ডাকসুতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে চমক দেখাতে পারেন যারা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে ভোটারদের দারে দারে ঘুরছেন প্রার্থীরা৷ বড় ছাত্রসংগঠন যেমন- ছাত্রদল, শিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জোট থেকে করা প্যানেলের হেভিওয়েট প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে।
দলীয় ছাত্র সংগঠন এবং স্বতন্ত্রের প্যানেলের বাইরেও আলোচনায় রয়েছেন বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। রাজনৈতিক দলের বাইরে থেকে ব্যক্তিগত পরিচিতি, নেতৃত্বের গুণাবলি ও ক্যাম্পাসে সক্রিয় ভূমিকার কারণে তারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাদের নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ভিপি প্রার্থী
সহ সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় উঠে এসেছে শামীম হোসেনের নাম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী। কোনো ধরনের দলীয় বা স্বতন্ত্র প্যানেলের অংশ না হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভিপি পদে লড়াইয়ের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি। শিক্ষার্থীদের মধ্যেও তাকে ঘিরে ইতোমধ্যে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে ক্যাম্পাসজুড়ে।
বিজ্ঞাপন
বিশেষ করে শামীমের বক্তব্যের মধ্যে রয়েছে ‘ডাকসুতে সবাই আদর্শিক লড়াই করবে, আমি একাডেমিক রিফর্মের রাজনীতি করব। যেটা আমার কম্ফোর্ট জোন।’
নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি আরও বলেন, আমি ভিপি হলে সবাই ভিপি হবে। আমি এখনো সরাসরি নিয়মিত ছাত্র, ১৯-২০ সেশন বা (রানিং) এম এ ব্যাচ থেকে ভিপিতে দাঁড়িয়েছি। আমার আর আপনার মধ্যে দূরত্ব কেবল একটি ব্যালটের এপার-ওপারে। আমি রাজনৈতিক নেতা হতে আসিনি, ইনশাআল্লাহ কখনো হতেও চাই না। পড়ালেখার পাশাপাশি আমি যেমন একটি ক্যাম্পাস পেলে নিজে আরও এগিয়ে যেতে পারতাম, সেরকম ক্যাম্পাসের স্বপ্ন নিয়েই আমি এই নির্বাচনে এসেছি। একধরনের ধরা-বাঁধা জীবন থেকে বেরিয়ে আসার পথ হিসেবেই আমি এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি।
জিএস প্রার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণরুম-গেস্টরুম ছিল নির্মম অত্যাচার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের আমলেও সরব থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আরাফাত চৌধুরী। তিনি এবার ডাকসু নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে লড়ছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আরাফাত চৌধুরী। এ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তিনি সহায়তা করেছেন হাজারো শিক্ষার্থীকে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আইনগত সহায়তা দিতে প্রতিষ্ঠা করেছেন সাইবার এইড বাংলাদেশ। এছাড়া অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের নিয়ে কাজ করা সেবাধর্মী সংগঠন ‘সেভ দা টুমরো’-এর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করে আসছেন তিনি।
ডাকসু নির্বাচন প্রসঙ্গে আরাফাত চৌধুরী বলেন, ডাকসু শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর, শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের প্রতিফলন। ডাকসু নির্বাচন বানচালের চেষ্টা মানেই শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা। আমরা কোনোভাবেই এই ষড়যন্ত্র মেনে নেব না। সুস্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, কোনোক্রমেই ডাকসু নির্বাচন স্থগিত বা পেছানো যাবে না। যারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়, তারা প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার্থীদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে বন্দী করতে চায়। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধভাবে এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করব।
এজিএস পদে
একবারের ডাকসু নির্বাচনে সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে লড়ছেন মোট ২৮ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে প্যানেলের বাইরে থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় এসেছেন সম্প্রতি ঢাবি ক্যাম্পাসেই বিয়ের পিঁড়িতে বসা তাহমিদ আল মুদ্দাসিসর চৌধুরী। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের একাংশ বলছে, প্যানেলের ভিড়ে না থেকে স্বতন্ত্র হয়ে লড়াই করায় এখন তিনি আরও বেশি গ্রহণযোগ্য এবং শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন।
তাহমিদ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক। দীর্ঘদিন সংগঠনের ভেতর সক্রিয়তা এবং বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার অংশগ্রহণ থাকলেও শেষ মুহূর্তে তাকে রাখা হয়নি সংগঠনের প্যানেলে। এজিএস পদে মনোনয়ন পান অন্য একজন। এই সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে পড়ে। উল্টো তার নামটিই এজিএস প্রার্থীদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের কাছে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়ে উঠছে।
হলে হলে পোস্টার-লিফলেট না থাকলেও মুখে মুখেই ছড়িয়ে পড়ছে তার প্রচারণা। যারা সরাসরি ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন, বরং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, বিতর্ক বা স্বেচ্ছাসেবী কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত সেসব শিক্ষার্থীদের মধ্যেও তাহমিদের প্রতি সমর্থন দেখা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন
সম্প্রতি দেওয়া এক বক্তব্যে তাহমিদ বলেন, আমার ডাকসু নির্বাচনের প্রথম ওয়াদা হবে প্রতিবছর ডাকসু নির্বাচন যাতে আয়োজিত হয় সেটি নিশ্চিত করা এবং ডাকসুকে ক্যালেন্ডার ইয়ারের অংশ করা। ডাকসুতে অনেকে অনেক প্রকারের অবাস্তব ইশতেহার সামনে আনে, যা পূর্ণ করার মতো এক্সিকিউটিভ পাওয়ার কখনোই ডাকসু প্রতিনিধিদের দেওয়া হয় না, থাকে না। যেহেতু প্রতিনিধিদের কথা বলার সুযোগ থাকে, তাই ডাকসু হতে হবে নিয়মিত। তখনই শিক্ষার্থীদের দাবি অটোমেটিক আদায় হবে, কারণ সেখানে একটা কন্টিনিউয়াস ফোর্স থাকবে।
এছাড়াও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আরেকজন নেত্রী, সংগঠনটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব সানজনা আফিফা অদিতি দলীয় প্যানেল না পেয়ে লড়ছেন ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদের এজিএস পদে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই ছাত্রলীগের অত্যাচার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তিনি। ক্যাম্পাসে ছাত্র অধিকার পরিষদ এবং পরবর্তী সময়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তি সংগঠনের সাথেও যুক্ত ছিলেন অদিতি।
এজিএস পদে প্রার্থিতা নিয়ে অদিতি বলেন, আমার জীবনে প্রতিবাদী হয়ে ওঠা কিংবা রাজনীতিতে আসার পেছনে আমার সেজো বোনের বিশেষ অবদান আছে। আপু ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালনের পর ২০১৯ সালের ডাকসুতে হল সংসদে এজিএস পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বিশাল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিলেন। আপুর সব বিদ্রোহী পদক্ষেপ স্বাভাবিকভাবেই আমাকে প্রভাবিত করেছে, আর আমার নেতৃত্বের গুণাবলিও দ্রুত বিকশিত হয়েছে।
অগ্রজের সেই পরম্পরা ধরে রাখতেই আমি কেন্দ্রীয় সংসদে এজিএস পদ বেছে নিয়েছি এবং একইভাবে স্বতন্ত্র থেকে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন থেকে এজিএস পদের সঙ্গে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক থাকবে। আমি বিজয়ী হয়ে বিজয়ের এই পরম্পরাও রক্ষা করতে পারবো বলে আশা রাখি।
এসএআর/এমএন