দ্রুত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ জারির আশ্বাস উপদেষ্টার
ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ দ্রুত জারির দাবিতে রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা বুধবার (৬ আগস্ট) ফের বিক্ষোভে নামেন। দাবি আদায়ের অংশ হিসেবে তারা ঢাকা কলেজ থেকে মিছিল বের করে সায়েন্সল্যাব মোড়ে দুই দফায় ৩০ মিনিটের বেশি সময় প্রতীকী অবরোধ চালান।
এই কর্মসূচি শেষে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল দেখা করে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরারের সঙ্গে। এসময় শিক্ষা উপদেষ্টা দ্রুততম সময়ে ৫ ধাপে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
সেই আলোচনায় উপস্থিত ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী এবং সাতকলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর টিমের ফোকাল পার্সন আব্দুর রহমান এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ৩৫ মিনিটের আলোচনায় উপদেষ্টা সাত কলেজের সার্বিক পরিস্থিতি ও প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ে বিস্তারিত শোনেন এবং বলেন, “আমি আশ্বাস দিতে আসিনি, কাজ দিয়েই প্রমাণ করব। অধ্যাদেশ অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল, তবে সবদিক গুছিয়ে আনতে প্রশাসনিক ধীরগতির কারণে কিছুটা সময় লেগেছে।”
বিজ্ঞাপন
অধ্যাদেশ প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে সংশ্লিষ্ট সচিবকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। শিক্ষা উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, “প্রতিটি দপ্তরে আমি নিজে নজর রাখছি, যাতে কোনো ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর সময়ক্ষেপণ না হয়।”
পাঁচ ধাপের পরিকল্পনায় দ্রুত সমাধান হবে জানিয়ে ফোকাল পার্সন আব্দুর রহমান আরও বলেন, অধ্যাদেশ প্রণয়নের প্রক্রিয়া পাঁচটি ধাপে সম্পন্ন হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষা উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছেন যে,এই পাঁচটি ধাপ দ্রুত শেষ করতে তিনি নিজেই সময় বেঁধে দিয়েছেন, কাউকে কালক্ষেপণ করতে দেওয়া হবেনা।
প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশের পাঁচ ধাপের বিষয়ে এই শিক্ষার্থী বলেন —
১. বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করবে।
২. খসড়া যাবে আইন মন্ত্রণালয়ে।
৩. সেখান থেকে প্রস্তাবিত সংশোধনসহ এটি আবার ইউজিসিতে ফিরবে।
৪. পরে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে উপদেষ্টা পরিষদে পাঠানো হবে।
৫. সবশেষে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়ে গেজেট আকারে প্রকাশ পাবে।
তিনি বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের ২৬ আগস্টের ডেডলাইনের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন এবং সে অনুযায়ী তিনি কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। একইসাথে ভিসি নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর দিকেও ইতিবাচক বার্তা দিয়েছেন উপদেষ্টা।
এর আগে, বুধবার সকাল ১০টার পর থেকেই ঢাকা কলেজ ফটকে জড়ো হতে শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। পরে ১১টার দিকে মিছিল নিয়ে মিরপুর সড়কে সায়েন্সল্যাব মোড়ে এসে সকাল ১১টা ৩৩ মিনিট থেকে ১১টা ৪৩ মিনিট পর্যন্ত ১০ মিনিটের অবরোধ চলে। এতে সড়কে সাময়িক যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। পরে তারা নীলক্ষেত হয়ে ইডেন কলেজের সামনে অবস্থান নেন। এরপর আবার দুপুরে ফের প্রায় ২০ মিনিটের জন্য অবরোধ করা হয় সায়েন্সল্যাব মোড়।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে ‘সাত কলেজ’ নামে এক অবমাননাকর কাঠামোর অধীনে তারা পড়াশোনা করে আসছেন। ‘অধিভুক্তি’ শব্দটি তাদের আত্মপরিচয়ে আঘাত করেছে। ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির নামে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম শুরু হলেও আমরা এখনো সেই পুরোনো ‘অধিভুক্ত’ গ্লানির ভার বহন করছি।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো —
১. ২৬ আগস্টের মধ্যে অধ্যাদেশ জারি ও তা তদারকির জন্য একটি ডেডিকেটেড সরকারি কমিটি গঠন।
২. অধ্যাদেশ জারির পর ভিসি, প্রক্টরসহ পূর্ণাঙ্গ প্রশাসনিক কাঠামো গঠন করে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু।
৩. বর্তমানে সাত কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনুষ্ঠানিক স্থানান্তর ও আত্মপরিচয়ের নিশ্চয়তা।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৬ মার্চ সরকার ঘোষণা দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি কলেজকে পৃথক করে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামে একটি নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত হবে। প্রস্তাবিত কলেজগুলো হলো—ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজ।
আরএইচটি/এমটিআই