রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ যেন ফিরে পেয়েছে তার গৌরবময় অতীতের দিনগুলো। প্রতিষ্ঠার ৭২ বছর পর প্রথম পুনর্মিলনী উপলক্ষে আজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একত্র হয়েছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ, হাইকোর্ট বিভাগের ২৯ জন বিচারপতি, আপিল বিভাগের ৩ জন বিচারপতি, ২ জন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, শতাধিক জজ এবং হাজারের বেশি আইনজীবী। শুধু পেশাজীবনের ব্যস্ত মানুষরাই নন, তাদের অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে এসেছেন প্রিয় ক্যাম্পাসে, কাটাতে এক আবেগঘন দিন।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) সকাল থেকেই পুরো ক্যাম্পাসে ছিল উৎসবের আমেজ। কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের সামনে জমে ওঠে আড্ডা। কেউ ছবি তুলছেন, কেউবা গল্পে মেতে উঠেছেন। ১৯৬৭-৬৮ সেশন থেকে শুরু করে ২০২৪-২৫ সেশন পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন এই পুনর্মিলনীতে।

পুরনো বন্ধু, শিক্ষক আর সহপাঠীদের সঙ্গে দেখা হওয়ার আনন্দে সবার মুখে ঝলমল করছিল হাসি। কেউ স্মৃতিচারণ করছিলেন টিচার্স লাউঞ্জের আড্ডার কথা, কেউবা মনে করছিলেন আইনের ক্লাসরুম, সিনেট ভবন কিংবা শহীদুল্লাহ কলাভবনের করিডোরে কাটানো দিনগুলো।

পুনর্মিলনী উপলক্ষে সারাদিন ধরে চলে নানান আয়োজন-স্মৃতিচারণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ডিনার ও বিশেষ আলোচনা সভা। আইন বিভাগের বর্তমান শিক্ষার্থীরাও এই আয়োজন ঘিরে দারুণ উচ্ছ্বসিত, কারণ তাদের সামনে উপস্থিত ছিলেন সেই সিনিয়ররা, যারা আজ দেশের বিচারব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ আসনে অধিষ্ঠিত।

একজন সাবেক শিক্ষার্থী বলেন, অনেক দিন পর প্রিয় এই ক্যাম্পাসে ফিরে মনে হচ্ছে, সময় যেন পেছনে ফিরে গেছে। এখানেই গড়ে উঠেছিল আমাদের চিন্তা, যুক্তি আর ন্যায়বোধের ভিত।

১৯৯২-৯৩ সেশনের শিক্ষার্থী কবির ইকবাল হোসেন বলেন, আইন বিভাগকে ধন্যবাদ জানাই এত সুন্দর আয়োজনের জন্য। ৭২ বছর পর প্রথম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মতিহারের সবুজ চত্বর আজ পরিণত হয়েছে এক মিলনমেলায়। অংশগ্রহণ করে আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত। চাই, প্রতিবছরই যেন এমন আয়োজন হয়।

বাংলাদেশ বিচার বিভাগের যুগ্ম জেলা জজ ও রাবি আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী বেল্লাল হোসেন বলেন, আইন বিভাগের ৭২ বছর পূর্তিতে এসে আমরা এক অন্যরকম অনুভূতি অনুভব করছি। এটি নবীন-প্রবীণের এক আনন্দঘন মুহূর্ত। এই আয়োজনে অংশ নিতে পেরে আমরা ভীষণ আনন্দিত এবং আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞ। প্রায় ১৭ বছর পর ক্যাম্পাসে ফিরে ভৌত ও অবকাঠামোগত অনেক পরিবর্তন দেখছি। আমার স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে প্রিয় ক্যাম্পাসে আসতে পেরে মন ভরে গেছে।

বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শফিকুজ্জামান রানা বলেন, আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অনার্স ৪৩তম ব্যাচ ও এমএলএম ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। এই মিলনমেলার অনুভূতি সত্যিই ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। দীর্ঘ ২০-২৫ বছর পর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে এটি অত্যন্ত আবেগময় মুহূর্ত। ছোটভাই, বড়ভাই ও প্রিয় সহপাঠীদের সঙ্গে এই মিলনমেলা প্রাণভরে উপভোগ করছি। এমন সুন্দর ও হৃদয়ছোঁয়া আয়োজনের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

জুবায়ের জিসান/এআরবি