ছবি: উপরে বা দিক থেকে, ইব্রাহিম হোসেন রনি, সাঈদ বিন হাবিব, আব্দুল্লাহ আল নোমান, সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়, মাহফুজুর রহমান, মুনতাসির মাহমুদ, আবদুর রহমান রবিন, তামজিদ উদ্দিন এবং ঋজু লক্ষী অবরোধ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। সপ্তম চাকসু নির্বাচনকে ঘিরে পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে এখন উৎসবের আমেজ। যদিও সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের সংঘর্ষে সেই আমেজ কিছুটা ম্লান হয়েছিল, তবে ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর আবারও শিক্ষার্থীরা চাকসু নির্বাচন নিয়ে উৎসাহী হয়ে উঠেছেন। চলছে নানা আলোচনা, মতবিনিময় ও প্রস্তুতি।

নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিভিন্ন প্যানেল : এবারের নির্বাচনে একক, স্বতন্ত্র এবং সমন্বিত প্যানেল গঠনের তোড়জোড় চলছে। ছাত্র, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যাও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।

ইসলামী ছাত্রশিবির : সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ইব্রাহিম হোসেন রনি, সাহিত্য সম্পাদক সাঈদ বিন হাবিব, প্রচার সম্পাদক ইসহাক ভূঁইয়া ও শিক্ষা সম্পাদক মোনায়েম শরীফ এদের জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্য। তারা জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। সংগঠনটি এখনো ঠিক করেনি কে কোন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তবে তারা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল গঠনের পরিকল্পনা করছেন। যেখানে নারী, উপজাতি, ভিন্নধর্মাবলম্বী ও আহত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল : আলোচনায় রয়েছেন শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়, সাবেক অর্থ সম্পাদক হাসান আহমেদ, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক জালাল সিদ্দিকী, নুজহাত জাহান এবং শ্রুতি রাজ চৌধুরী। বিশেষ করে জুলাই আন্দোলনে আব্দুল্লাহ আল নোমানের ভূমিকা শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক আলোচিত। শহীদ ওয়াসিমের মৃত্যুতে অনেককে নাড়া দিয়েছে। তবে এখনও ছাত্রদল জানায়নি কে কোন পদে লড়বেন।

স্বতন্ত্র প্যানেল : জুলাই আন্দোলনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে রাজনীতি করা কিছু শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাসের সামাজিক-সাংস্কৃতিক অ্যাক্টিভিস্টদের নিয়ে একটি স্বতন্ত্র প্যানেল গঠিত হচ্ছে। ভিপি পদে মাহফুজুর রহমান ও জিএস পদে রশিদ দিনার প্রার্থী হতে পারেন। প্যানেলটি ঘোষণা করা হবে ১৭ সেপ্টেম্বর। এতে ৮ জন নারী শিক্ষার্থীসহ কিছু নতুন মুখ থাকতে পারে। এছাড়া চবি সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আজহার (ভিপি) এবং সহ-সভাপতি আহমেদ জুনায়েদ (জিএস) পদে লড়তে পারেন।

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ : জুলাই আন্দোলনের পর গঠিত এই সংগঠনের চবি শাখার আহ্বায়ক মুনতাসির মাহমুদ ভিপি পদে নির্বাচন করতে পারেন। সদস্য সচিব আল-মাসনুন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সুলতানুল আরেফিন এবং যুগ্ম আহ্বায়ক শাহরিয়ার নাফিজও আলোচনায় রয়েছেন।

ছাত্র অধিকার পরিষদ : ‘চাকসু ফর রেপিড চেঞ্জ’ নামের একক প্যানেলে নির্বাচন করবে ছাত্র অধিকার পরিষদ। প্যানেলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হবে ১৬ সেপ্টেম্বর। ভিপি ও জিএস পদে লড়বেন এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আলোচনায় রয়েছেন আহ্বায়ক তামজিদ উদ্দিন, সচিব রোমান রহমান ও যুগ্ম সদস্য সচিব মো. সবুজ। প্রয়োজনে তারা জোটে যেতে পারে এবং শীর্ষ দুই পদে ছাড় দিতে প্রস্তুত।

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন : ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’ নামে একক প্যানেলে নির্বাচন করবে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন। ভিপি পদে আবদুর রহমান রবিন, জিএস পদে আবদুর রহমান, সমাজসেবা সম্পাদক পদে রাকিবুল ইসলাম এবং দপ্তর সম্পাদক পদে আনোয়ার হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

বাম সংগঠনগুলোর জোট : বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট একসাথে নির্বাচন করছে। রোববার তারা প্যানেল ঘোষণা করবে। ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ঋজু লক্ষী অবরোধ, জিএস পদে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ইফাজ উদ্দিন আহমেদ এবং এজিএস পদে দপ্তর সম্পাদক শেখ জুনায়েদ কবির।

মনোনয়ন ফর্ম বিতরণ শুরু : আজ সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা মনোনয়ন ফর্ম সংগ্রহ করতে পারবেন। ১৬ সেপ্টেম্বর মনোনয়ন ফর্ম বিতরণের শেষ তারিখ। ফরম জমা নেওয়া হবে ১৫–১৭ সেপ্টেম্বর। যাচাই-বাছাই হবে ১৮ সেপ্টেম্বর, প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ হবে ২১ সেপ্টেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৩ সেপ্টেম্বর এবং চূড়ান্ত তালিকা ২৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করবে কমিশন। ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১২ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন পর এমন একটি নির্বাচনী পরিবেশে অংশ নিচ্ছেন, যেখানে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এবারের চাকসু নির্বাচনে কে কার আগে থাকবে, তা জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত।

আতিকুর রহমান/এআরবি