শিবিরের প্রকাশনায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননায় ছাত্রদলের নিন্দা
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিবের দলীয় প্রকাশনা ‘ছাত্র সংবাদে’ স্বাধীনতা বিরোধী এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য প্রকাশের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। অবিলম্বে এ ঘটনায় নিজেদের দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ছাত্রদল।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির এ নিন্দা জানান।
বিজ্ঞাপন
বিবৃতিতে ছাত্রদলের শীর্ষ দুই নেতা বলেন, স্বাধীনতার দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর পরে এসেও নিজেদের দলীয় প্রকাশনায় মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করাকে ভুল ও অদূরদর্শিত হিসেবে প্রচার করা এবং পাপ কাজ মনে করে ক্ষমা প্রার্থনা করা একটি গর্হিত এবং ন্যাক্কারজনক ঘটনা। প্রকৃতপক্ষে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ কোনো ধর্মযুদ্ধ ছিল না। এটি ছিল অত্যাচারী, জালিম, দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্বিচারে গণহত্যার বিরুদ্ধে মজলুম বাংলাদেশিদের প্রতিরোধের যুদ্ধ। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে আপামর জনসাধারণের অংশগ্রহণের কারণে মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি সত্যিকারের জনযুদ্ধ।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
এমন প্রচারণা আওয়ামী লীগের বুদ্ধিবৃত্তিক পুনর্বাসনের প্রেক্ষাপট তৈরি করবে উল্লেখ করে নেতারা বলেন, দীর্ঘ চব্বিশ বছরের সীমাহীন অত্যাচার, অবিচার আর অপশাসনের চূড়ান্ত পর্যায়ে পাকিস্তানি প্রশিক্ষিত সামরিক বাহিনী অত্যন্ত নির্মমভাবে রাতের আঁধারে এ দেশের ঘুমন্ত নিরীহ জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে নিরস্ত্র জনতা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এভাবেই শুরু হয়েছে আমাদের অস্তিত্বের সংগ্রাম, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ। কেউ ভুল করে কিংবা না বুঝে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে এ বক্তব্য একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসরদের ধৃষ্টতা ও নিজেদের পরাজয়ের গ্লানি চাপা দেওয়ার অপকৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। ছাত্রশিবিরের এরূপ কাণ্ডজ্ঞানহীন প্রচারণার কারণে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বুদ্ধিবৃত্তিক পুনর্বাসনের প্রেক্ষাপট তৈরি করবে।
শিবির তাদের পূর্বসূরী ছাত্রসংঘের মনোভাব ধারণ করে উল্লেখ করে তারা বলেন, ছাত্রশিবির একদিকে স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে ‘স্বাধীনতা এনেছি, স্বাধীনতা রাখবো’ স্লোগান দিয়ে র্যালি করে, আবার অন্যদিকে নিজেদের দলীয় প্রকাশনায় মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়াকে ভুল ও অদূরদর্শিতা হিসেবে প্রচার করবে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে, এটি সুস্পষ্ট দ্বিচারিতা। এই দ্বিচারিতার ফলে প্রমাণিত হয় প্রকাশ্যে তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করার কৌশল গ্রহণ করলেও ভেতরে ছাত্রশিবিরের পূর্বসূরী ছাত্রসংঘের মতো মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের মনোভাবই তারা ধারণ করে।
এমন কাজের জন্য ছাত্রশিবিরকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে উল্লেখ করে তারা বলেন, লেখকের ব্যক্তিগত অভিমত বলে ছাত্রশিবির তাদের দলীয় প্রকাশনার মাধ্যমে স্বাধীনতা বিরোধী ন্যারেটিভ প্রচারের দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে, ছাত্রশিবিরের প্রকাশনার সম্পাদকীয় পলিসি স্বাধীনতাবিরোধী ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করার পক্ষে। আমরা ছাত্রশিবিরকে আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যাতে মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে তাদের দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করে। একইসাথে ছাত্রশিবিরকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী বয়ান প্রচার এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করার দায়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
শিবির ক্ষমা না চাইলে বাংলাদেশে রাজনীতি করার নৈতিক অধিকার হারাবে উল্লেখ করে নেতারা বলেন, ছাত্রশিবির যদি এ ন্যাক্কারজনক মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বয়ানকে নিজেদের দলীয় প্রকাশনা থেকে প্রত্যাহার পূর্বক জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করে তাহলে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতি ছাত্রশিবিরের আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার নৈতিক অধিকার হারিয়ে ফেলবে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের দলীয় প্রকাশনা “ছাত্র সংবাদ” নামক মাসিক পত্রিকার ডিসেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত আহমেদ আফঘানি কর্তৃক রচিত “যুগে যুগে স্বৈরাচার ও তাদের করুণ পরিণতি” নামক প্রবন্ধে বলা হয়েছে— ‘অনেক মুসলিম না বুঝে মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল, এটা তাদের ব্যর্থতা ও অদূরদর্শিতা ছিল। আল্লাহ তায়ালা তাদের ক্ষমা করুন।’
কেএইচ/এআইএস