এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল অভ্যন্তরে হল প্রশাসনের পূজাসহ ৭৪টি বিভাগ/ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনায় সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। 

আগামীকাল রোববার পূজার প্রতিমা স্থাপন করা হবে। সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সরস্বতী পূজা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। 

শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাতে জগন্নাথ হল প্রশাসন ও শ্রী শ্রী সরস্বতী পূজা উদ্‌যাপন কমিটির পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানানো হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ ও পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক দেবাশীষ পাল। এসময় পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের আহ্বায়ক মিঠুন কুমার সাহা এবং জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হল প্রশাসনের পূজা হলের উপাসনালয়ে এবং বিভাগ/ ইনস্টিটিউটগুলোর পূজা হলের মাঠে স্থাপিত নিজস্ব মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মণ্ডপের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে প্রত্যেক বিভাগ/ইনস্টিটিউটের পূজা কমিটির উপস্থিতিতে লটারির মাধ্যমে। পূজার সার্বিক কার্যক্রম তত্ত্বাবধানে হল প্রশাসনের মোট ১১টি উপ-কমিটি কাজ করছে।

অধ্যাপক দেবাশীষ পাল বলেন, গত জুলাই বিপ্লবের মধ্যদিয়ে আমরা বৈষম্যহীন ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার এক মহান প্রত্যয় গ্রহণ করেছি। এবারের সরস্বতী পূজা তাই এক ভিন্ন আঙ্গিকে আয়োজিত হতে চলেছে। ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ হলের উপাসনালয়ে দুদিনব্যাপী এ আয়োজনের মধ্যে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, রক্তদান কর্মসূচি, ইত্যাদি রয়েছে। এছাড়াও হলের অভ্যন্তরে দর্শনার্থী শিশু-কিশোরদের চিত্তবিনোদন উপযোগী বেশ কিছু রাইড, খেলনা ও বিশুদ্ধ খাবার দোকানের ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। আগত পুণ্যার্থীদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতার জন্য বেশ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী নিয়োজিত থাকবে।

জগন্নাথ হল ও পূজা মণ্ডপ এলাকার নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি জানান, সমগ্র জগন্নাথ হল সিসি ক্যামেরার আওতাধীন থাকবে; প্রবেশমুখে মেটাল ডিটেক্টরসহ অন্যান্য প্রযুক্তির ব্যবহার থাকবে; ছোট শিশুদের দুগ্ধপানের জন্য বিশেষ নিরাপদ একটি কর্নার স্থাপন করা হয়েছে; কোনো ধরনের পটকা বা আতশবাজির ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ স্টিকার সরবরাহ করা হয়েছে।

জগন্নাথ হল সব ধর্ম, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও সংবেদনশীল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সর্বদাই সব ধর্মের প্রতি সমান ও বৈষম্যহীন আচরণের মাধ্যমে এক সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন টেকসই সমাজ বিনির্মাণে সদা যত্নশীল। 

পূজা উপলক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দেশনাবলি : 

১. শ্রীশ্রী সরস্বতী পূজার ভাবগাম্ভীর্য ও পবিত্রতা সর্বদা বজায় রাখতে হবে।

২. জগন্নাথ হলের আবাসিক/অনাবাসিক সব শিক্ষার্থীকে সার্বক্ষণিক পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে।

৩. জগন্নাথ হল প্রশাসনের অনুমতি ব্যতীত মোটরসাইকেল নিয়ে হলে প্রবেশ করা যাবে না।

৪. বিশেষ প্রয়োজন ব্যতিরেকে উপাসনালয়ের মূল বেদিতে ওঠা যাবে না।

৫. উপাসনালয়ে/হল প্রাঙ্গণে সব ধর্ম-বর্ণের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ করতে হবে এবং কোনো ধর্মের প্রতি বিরূপ মন্তব্য করা যাবে না।

৬. উপাসনালয়ে/হল প্রাঙ্গণে দেশ ও রাষ্ট্রবিরোধী কোনো বক্তব্য/মন্তব্য করা যাবে না।

৭. হল প্রশাসনের অনুমতি ব্যতীত ভবনে/রুমে কোনো অতিথি নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না।

৮. হলের মধ্যে পার্টি স্প্রে, গ্যাস বেলুন, আতশবাজি, ফানুস, ইত্যাদি বহন ও ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

৯. হল প্রাঙ্গণে নির্ধারিত স্থান/লালরঙের বিন ব্যতীত কোথাও ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবে না।

১০. পূজা প্রাঙ্গণে সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তি বা কর্মকাণ্ড নজরে এলে তৎক্ষণাৎ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।

আগত অতিথিদের জন্য নির্দেশনাবলি 

১. শ্রীশ্রী সরস্বতী পূজার ভাবগাম্ভীর্য ও পবিত্রতা সর্বদা বজায় রাখতে হবে।

২. বিশেষ প্রয়োজন ব্যতিরেকে উপাসনালয়ের মূল বেদিতে ওঠা যাবে না।

৩. মন্দির/হল প্রাঙ্গণে সব ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি-পেশার দর্শনার্থীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ করতে হবে।

৪. উপাসনালয় বা হল প্রাঙ্গণে রাষ্ট্র বা ধর্মবিরোধী কোনো বক্তব্য/মন্তব্য করা যাবে না।

৫. হল প্রশাসনের যথাযথ অনুমতি ব্যতীত কোনো অতিথি শিক্ষার্থীদের ভবনে/রুমে প্রবেশ করতে পারবে না।

৬. হল প্রাঙ্গণে কোনো প্রকার যানবাহন নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। হাইকোর্ট ও বকশীবাজার দিয়ে আগত অতিথিবৃন্দের যানবাহন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে (দোয়েল চত্বর সংলগ্ন) পার্কিং করবেন। নীলক্ষেত, শাহবাগ ও পলাশী দিয়ে আগত অতিথিবৃন্দের যানবাহন হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের (নীলক্ষেত সংলগ্ন) মাঠে পার্কিং করবেন।

৭. নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ও তল্লাশির প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্মীকে সহযোগিতা করতে হবে।

৮. আগত দর্শনার্থীগণ শুধু হলের দক্ষিণ দিকের গেট (বুয়েট সংলগ্ন) বা উত্তর দিকের গেট (টিএসসি সংলগ্ন) দিয়ে প্রবেশ ও প্রস্থান করবেন।

৯. দক্ষিণ দিকের গেট সংলগ্ন অতিথি কক্ষে স্থাপিত ব্রেস্ট ফিডিং কর্নারে মায়েরা প্রয়োজনে দুগ্ধপান করাতে পারবেন।

১০. হলের মধ্যে পার্টি স্প্রে, গ্যাস বেলুন, আতশবাজি, ফানুস ইত্যাদি বহন ও ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

১১. হল প্রাঙ্গণে নির্ধারিত স্থান/লালরঙের বিন ব্যতীত কোথাও ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবে না।

১২. প্রণামী/অনুদান উপাসনালয়ের নির্দিষ্ট প্রণামি বাক্স বা তথ্যকেন্দ্রে প্রদান করতে পারবেন।

১৩. হলের অভ্যন্তরে কোনো প্রকার ধূমপান, অ্যালকোহল জাতীয় পণ্য বা অন্যকোনো নেশা জাতীয় দ্রব্য বহন বা সেবন করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

১৪. পূজা প্রাঙ্গণ পরিদর্শন শেষে হলের অভ্যন্তরে অবস্থান না করে দ্রুততম সময়ে হল ত্যাগ করতে হবে। রাত ১০.০০ টার মধ্যে আগত অতিথিবৃন্দকে অবশ্যই জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণ ত্যাগ করতে হবে।

১৫. পূজা প্রাঙ্গণে সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তি বা কর্মকাণ্ড নজরে এলে তৎক্ষণাৎ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।

কেএইচ/এমএন