বাঁ থেকে এস এম সালমান সাব্বির, মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ও সালাহউদ্দিন আম্মার

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন। এ নির্বাচনে শীর্ষ ৩টি পদে নির্বাচিত হয়েছেন সহসভাপতি (ভিপি) মোস্তাকুর রহমান জাহিদ, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দীন আম্মার ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) এস এম সালমান সাব্বির।

এর মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি) ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে বিজয়ী হয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ এর প্রার্থীরা। আর জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আলোচিত সাবেক সমন্বয়ক ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের সালাহউদ্দিন আম্মার।

নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে, ছাত্রশিবির সমর্থিত 'সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট' প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি প্রার্থী) মোস্তাকুর রহমান জাহিদ সর্বমোট ১২ হাজার ৬৮৭ ভোট পেয়েছেন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে সালাউদ্দীন আম্মার ১১ হাজার ৫৩৭ ভোট পেয়েছেন এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে এস এম সালমান সাব্বির পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৭১ ভোট। 

রাকসুতে নবনির্বাচিত এই তিন ছাত্রপ্রতিনিধির কার বাড়ি কোথায়?

নতুন ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ

মোস্তাকুর রহমান জাহিদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এগ্রোনোমি অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী । তার বাড়ি রংপুর বিভাগের নীলফামারী জেলার কচুকাটা ইউনিয়নে। তার বাবা মো. মোজাহারুল হক স্থানীয় দাখিল মাদরাসার শিক্ষক।

শিক্ষাজীবনে তিনি কৃষি বিজ্ঞানভিত্তিক নানা গবেষণা কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। এছাড়া বিতর্ক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল তার। সহপাঠীদের কাছে তিনি শান্ত, পরিশ্রমী ও পরিণত মনের মানুষ হিসেবে পরিচিত।

ছোটবেলা থেকেই মেধাবী জাহিদ ২০১৫  রংপুরের সরকারি কলেজ থেকে পাস করে ভর্তি হন রাবির এগ্রোনোমি অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগে। মেধাবী এই তরুণ তার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ফলাফলে নিজ বিভাগে তৃতীয় অবস্থানে আছেন। স্নাতকে তার
সিজিপিএ ৩.৭৬ ও স্নাতকোত্তর প্রথম  সেমিস্টারে তার সিজিপিএ ছিল ৩.৯২। এছাড়া তিনি ২০২৩ সালে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে ফেলোশিপ পান।

জিএস সালাউদ্দীন আম্মার 

সালাহউদ্দিন আম্মার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি খুলনা জেলায়। তার বাবা মো. আখতারুজ্জামান খুলনায় নিজস্ব ব্যাবসা পরিচালনা করেন। এছাড়া তিনি স্হানীয় জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত। তার মায়ের নাম রোকেয়া খানম, পেশায় স্কুল শিক্ষিকা। আম্মারের পরিবার জায়ামাত-শিবির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এই কথা তিনি নিজেই সংবাদ মাধ্যমকে জানান। 

খুলনার এই তরুণ ঢাকার তামিরুল মিল্লাত মাদরাসা থেকে দুইবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ২০২১ সালে এইচএসসি পাস করেন। জানা যায়, ২০২০ সালে তিনি সাথী হিসেবে শিবিরের সঙ্গে যুক্ত হন। 

তবে আম্মার পরিচিতি বৃদ্ধি পেতে থাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর। পর্যায়ক্রমে সে রাবির সব ছোট-বড় ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতিতে সকলের পরিচিত মুখে পরিণত হয়। এরপর চব্বিশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়েই তার নেতৃত্বগুণ ও সাহসী অবস্থান শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সেই আন্দোলনে তিনি ছিলেন অন্যতম সমন্বয়ক, সহপাঠীদের মাঝে পরিচিত পান ‘স্লোগান মাস্টার’ হিসেবে। তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রাবি’র অন্যতম সংগঠক ও সক্রিয় অংশগ্রহণকারী। আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে একাধিকবার প্রশাসনের চাপ ও হুমকির মুখেও তিনি স্থির ছিলেন।

এজিএস এস এম সালমান সাব্বির

সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) এস এম সালমান সাব্বির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী এবং শের-ই বাংলা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তার বাড়ি রাজশাহী সদর উপজেলায়।

সাব্বির রাজশাহী ক্যাডেট মাদরাসা ও মসজিদ মিশন একাডেমিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন। পরে রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ থেকে ২০১৯ সালে এইচএসসি পাস করে ২০২০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

তিনি বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সোচ্চার স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক’ সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট ইয়ুথ ইউনিটের সদস্য হিসেবেও কাজ করছেন।

সাব্বির সমাজসেবা, রক্তদান কর্মসূচি ও বিভিন্ন সচেতনতা কার্যক্রমের সঙ্গে নিয়মিতভাবে যুক্ত। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিনি পরিচিত একজন সংগঠক ও মানবিক স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে।

উল্লেখ্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) হল সংসদ নির্বাচনে জয় পেয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতিতে এক নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ২৩টি পদে মধ্যে ভিপি-জিএসসহ ২০টিতে জয় পেয়েছে ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট প্যানেল। বাকি ৩টি পদের মধ্যে জিএস পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাহ উদ্দীন আম্মার, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের নার্গিস আক্তার (জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের খেলোয়ার), বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক পদে তোফায়েল আহমেদ তোহা নির্বাচিত হয়েছেন।

অন্যদিকে ১৭টি হলের মোট ২৫৫টি পদের মধ্যে ছাত্রশিবিরের প্রার্থীরা ২৩৪টিতেই বিজয়ী হয়েছেন। নিশ্চিত করেছেন ভিপি, জিএস, এজিএসসহ শীর্ষ সব পদ।

জুবায়ের জিসান/আরকে