বুয়েটে ‘ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি ম্যানেজমেন্ট’ বিষয়ক ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত
রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (রাইজ), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে ‘ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি ম্যানেজমেন্ট’ বিষয়ক দিনব্যাপী ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সম্প্রতি বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) ভবনের রাইজ সেমিনার হলে এই ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়।
বিজ্ঞাপন
এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের উদ্ভাবন, গবেষণা ও প্রযুক্তি বিকাশে ইনটেলেকচুয়াল প্রোপার্টি (বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের) সুরক্ষা ও বাণিজ্যিকীকরণ সম্পর্কে শিক্ষার্থী, গবেষক ও শিল্পখাতের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো এবং শিল্প–একাডেমিয়া সহযোগিতার মাধ্যমে উদ্ভাবনের পরিবেশ আরও শক্তিশালী করা।
ওয়ার্কশপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন– বুয়েটের ন্যানোম্যাটেরিয়াল অ্যান্ড সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. এ. এস. এম. এ. হাসিব; জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের চিফ পিপল অফিসার শারমিন সুলতান এবং ডিফেন্স অ্যান্ড লার্জ কর্পোরেটের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট অ্যাডভাইসর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তৌহিদ হোসেন (অবঃ)। এছাড়া বুয়েট এর পাশাপাশি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি), গাজীপুর এবং আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এই ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করেন।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাইজের পরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম।
দিনব্যাপী ওয়ার্কশপটি তিনটি সেশনে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম সেশনের বিষয় ছিল ‘ম্যানেজিং ইনটেলেকচুয়াল প্রোপার্টি : দ্য রোল অফ দ্য স্টেট অ্যান্ড অর্গানাইজেশন ইন ইনোভেশন’।
এ সেশনে বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এবং ইনস্টিটিউট অফ অ্যাপ্রোপ্রিয়েট টেকনোলজির (আইএটি) পরিচালক প্রফেসর ড. মহিদুস সামাদ খান বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের উদ্ভাবন ও গবেষণাকে টেকসই করতে হলে ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি (আইপি) রাইটসকে নীতিগতভাবে শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
দ্বিতীয় সেশনে ‘প্র্যাকটিক্যাল ইনসাইট অন আইপি ইনফ্রিঞ্জমেন্ট অ্যান্ড প্রোটেকশন ইন বাংলাদেশ’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সালেহ আকরাম সম্রাট। তিনি আদালতের বিভিন্ন কেস স্টাডি ও বাস্তব উদাহরণ তুলে ধরে ব্যাখ্যা করেন, কীভাবে আইনি সুরক্ষা ও সচেতনতার অভাবে অনেক উদ্ভাবক তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ হারাচ্ছেন এবং এই ক্ষেত্রে আইনজীবী, গবেষক ও শিল্পখাতের যৌথ ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শেষ সেশনের বিষয় ছিল ‘স্ট্রেনদেনিং দ্য আইপি পলিসি অ্যান্ড কমার্শিয়ালাইজেশন ইকোসিস্টেম ইন বাংলাদেশ: দ্য রোল অফ পেটেন্টস ইন ড্রাইভিং ইনোভেশন’। এতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর মির্জা গোলাম সারোয়ার বাংলাদেশের আইপি কাঠামোকে শক্তিশালী করার উপায়, পেটেন্ট আবেদন প্রক্রিয়া এবং বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে উদ্ভাবনের অর্থনৈতিক মূল্য সৃষ্টির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড. এ এস এম এ হাসিব বলেন, `উদ্ভাবন ও গবেষণার প্রকৃত মূল্য তখনই পাওয়া যায়, যখন তার বুদ্ধিবৃত্তিক স্বত্ব সঠিকভাবে সংরক্ষিত হয়। একাডেমিয়া ও শিল্পের পারস্পরিক সহযোগিতা এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বুয়েট সবসময় এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানায়, যা দেশের প্রযুক্তি-নির্ভর অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করবে।’
জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের চিফ পিপল অফিসার শারমিন সুলতান বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের গবেষণা ও উদ্ভাবনের পরিধি আরও বিস্তৃত করতে শিল্পখাতকে অ্যাকাডেমিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা জরুরি। এই ওয়ার্কশপ তরুণ গবেষকদের ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টির গুরুত্ব ও বাস্তব প্রয়োগ সম্পর্কে সচেতন করবে, যা ভবিষ্যতে দেশের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনোভেশনকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে।’
আয়োজকরা জানান, ভবিষ্যতে বুয়েট ও জিপিএইচ ইস্পাত যৌথভাবে গবেষণা, ইনোভেশন ও প্রযুক্তি উন্নয়ন সংক্রান্ত আরও কার্যক্রম হাতে নেবে, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরাসরি শিল্পখাতের বাস্তব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করার সুযোগ পাবে। এই আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশে ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি ম্যানেজমেন্ট নিয়ে একাডেমিয়া ও শিল্পখাতের মধ্যে নতুন আলোচনা ও সহযোগিতার পথ উন্মোচিত হলো, যা দেশের উদ্ভাবনী সক্ষমতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিআরইউ