চমেকে দুই দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে দাবি করে বিক্ষোভ করেছেন একদল শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) চমেক প্রাঙ্গণে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী আসিফ হাসান নিয়নকে ঘিরে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা তৈরির জন্য গত ৭ জুলাই রাতে বহিরাগত লোকজনকে হোস্টেল এলাকায় এনে জড়ো করা হয়। মেডিকেল কলেজ ও হোস্টেলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বহিরাগতদের আনাটা স্পষ্ট ষড়যন্ত্র। এই বহিরাগত কারা? কেন এলো? কে এনেছে? এর জবাব আমরা এখনো পাইনি। শুধু তাই নয়, ক্যাম্পাসের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করে পুরোনো ছাত্রলীগের দখলদারিত্ব ফিরিয়ে আনতেই এই বহিরাগতদের ব্যবহার করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা চমেক ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগকে পুনর্বাসন বা জুলাই বিপ্লবকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার ন্যূনতম সাহস দেখালে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ক্যাম্পাস ও হোস্টেলে বহিরাগত প্রবেশ ও জড়ো হওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধে প্রশাসনিক আদেশ জারি করার দাবি জানান।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
সমাবেশে লিখিত বিবৃতি পাঠ করেন চমেক শিক্ষার্থী আবরার আল ফয়সাল সিয়াম (৩১তম বিডিএস), মিনহাজুল হক (৬২তম এমবিবিএস), ইনতিসার আহমেদ (৬২তম এমবিবিএস) ও শাহ মোহাম্মদ ইমরান (৬৫ তম এমবিবিএস)।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি একজন ছাত্রদলকে নিয়ে ফেসবুকে লেখেন ‘ছাত্রদল ছাত্রলীগকে পুনর্বাসন করছে’। সেখানে একজন কমেন্ট করেন, ‘আমি আগে ছাত্রলীগ করতাম। আমি কাউকে আঘাত করিনি। আমি বর্তমানে ছাত্রদল করতেছি। আলহামদুলিল্লাহ।’ চমেক শিক্ষার্থী নাজমুল সেখানে কমেন্ট করেন, ‘আমি আগে ছাত্রলীগ করতাম। আমি কাউকে আঘাত করিনি। আমি বর্তমানে শিবির করতেছি। আলহামদুলিল্লাহ-২’। এটা নিয়ে শিবিরের একজন নাজমুলকে রুমে গিয়ে শাসিয়ে আসেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করে চমেকের আরেক শিক্ষার্থী ও নাজমুলের বন্ধু আসিফ হাসান নিয়ন ফেসবুকে পোস্ট দেন, ‘শিবির চমেকে ছাত্রলীগের কালচার নিয়ে আসছে’। এ নিয়েই মূলত ঘটনার সূত্রপাত হয়।
এ ঘটনায় সোমবার (৭ জুলাই) দিবাগত রাতে একদল শিক্ষার্থী আসিফকে ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। এ ঘটনার পরদিন (মঙ্গলবার) আসিফকে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম ও ছাত্রাবাস থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জানিয়ে বুধবার (৯ জুলাই) বিবৃতি দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (বৈছাআ) চট্টগ্রাম মহানগর শাখা।
ঘটনার বিষয়ে আসিফ হাসান নিয়ন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ছাত্রলীগ করতাম। কিন্তু ১৮ জুলাই আমি ঘোষণা দিয়ে ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি নিয়েছি। এরপর থেকে আমি আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছি। আমার পরিবার বিএনপির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তাই আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপি ও ছাত্রদলের পক্ষে মন্তব্য করি। সম্প্রতি এক মন্তব্যকে কেন্দ্র করে আমাকে বহিষ্কার করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
চমেকের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছেলেটি আগে ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিল, পরে আবার জুলাই-আগস্টের বিপ্লবেও অংশ নিয়েছে। একটি গ্রুপে লেখার কারণে গত সোমবার তাকে একটি রুমে আটকে রাখা হয়। পরে আমরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করি। এ ঘটনায় অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা একটি তদন্ত কমিটি করেছি। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এসময় তার নিরাপত্তার জন্য আমরা হলে না থাকতে বলেছি। আবার ক্লাসে গেলেও তাকে নিয়ে ঝামেলা করছে। এজন্য তাকে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে।
এমআর/এসএসএইচ