আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক হাজার ৩৫ কোটি ৫৪৫ লাখ টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) দেবে ৮৮৩ কোটি ৪ লাখ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয়ের খাত থেকে আসবে ৯০ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি থাকবে ৬২ কোটি ৪১ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের ৬ দশমিক ৩ শতাংশ।

উপেক্ষিত গবেষণা খাতে এবার বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের ২ দশমিক ৮ শতাংশ। গত বছর এ বরাদ্দ ছিল ২০ কোটি ৭ লাখ টাকা যা মোট বাজেটের ২ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।

মঙ্গলবার (১৭ জুন) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের আব্দুল মতিন ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে ঢাবির ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। 

সোমবার (১৬ জুন) অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের সভায় এ বাজেট অনুমোদন হয়। 

এর আগে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৯৪৫ কোটি ১৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকার বাজেট অনুমোদন করেছিল সিন্ডিকেট। সে হিসেবে এ বছরে বাজেটের আকার বেড়েছে। তবে গত বছরের মতো এ বছরেও গবেষণা ও উদ্ভাবন খাতে পর্যাপ্ত বাজেট দেওয়া হয়নি। 

নতুন এই বাজেটে বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় হবে ২৯৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ভাতাদি বাবদ ব্যয় হবে ২১৫ কোটি ৯১ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা, পণ্য ও সেবা বাবদ ব্যয় হবে ২৮৫ কোটি ৯৮ লক্ষ ২২ হাজার টাকা। পেনশন ও অবসরকালীন ভাতা ও সহায়তা বাবদ ১৩৮ কোটি ৮৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সহায়তা বাবদ ১০০ কোটি টাকা, যন্ত্রপাতি অনুদান বাবদ ৩৫ কোটি ৪১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা,  যানবাহন বাবদ অনুদান ১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, তথ্যপ্রযুক্তি ও অন্যান্য মূলধন অনুদান বাবদ ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা, অন্যান্য মূলধন অনুদান বাবদ ৩ কোটি টাকা ব্যয় হবে।

গবেষণায় বাজেটের অপ্রতুল বরাদ্দ দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে কোষাধ্যক্ষ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলো বাংলাদেশের নলেজ ক্রিয়েটিং হাব। স্বাধীনতার আগে-পরে দেশের সব ধরনের ক্রান্তিলগ্নে পাশে থেকে কাজ করেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নতুন উদ্ভাবনী কাজে শিক্ষকদের গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত অর্থের জোগান দিতে পারছি না। বর্তমান যুগে টিকে থাকতে হলে নতুন নতুন উদ্ভাবন প্রয়োজন। প্রচুর অর্থ ব্যয় ব্যতীত এ ব্যাপারে সাফল্যমণ্ডিত হওয়া দিবাস্বপ্ন মাত্র। গবেষণার জন্য ২১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা পর্যাপ্ত নয়।

অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হাজারের বেশি শিক্ষক কর্মরত আছেন। এই অর্থ দিয়ে বড় ধরনের মৌলিক গবেষণা আদৌ কী সম্ভব? আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাঙ্কিং নিয়ে অনেক আলোচনা শুনতে পাই। এই র‌্যাঙ্কিং উন্নত করতে হলে প্রয়োজন গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা। এই খাতে বাজেট বরাদ্দ বহুলাংশে বৃদ্ধি করলে আমরা কাঙ্ক্ষিত ফল পাব।

নতুন অর্থবছরের জন্য মঞ্জুরি কমিশন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যাপ্ত বরাদ্দ পায়নি জানিয়ে কোষাধ্যক্ষ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে চাহিদা ছিল ৯৭৮ কোটি ৪ লক্ষ টাকা। সেখানে ইউজিসি বরাদ্দ দিয়েছে ৮৮৩ কোটি ৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় বরাদ্দের পরিমাণ প্রাপ্ত টাকার পরিমাণ কম।

তিনি আরও বলেন, বাজেট প্রণয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। আমরা এর বাইরে যেতে পারি না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ব্যয় বাড়ানোর বিষয়ে কোষাধ্যক্ষ বলেন, আমাদের অভ্যন্তরীণ আয় বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। যতদিন পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক স্বাধীনতা না আসবে, আমরা সরকারের ওপর নির্ভরশীল থাকব, ততদিন পর্যন্ত আমাদের কোয়ালিটি বাড়ার সুযোগ থাকবে না।

এসএআর/এমএন