ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শাসনামলে এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হল ও ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ কর্তৃক শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ ও তাদের সহযোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ঢাবি ছাত্রদল। 

বুধবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্য থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু করে ভিসি চত্বরে হয়ে ঢাবির প্রশাসনিক ভবনে পৌঁছে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশ শেষে ঢাবি ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।

এ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, সিনিয়র সহ-সভাপতি নাসিরুদ্দিন শাওন, আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক, সাংগঠনিক সম্পাদক নূর আলম ভুঁইয়া ইমনসহ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

সমাবেশে ঢাবি ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নূর আলম ভুঁইয়া ইমন বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট শাসনামলে পতিত স্বৈরাচারের দোসররা এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে ঢাবি প্রশাসনের এসব কাছে বিচারের জন্য গেলে তাদের নামে মামলা দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হতো। এমনকি পরীক্ষার সময় ছাত্রলীগ স্বৈরাচার বিরোধী শিক্ষার্থীদের পুলিশে হাতে তুলে দিয়ে শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত করতো। আজ সে সব কর্মকর্তারা পুনর্বাসিত হচ্ছে। বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে দালালি করলে ছাত্রদল বসে থাকবে না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে স্বৈরাচারের দোসরদের প্রতিহত করবে।

ঢাবি ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক বলেন, বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী শাসনামলে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ দ্বারা শত শত শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের মদদ দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষক ও কর্মকর্তা। কিন্তু আপনারা এখনো ফ্যাসিস্টের দোসর এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? এখনো কেন ছাত্রলীগ বিজয় ৭১ হলের লিফটে জয় বাংলা লিখে যায়? এখনো কেন শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী স্টেজে উঠে গান গায়?

খন্দকার অনিক বলেন, আপনারা যদি স্বৈরাচারের এসব দোসরদের বিচার না করেন তাহলে ছাত্রদল আপনাদের তাদের সাথে সুপ্ত প্রেমের গুপ্ত ইতিহাস সবার সামনে নিয়ে আসবে। কারা গোপনে আওয়ামী লীগের থেকে সুবিধা নিয়েছেন তাদের ইতিহাস আমাদের অজানা নয়। আপনারা যদি এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেন তাহলে ছাত্রদল সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নেবে।

ঢাবি ছাত্রদল সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, যে শিক্ষকগণ একটি শিক্ষিত জাতি গঠনের লক্ষ্যে কাজ না করে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ওয়াজেদের হাতকে শক্তিশালী করেছিল, তারা এখন বুক চেতিয়ে ক্যাম্পাসের আনাচে কানাচে হেঁটে বেড়ায়। অথচ আমরা দেখেছিলাম, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কলাম লেখার কারণে ড. মোর্শেদ হাসান খানকে তার চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। এসকল আওয়ামী দোসর শিক্ষকরা এখনো তাদের স্বপদে বহাল রয়েছে। 

তিনি বলেন, ছাত্রদল ইতোমধ্যে কয়েকবার সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ ও এদের দোসরদের বিচারের দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। তখন আপনি মুচকি হেসে আশ্বাস দেন, কিন্তু আপনার আশ্বাসের কোনো বাস্তব রূপ আমরা দেখতে পায় না। ছাত্রদল শুধু স্মারকলিপি দিয়ে থেমে থাকবে না। কালক্ষেপণ না করে বিগত ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদের হাতকে শক্তিশালী করার জন্য যে সব শিক্ষক, কর্মকর্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানকে কলুষিত করেছে, তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করুন। নাহলে আমাদের কর্মসূচি আগামীতে আর সহিষ্ণু কর্মসূচি থাকবে না।

এআইএস