ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী বিভিন্ন আবেদন ও অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের উপ-পরিচালক ফররুখ মাহমুদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে চারটি পৃথক ধাপে নির্বাচন-পরবর্তী পরাজিত প্রার্থীদের করা নানা অভিযোগের বিষয়ে প্রশাসনের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তির ১ম ধাপে বলা হয়েছে, ডাকসু এবং হল সংসদগুলোর নির্বাচন-পরবর্তীতে আমাদের কাছে দাখিলকৃত আবেদনপত্রলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করছি। বিশুদ্ধতার জন্য আমরা যেক্ষেত্রে প্রযোজ্য সেক্ষেত্রে আইনগত মতামতও নিয়েছি। আমাদের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত বিজ্ঞ আইনজীবীদের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা প্রত্যেকটি দরখাস্ত/আবেদনপত্র বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রত্যেককে পৃথক-পৃথকভাবে জবাব দেওয়া হবে।

তবে সোমবার একটি ছাত্রসংগঠনের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে (মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছে) উচ্চারিত কিছু অভিযোগের জবাব এখন দেওয়া সমীচীন উল্লেখ করে এতে বলা হয়েছে, দুটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য। একটি হলো কয়েকজন দরখাস্তকারী বা আবেদনকারী নির্বাচনের দিন ধারণকৃত এবং পরবর্তীতে সংরক্ষণকৃত সিসি ক্যামেরার ফুটেজের পুরোটাই চেয়েছেন। বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা এবং বিজ্ঞ আইনজীবীদের মতামতও নেওয়া হয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ কোনো পাবলিক ডকুমেন্ট নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণকৃত এবং সংরক্ষণকৃত সিসিটিভি ফুটেজ কর্তৃপক্ষের কাছে সংরক্ষিত আমানত, যা নির্বাচন সংক্রান্ত যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সাহায্যকারী সাক্ষ্য হিসেবে বা ডকুমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। আমরা আবেদনপত্রগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করেছি। আবেদনপত্রগুলো অনেকটাই অস্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট কি কারণে, কোন সময়ের, কোন বিষয়ে সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে হবে তা দরখাস্তে উল্লেখ করা হয়নি। এমন অবস্থায় কিছু দরখাস্তে কতগুলো সাধারণ প্রশ্নের অবতারণা করা হয়েছে, যেগুলোতে তেমন কোনো সারবত্তা নেই এবং আবেদনকারীদের সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগও নেই।

এমনকি কোনো প্রার্থী যদি সুনির্দিষ্ট কোনো সময়ের বা কোনো একটি প্রাসঙ্গিক ঘটনা পর্যালোচনা করার জন্য সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চান, তারা যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করলে কর্তৃপকক্ষের মাধ্যমে মনোনীত বিশেষজ্ঞ বা ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত স্থানে তা দেখতে বা পর্যবেক্ষণ করা যাবে।

২য় ধাপে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, যে বিষয়টি বলা হয়েছে সেটি হলো- ভোটদানকারী ভোটারদের স্বাক্ষরিত তালিকা দেওয়ার অনুরোধ। এই ক্ষেত্রেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ মনে করে, এটি একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও গোপনীয় তালিকা। ডাকসুর নির্বাচন সংক্রান্ত বিধিতে এটির কপি দেওয়ার কোনো বিধান নেই। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থী ভোটকেন্দ্রে এসে, প্রাথমিক তথ্যাদি দেয়, ব্যালট পেপার সংগ্রহ করে যে তালিকায় স্বাক্ষর করেছেন, সেটি অত্যন্ত গোপনীয় তালিকা। এটিও কোনো পাবলিক ডকুমেন্ট নয়। 

তাই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা সংরক্ষণের স্বার্থে এটি দেওয়া কর্তৃপক্ষ যথাযথ মনে করে না। অধিকন্তু দরখাস্ত/আবেদনপত্রে উক্ত স্বাক্ষরিত তালিকা কেন দরকার, কি কারণে প্রয়োজন, কোন উদ্দেশ্যে সে তালিকার দরকার হয়েছে সেটিও সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। কতগুলো অস্পষ্ট, সারবত্তাহীন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ গুরুত্বপূর্ণ তালিকার কপি দেওয়ায় কর্তৃপক্ষ সবিনয়ে অপারগতা প্রকাশ করছে। 

উল্লেখ্য, খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষার্থী আদালতে রিট আবেদন করেন। তাদের দাবি ছিল– সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার সীমিত করা এবং উন্মুক্ত তালিকা থেকে নারী শিক্ষার্থীদের ছবি অপসারণ করা। উক্ত রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেই সময় ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ভোটার তালিকা উন্মুক্ত রাখা বন্ধ ঘোষণা করে। এ অভিজ্ঞতা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মনে করে, ভোটদানকারী ভোটারদের স্বাক্ষরিত তালিকা প্রকাশ করা সমীচীন নয়।

৩য় ধাপে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জবাব দেন, ব্যালট পেপার ছাপানোর প্রতিষ্ঠান বা  ভেন্ডারদের পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে। গোপনীয়তা রক্ষা একটি স্বীকৃত পদ্ধতি।

এতে নিশ্চিত করা হয়, সব ধরনের নিয়ম মেনে একটি প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়া বা দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে একটি পরীক্ষিত ও দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানকে ব্যালট পেপার ছাপানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ব্যালট পেপার ছাপানোর পরে নির্দিষ্ট পরিমাপে কাটিং করে তা ওএমআর মেশিনে প্রি-স্ক্যানিংপূর্বক মেশিনের পাঠযোগ্যতা নিশ্চিত করে সিলগালা প্যাকেটে সরবরাহ করা হয়।

আরও জানানো হয়, যে ওএমআর মেশিনে স্ক্যানিং করে ব্যালট পেপার ছাপানোর কাজ সম্পন্ন করা হয়, তা নীলক্ষেতের কোনো দোকানে সম্ভব নয়। তাই যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পূর্ণ গোপনীয়তা রক্ষা করে ব্যালট পেপার ছাপানোর কাজ করা হয়েছে, তাতে এটি অরক্ষিত থাকার সুযোগ নেই। 

উল্লেখ্য, ব্যালট পেপার মুদ্রণ একটি বিশেষায়িত প্রক্রিয়া। এর প্রতিটি পর্যায়ে নিবিড় তত্ত্বাবধান ও নির্বাচন কমিশনে কঠোর তদারকি ছিল। মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যালট পেপার পাওয়ার পর রিটার্নিং কর্মকর্তা বা কেন্দ্র প্রধান সিগনেচার করেন। পরে ভোটারদের তা দেওয়া হয়।

এছাড়া নির্বাচনের আগে-পরে বা গণনার সময়ও সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট, পর্যবেক্ষক, সাংবাদিকসহ কেউই এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ উত্থাপন করেননি। ভোট গ্রহণ শুরুর আগেই ব্যালট বাক্স পরীক্ষা করা হয়েছে, খালি বাক্স নিশ্চিত করার পর তা সিলগালা করা হয়। বণ্টিত ব্যালট পেপার ও ভোটের সংখ্যার কোন গরমিল দেখা যায়নি। ভোটারদের মাধ্যমে নেওয়া ব্যালট পেপার ও দেওয়া ভোটের মধ্যে অসামঞ্জস্য থাকলে বা কোনো রকম অভিযোগ থাকলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতাম। এরকম কিছুই ঘটেনি। অতএব নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পর ব্যালট পেপারের মুদ্রণ নিয়ে এমন অভিযোগের কোনো ভিত্তি আছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করে না।

বিজ্ঞপ্তির ৪র্থ ধাপে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে সব আবেদন, দরখাস্ত ও অভিযোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। যথাসময়ে প্রত্যেককে পৃথকভাবে জবাব এবং সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।

এসএআর/বিআরইউ