ফাইল ছবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (জকসু) বিষয়ে কোনো ধারা উল্লেখ না থাকায় সরাসরি এটি বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবুও জকসু নির্বাচনের লক্ষ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয় এবং তা বিধিতে রূপান্তর করতে মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি পাওয়ার আশায় কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জকসু বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে তা গত ৭ মে বিশেষ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পাস করানোর প্রস্তাব এলে নীতিমালাতে শিক্ষার্থীদের মতামত যুক্ত করার পরামর্শ দেন সিন্ডিকেট সদস্যরা। ফলে ওই নীতিমালা সিন্ডিকেটেই আটকে পড়ে। পরে সেই সিন্ডিকেট সভাতেই শিক্ষার্থীদের মতামত বিবেচনা করে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে নীতিমালা সংশোধনের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

তবে সেই কমিটি গঠনের তিন মাস পার হলেও শিক্ষার্থীদের মতামতের অজুহাতে আটকে আছে নীতিমালার চূড়ান্ত ধাপ। যেখানে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে শিক্ষার্থীদের মতামত সংগ্রহ করার মাধ্যমে নীতিমালা চূড়ান্ত করার কথা ছিল, সেখানে তাদের কোনো তৎপরতাই দেখা যায়নি। শিক্ষার্থীরা মতামত দিলেও কোনো কাজ না করে তিন মাসে মাত্র একটি মিটিংয়েই সীমাবদ্ধ রয়েছে কমিটির কার্যক্রম। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট কমিটি জকসু নিয়ে যে নীতিমালাটি তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করেছিল সেটি বাংলায় অনুবাদের দোহাই দিয়ে দুই মাসের বেশি সময় আটকে রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমিন। এতেও ধীরগতি দেখা দেয় জকসু নীতিমালা প্রণয়নে।

নির্ধারিত ১০ কার্যদিবসের মধ্যে শিক্ষার্থীদের মতামত জমা দিতে না পারার কারণ জানতে চাইলে কমিটির সদস্য সচিব বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট রঞ্জন কুমার দাস বলেন, এ বিষয়ে কমিটির আহ্বায়ক তানজীমউদ্দিন খান স্যার বলতে পারবেন। সর্বশেষ আপডেট হলো ১৮ জনের মতো শিক্ষার্থী নীতিমালার বিভিন্ন বিষয়ের ওপর মতামত দিয়েছে, সেই মতামতগুলোকে টেবিল আকারে সাজিয়ে এ সপ্তাহের শেষে জমা দেব। তারপর এটি আবার সিন্ডিকেটে যাবে এবং পরে মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে বিধি আকারে সংযুক্ত হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. শেখ মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছে আমরা ওয়েবসাইটে মতামত চেয়েছিলাম। তারা যে মতামত দিয়েছে তা এলোমেলো। তাদের মতামত আমরা টেবিল আকারে উপস্থাপন করব। তারপর মতামতের বিষয়গুলো নিয়ে আবার মিটিং হবে। দু’একদিনের মধ্যে আমরা মতামতগুলো টেবিল আকারে জমা দেব কমিটির আহ্বায়কের কাছে। তিনি পরে মতামতগুলো নিয়ে সবার সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করবেন।

জকসু নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে তাদের আইনে ছাত্র সংসদ সংযুক্ত আছে বিধায় তারা এটি ঘোষণা করতে পেরেছে। আমাদেরও যদি আইনে সংযুক্ত থাকত তাহলে আমরা সবার আগেই ছাত্র সংসদের আয়োজন করতে পারতাম বলে মনে করি। আমরা মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে জকসুর কোনো ধারা না থাকার কারণেই আটকে আছি। যেহেতু দেশে সংসদ কার্যকর নেই, তাই এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সংশোধনের কোনো সুযোগ নেই। তারপরও আমরা জকসু বাস্তবায়নের জন্য একটি নীতিমালা বিশেষ সিন্ডিকেটে পাস করেছি এবং সেখানে নীতিমালায় শিক্ষার্থীদের মতামত যুক্ত করার একটি পরামর্শ এসেছে বিধায় ইউজিসি সদস্য ও আমাদের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খানকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তাদের রিপোর্টের সাপেক্ষে নীতিমালাটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে বিধি আকারে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে জকসুর বিষয়টি সংযুক্ত হলেই আমরা নির্বাচন আয়োজনের দিকে যেতে পারব।

এ বিষয়ে জানতে ইউজিসি সদস্য ও জকসু সংশ্লিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

জকসু নিয়ে ছাত্রনেতাদের বক্তব্য

জকসু নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল অবশ্যই জকসু নির্বাচনের পক্ষে। তবে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময়ে ও বিগত ১৭ বছর যারা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা ও নির্যাতন করেছে আমাদের দাবি, তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচারের আনা হোক। ফ্যাসিবাদমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তুলে তারপর জকসু নির্বাচন হোক।

শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতকরণ ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টিতে জকসুর বিকল্প নেই। গত ছয় মাস ধরে আমরা শুনতে পাচ্ছি নীতিমালা তৈরি করা শেষ কিন্তু এত দিনেও আমরা তার বাস্তবায়ন দেখতে পাইনি। আগস্ট মাসের ১০ তারিখের মধ্যে জকসু নীতিমালা পাস করে আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে নির্বাচনী তারিখ ঠিক করে জকসুর তফসিল ঘোষণা করতে হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি ইভান তাহসীভ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিধি নেই। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের যে আকাঙ্ক্ষা সেই আকাঙ্ক্ষার জায়গা থেকে নীতিমালাগুলো সংযুক্ত করে নেওয়া যায়। আর এই নীতিমালা প্রণয়ন করার ক্ষেত্রে ছাত্রসংগঠনগুলোর মতামত নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। যে খসড়া নীতিমালা নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা সব ছাত্রসংগঠনের কাছে পৌঁছানো এবং ছাত্র প্রতিনিধিদের মতামতের ভিত্তিতে নীতিমালা প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি একেএম রাকিব বলেন, শিক্ষার্থীদের চাহিদা ও প্রয়োজনের বিষয়গুলো সবচেয়ে ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পারেন নির্বাচিত ছাত্র নেতারাই। শিক্ষকরা তা যেমন উপলব্ধি করতে পারেন না, তেমনি সঠিকভাবে তুলে ধরতেও পারেন না। তাই জকসু নির্বাচন যত দ্রুত সম্ভব সম্পন্ন হওয়া জরুরি।

এমএল/এসএসএইচ