ঢাবিতে অনুষ্ঠিত হলো ‘চিন্তার চাষ ক্ষুদে গবেষক’ সম্মেলন
“পথচলা, আলোর সাথে” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) অনুষ্ঠিত হয়েছে “১০ম চিন্তার চাষ ক্ষুদে গবেষক সম্মেলন ২০২৫”। স্বেচ্ছাসেবী গবেষণা সংগঠন চিন্তার চাষ-এর উদ্যোগে আয়োজিত এ সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ ৭ম থেকে ১০ম শ্রেণির প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। তারা নিজ নিজ গবেষণাপত্র ও ধারণাপত্র উপস্থাপন করে ভবিষ্যতের গবেষণা সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করে।
উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক সদস্য ড. মোবারক আহমেদ খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিকুর রহমান।
বিজ্ঞাপন
উদ্বোধনী বক্তব্যে ড. মোবারক আহমেদ খান বলেন, “দেশের গবেষণাকে আমাদের নিজস্ব সম্পদ ও অনুষঙ্গের ওপর নির্ভর করতে হবে। আজ যারা স্কুল পর্যায়ে গবেষণা করছে, তাদের মনিটরিং করতে হবে, তারাই হবে ভবিষ্যতের প্রকৃত বিজ্ঞানী। চিন্তার চাষের ফসল ঘরে তুলতে হবে, কারণ বাংলাদেশ বিজ্ঞানের দেশ, বাংলাদেশ বিজ্ঞানীর দেশ।”
অধ্যাপক ড. উপমা কবির বলেন, “গবেষণায় তিনটি ধাপ গুরুত্বপূর্ণ—প্রশ্ন করা, তা সমস্যা কি না যাচাই করা এবং সমস্যা সমাধানে প্রয়াসী হওয়া। শুধু কাগজে কলমে নয়, প্রয়োগিক ক্ষেত্রেও গবেষণার সুফল নিশ্চিত করতে হবে।”
বিজ্ঞাপন
আসজাদুল কিবরিয়া বলেন, “চিন্তার চাষ ভবিষ্যতের গুণীজন তৈরি করছে। তাই বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।”
অনুষ্ঠানে সাংগঠনিক বক্তব্য দেন চিন্তার চাষের নির্বাহী পরিচালক এস এম মেসবাহ আর রহমান এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন চিন্তার চাষের পরিচালক জাহিদুল ইসলাম।
আয়োজনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ক্ষুদে গবেষকদের একশত গবেষণা, সাতটি ধারণাপত্র ও ১২টি গবেষণাপত্রের পোস্টার প্রদর্শন অনুষ্ঠিত হয়। বিচারকার্যে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধ শতাধিক শিক্ষক ও গবেষক অংশ নেন।
সন্ধ্যায় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন এনডিসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জেবা আই সেরাজ।
সমাপনী বক্তব্যে এস এম মেসবাহ আর রহমান বলেন, “নিজেদের সমস্যা সমাধানে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। চিন্তার চাষ সেই মননগত পরিবর্তনের পথেই কাজ করছে গত এক দশক ধরে।”
সভাপতির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, “আমাদের গবেষণা হতে হবে মাটি ও মানুষের জন্য। চিন্তার চাষ তাৎক্ষণিক ফল নয়, বরং প্রজন্মান্তরে স্থায়ী সুফলের লক্ষ্যেই এগিয়ে চলছে।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, আমাদের সময়ে পড়াশোনার একমাত্র লক্ষ্য ছিল ডিপ্লোমা অর্জন করা। এখন ডিপ্লোমার মূল্য নাই। বড় বড় কোম্পানি এখন আর ডিগ্রি দেখছে না, যোগ্যতা দেখছেন। সুতরাং এখন এমন পড়াশোনা করার চেয়ে পড়াশোনা কী কাজে লাগবে তা বেশি করে ভাবতে হবে।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, জাতি হিসেবে আমাদের অর্জন খুবই সামান্য। একজন মাত্র নোবেল লরেট। ইসরায়েলের মতো ছোট একটা দেশেরও নোবেল লরেটের অভাব নেই। আমি আশা করছি, জ্ঞান-বিজ্ঞানের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ফিজিক্সে, রসায়নে, চিকিৎসায় তোমরা আগামীতে নোবেল পাবে।
এসএআর/এনএফ