রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোছা. সায়মা হোসেনের মৃত্যু তদন্তে গঠিত কমিটির রিপোর্ট আজ (বৃহস্পতিবার) প্রকাশের কথা থাকলেও তা প্রকাশিত হয়নি।

এর প্রতিবাদে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভও করেন।

বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে, আমি কে, সায়মা সায়মা’, ‘বিচার চাই, সায়মা হত্যার বিচার চাই’, ‘আমার বোন মরলো কেন, প্রশাসন জবাব দে’, ‘প্রশাসনের সিন্ডিকেট ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও’, ‘কথা ছিল তিন দিন, বিচার পাবো কোনদিন’এমন নানা স্লোগান দেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সায়মার মৃত্যু স্বাভাবিক নাকি গাফিলতির কারণে হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে প্রশাসন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটিকে তিন দিনের সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিন দিন পার হলেও রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি। তারা বলেন- জুলাই আন্দোলনের পর যারা প্রশাসনের চেয়ারে বসেছেন, তারা কি সত্যিই শিক্ষার্থীবান্ধব? যতক্ষণ পর্যন্ত সুষ্ঠু তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ না হবে, আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।

এ বিষয়ে আন্দোলনরত সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. সোহাগ হোসেন বলেন, আজ সায়মা আপুর মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু প্রশাসন তা দেয়নি। এজন্য আমরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে একত্রিত হয়েছি। প্রশাসন আমাদের ৭২ ঘণ্টা সময় দিয়েছিল প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য। কিন্তু সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। আমরা সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে এখানে আছি, ইনশাআল্লাহ দাবি আদায় করেই ফিরব।

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, প্রশাসন নিজেই সময় নির্ধারণ করেছিল, তারপরও তারা গাফিলতি করলো কেন? আমরা চাই, তদন্ত প্রতিবেদন যেন সঠিকভাবে দেওয়া হয়, যাতে কোনো পক্ষপাত না থাকে। প্রশাসন যেন কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা না করে। যারা সায়মার মৃত্যুর সময় দায়িত্বে অবহেলা করেছে, তাদের চাকরিচ্যুত করা হোক। পাশাপাশি সায়মার পরিবারকে এককালীন আর্থিক সহায়তা এবং তার ভাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির ব্যবস্থা করা হোক।

রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, রাকসুর অবস্থান এ বিষয়ে একদম পরিষ্কার। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, তদন্ত কমিটি ও প্রশাসনের সঙ্গে আমরা রাকসু প্রতিনিধিরা সিনেটে বসব। প্রশাসন কিছু সময় চেয়েছে এবং জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে সিনেটে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। আমরা সে পর্যন্ত সময় দিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, রাকসুর প্রতিনিধিরা এখনো ভবনে বসেননি, প্রথম অধিবেশনও শুরু হয়নি। তবে অধিবেশন শুরু হলেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আমরা দুই মিনিটও সময় নেব না।

প্রসঙ্গত, নিহত শিক্ষার্থী সায়মা হোসেনের বাড়ি কুষ্টিয়ায়। গত রোববার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে নেমে তিনি ডুবে যান। পরে তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওই দিন রাতেই শিক্ষার্থীরা ভিসির বাসভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন এবং সায়মার মৃত্যুর তদন্তে প্রশাসনকে ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা দেন।

জুবায়ের জিসান/এআরবি