জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর গণহত্যা, নির্যাতন, নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। ফিলিস্তিনে গণহত্যা চলছে; ভারতে, কাশ্মীরে, রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। এসব নির্যাতন বিশ্বের মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বার্তা দেয়। 

সোমবার (৭ এপ্রিল) বিকেল ৫টায় রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত ‘ফিলিস্তিনে ইসরাইলের গণহত্যা ও ভারতের ওয়াকফ বিল সংশোধনের’ দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

আখতার হোসেন বলেন, পৃথিবীর সব প্রান্তের মুসলিমদের উপর নির্যাতন তাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বার্তা দেয়। আমরা মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই। কিছুদিন আগে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, আমরা জানি স্বাধীনতার মূল্য কত। আমরা প্রত্যাশা করি ফিলিস্তিনের মানুষ খুব শিগগিরই স্বাধীনতার স্বাদ পাবে। জাতিসংঘের কাছে আহ্বান জানাবো অবিলম্বে এই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। যুদ্ধবিরতি চলাকালীন হামলাকারী নেতানিয়াহুসহ যারা যুদ্ধপরাধ করেছে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বিশ্বের যেখানেই ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের মুক্তি দেওয়া এবং অতিদ্রুত ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানাই।

তিনি বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় যুদ্ধপরাধী অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে ফিলিস্তিনের গাজায়। মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এখন পর্যন্ত ঔপনিবেশিক শাসন করার চেষ্টা করে ফিলিস্তিনকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করছে। সাধারণ মানুষকে হামলা করে গণহত্যা চালাচ্ছে। নিরীহ মানুষ, স্কুল-কলেজ-হাসপাতালে হামলা করে যাচ্ছে। সাংবাদিক, চিকিৎসকদের হত্যা করা হচ্ছে। পৃথিবীর এমন কোনো যুদ্ধ হয়নি যেখানে এত সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছে বিশ্বের প্রতিটি দেশের সাধারণ মানুষ। কিন্তু বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রনায়করা এখনো নিশ্চুপ। বিশ্বের কিছু পরাশক্তি এখনো ইসরায়েলের পক্ষে সাফাই গেয়ে যাচ্ছে।

ইসরায়েলের সঙ্গে গোপন-প্রকাশ্য সব চুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়ে এনসিপি সদস্য সচিব বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বলতে চাই, যতদিন বা ফিলিস্তিন স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া না হয়, ফিলিস্তিনের মানুষ মুক্তি না পায় আমাদের স্বাধীনতার শপথ ততদিন ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো বন্ধুত্ব হতে পারে না। আওয়ামী লীগ সরকার এ পর্যন্ত ইসরায়েলের কাছ থেকে যেসব যন্ত্রপাতি কিনেছে আমরা মনে করি এসব কিছু ফিলিস্তিনের প্রতি চূড়ান্ত অসম্মান। এখন পর্যন্ত গোপনে প্রকাশ্যে যেসব চুক্তি করা হয়েছিলো তা অবিলম্বে তা বাতিল করতে হবে। বাংলাদেশের সামর্থ্য অনুযায়ী বিশ্বের কাছে ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলতে হবে। 

ভারতের বিতর্কিত ওয়াকফ বিল সম্পর্কে তিনি বলেন, ভারতে যে বিল পাস হয়েছে তার ফলে মুসলমানদের থেকে সম্পত্তি কেড়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। এই বিলে ওয়াকফ বিলের সংজ্ঞা পর্যন্ত পরিবর্তন করা হয়েছে। আইনের মারপ্যাঁচে ফেলে সব সম্পত্তি ওয়াকফ-র বাইরে নেওয়ার চক্রান্ত করেছে। ভারতের মুসলমানদের নাগরিকত্বহীন করা হয়েছে। তারা স্বাধীনভাবে বাস করবে, তাদের সম্পত্তি ভোগ করবেন কিন্তু সেসব ভারত সরকার কেড়ে নিয়ে অমুসলিমদের হাতে তুলে দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এটা বৈষম্যমূলক ও মুসলমানদের নিপীড়নের একটা মাধ্যম করা হয়েছে। ভারতের মুসলমান ও সচেতন নাগরিকরা প্রতিবাদ জানিয়েছে আমরাও সংহতি জানাচ্ছি। আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে এর নিন্দা জানাই। আমরা ভারতকে বলবো, এই ওয়াকফ বিল বাতিল করুন, মানুষকে মুক্তি দিন। 

বিক্ষোভ সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা বক্তব্য রাখেন।

কেএইচ/জেডএস