চিঠি চালাচালিতে আটকা জবি শিক্ষার্থীদের ‘সম্পূরক বৃত্তি’
পর্যাপ্ত আবাসন সুবিধা না থাকায় ‘মার্চ ফর যমুনা’ আন্দোলনে যায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তখন বেশ তোপের মুখে পড়তে হয় অন্তর্বর্তী সরকারকে। এক পর্যায়ে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন ভাতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয় সরকার। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও বার্ষিক বাজেটে আবাসন ভাতা বাবদ ‘সম্পূরক বৃত্তি’ দেওয়ার জন্য ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা করে। তবে বাজেট ঘোষণার দুই মাস অতিবাহিত হলেও অর্থের সংস্থান এখনও হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চলছে চিঠি চালাচালি।
ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্পূরক বৃত্তির জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেটে কোনো সুনির্দিষ্ট খাত না থাকায় ইউজিসি তিনটি খাতে বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠায়। এসব খাত হলো- মেধাবৃত্তি ২০ কোটি টাকা, শিক্ষা উপকরণ ক্রয় বাবদ ২০ কোটি টাকা এবং ভবন সংস্কারের নামে ২০ কোটি টাকা। এই চিঠি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
বিজ্ঞাপন
অর্থ মন্ত্রণালয় এই অর্থ বরাদ্দ দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং ইউজিসিকে তাদের বার্ষিক বরাদ্দ (৫,৫০০ কোটি টাকা) থেকে এ অর্থ প্রদান করতে বলে চিঠি দেয়। চিঠিতে বলা হয়, ইউজিসিকে প্রয়োজনে রিভাইজ বাজেটে অর্থসংস্থান করা হবে। এ চিঠি পাওয়ার পর ইউজিসি পুনরায় চিঠি পাঠিয়ে জানতে চায়, কেন অর্থ মন্ত্রণালয় চিঠিতে ‘প্রয়োজনে’ শব্দটি ব্যবহার করেছে?
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. তানজীমউদ্দিন খান জানিয়েছেন, চিঠিতে ‘প্রয়োজনে’ শব্দটি মুখ্য বিষয় নয়। মুখ্য হলো- অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, বরাদ্দটি ইউজিসির বাৎসরিক বাজেট থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে দিতে, যা এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। কারণ ইউজিসির বরাদ্দ ইতোমধ্যে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বিতরণ করা হয়েছে। আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এই অর্থের সুনির্দিষ্ট সংস্থান খুঁজছি। অর্থসংস্থান হওয়া মাত্রই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে। তবে, এটুকু বলতে পারি বাজেটে যেহেতু শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, এটা তারা পাবেই। অর্থের সংস্থান করতে একটু সময় লাগছে। এই অর্থের সংস্থানে আমাদের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে এবং থাকবে।
কবে নাগাদ শিক্ষার্থীরা অর্থ হাতে পাবেন- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা সুনিদিষ্ট করে বলতে পারছি না, তবে স্বল্প সময়ের মধ্যে যেকোনো উপায়ে অর্থ সংস্থান করে শিক্ষার্থীদের জন্য অর্থ ছাড়ের ব্যবস্থা করা হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ পরিচালক অধ্যাপক ড. শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা সর্বদা ইউজিসি ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। সর্বশেষ গত সপ্তাহে ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মধ্যে একটি বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকে সম্পূরক বৃত্তি নিয়ে যেসব জটিলতা ছিল তা সমাধান হয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষা সহায়ক ও ভবন সংস্কার খাতে ৪০ কোটি টাকার অডিট আপত্তির বিষয়ে ইউজিসি সমন্বয় করবে বলে আমাদের নিশ্চিত করেছে। ইউজিসি চেয়ারম্যানও বলেছেন, যতদ্রুত সম্ভব এই অর্থছাড়ের ব্যবস্থা করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, সরকার থেকে প্রতিশ্রুত ৬০ কোটি টাকা পাব। এটি সরাসরি সম্পূরক বৃত্তি হিসেবে না হলেও, ইউজিসি আমাদের তিনটি খাতে বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। বরাদ্দ কবে কার্যকর হবে তার নির্দিষ্ট দিন-তারিখ বলতে পারব না। তবে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া মাত্রই শিক্ষার্থীদের জুলাই থেকে বৃত্তি কার্যকর করা হবে। এ সপ্তাহেই আমরা নীতিমালা চূড়ান্ত করে বিভাগে বিভাগে বৃত্তি ফরম পাঠিয়ে দেব।
এমএল/এমএসএ