বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের মেধাবী শিক্ষার্থী শাহীনুজ্জামান লিমনের চিকিৎসার অভাবে পায়ে পচন ধরেছে। দীর্ঘ ছয় মাস ধরে চিকিৎসা করাতে না পারায় চিকিৎসকরা জানান, তার পা কেটে ফেলার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য দরকার ৪ লাখ টাকা। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের পক্ষে যা অসম্ভব।

শাহীনুজ্জামান লিমন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটা ফয়েজ পন্ডিতেরপাড়ার লোকমান আলীর ছেলে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে লিমন দ্বিতীয়। তার বড় ভাই একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন, তার চাকরিটি চলে যায়। ছোট ভাই দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।

লিমনের বন্ধু রতন জানান, ২০১৮ সালের পয়লা বৈশাখে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হন লিমন। সে সময়ে তার ডান পায়ে একটা অপারেশন করা হয়েছিল। সেই ক্ষত ভালো হতে প্রায় ৬ থেকে ৮ মাস সময় লেগেছিল। ২০২০ সালের শেষের দিকে আবারও সিএনজি অটো সংঘর্ষে বাঁ পায়ের হাড় ভেঙে গুরুতর আহত হন লিমন।

এরপর লিমনকে স্থানীয় মেডিকেল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে নেওয়া হয় রংপুর প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে পায়ের অবস্থার আরও অবনতি হলে নেওয়া হয় ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে। কিছুদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর চিকিৎসক ওষুধ লিখে এক মাসের মধ্যে পায়ের হাড় জোড়া লাগবে বলে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। কিন্তু দেড় মাসেও পায়ের হাড় জোড়া না লাগায় আবারও চিকিৎসকের কাছে যান লিমন।

চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান দ্রুত অপারেশন করতে হবে। যার ব্যয় হবে প্রায় চার লাখ টাকা। এত টাকা লিমনের পরিবারের পক্ষে জোগাড় অসম্ভব। ইতোমধ্যে লিমনের চিকিৎসার জন্য পরিবারকে ধারদেনা করতে হয়েছে।

আমাদের পক্ষেও এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয়। তাই আমরা ক্যাম্পাসের শিক্ষকমণ্ডলী, সিনিয়র, জুনিয়র, সহপাঠী এবং সমাজের বিত্তবানদের সাহায্য ও সহযোগিতা কামনা করছি।

শাহীনুজ্জামান লিমনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, চিকিৎসক চার মাস আগে অপারেশন করতে বললেও এখনো তা করা হয়নি। দিন দিন পায়ের অবনতি হচ্ছে। এখন জরুরিভাবে অপারেশন করাতে না পারলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। আমি আবার নিজ পায়ে চলতে চাই। পড়াশোনা শেষ করতে চাই।

লিমন জানান, তার বাবা একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। এত দিন পরিবারের খরচ ও চিকিৎসা করাতেই সব সম্বল শেষ হয়ে গেছে। এ ছাড়া ব্যাংক লোন রয়েছে প্রায় দুই লাখ টাকা। বিক্রি করার মতো জমিজমা নেই। যতটুকু আছে, তাও বন্ধক দেওয়া।

লিমনের মা শাহেরা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছেলে অসুস্থ, কীভাবে ভালো থাকি? ছয় মাস ধরে বিছানায় পড়ে আছে এবং চিকিৎসায় অনেক টাকা চলে গেছে। এযাবৎ ধার করা হয়েছে ২ লাখ টাকা এবং কৃষি ব্যাংকে এক লাখ টাকা লোন নেওয়া হয়েছে। এখনো অনেক টাকা দরকার। যদি সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসত, তাহলে ছেলেটা সুস্থ হয়ে যেত।

এদিকে লিমনকে অর্থসহায়তা করতে ব্যতিক্রমী আয়োজন গান গেয়ে অর্থ সংগ্রহ করছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকসংগীত সংগঠন ভবতরী। বৃহস্পতি ও শুক্রবার (১৭ ও ১৮ জুন) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের  প্রধান ফটকের সামনে গান গেয়ে দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন সংগঠনের শিল্পীরা। দর্শনার্থীরা অনেকেই গান উপভোগ করছেন এবং সামনে রাখা বক্সে টাকা রাখছেন।

ভবতরীর প্রতিষ্ঠাতা ও লিড ভোকাল শাহীন বাউলা বলেন, আমরা লোকসংগীত দল, আমরা বাউলগান গাই। যখন বিষয়টি জানতে পারি, তখন ভাবলাম তার জন্য গান গেয়ে কিছু করা যায় কি না। এরপর সবার সঙ্গে কথা বলে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছি। তিনি আরও বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানবতার জন্য কাজ করা। মানুষের জন্য কাজ করা।

লিমনকে সাহায্য করতে চাইলে লিমন : ০১৬২৯৩৯৯৮৫৬, (বিক্যাশ) নম্বরে টাকা পাঠাতে পারেন।

এনএ