জনমত সৃষ্টি করেছেন। আমরা জেলা সমন্বয়ক টিম করেছিলাম যারা উপজেলাগুলোর সার্বিক অবস্থা তত্ত্বাবধান করেছেন। তাছাড়া বিভাগীয় সমন্বয়ক টিমের নেতাকর্মীরা ওই বিভাগের সব জেলা ও উপজেলার সার্বিক দিক তত্ত্বাবধান করে কাজ করেছেন। আমরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তৃণমূলের সব পর্যায়ে নেতাকর্মীদের কাজের তদারকি করেছি ও পরামর্শ দিয়েছি এবং প্রয়োজনে আমরা নিজেরাও বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে প্রচারণায় অংশ নিয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল আমরা যেন এই নির্বাচনে ভোটের জোয়ার সৃষ্টি করতে পারি এবং মানুষের ভোটকেন্দ্রে আসার প্রবণতা বহুগুণে বৃদ্ধি করে ভোটের রেকর্ড সৃষ্টি করতে পারি। আমরা বিশ্বাস করি আগামী ৭ তারিখের নির্বাচনে বিপুল পরিমাণ ভোটারের উপস্থিতিতে একটি সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ বারের মতো এবং মোট ৫ম বারের মতো নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়ে দেশের মানুষের উন্নয়নের ম্যান্ডেট হয়ে প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন।
কেএইচ/পিএইচ