রাবিতে শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত ১৭ নির্দেশনা, মিশ্র প্রতিক্রিয়া
শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়ম-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত ১৭টি নির্দেশনা দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর। নির্দেশনা সম্বলিত নোটিশে উল্লেখ করা হয় ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে, শিক্ষার্থীদের দাবি, ৭৩-এর অধ্যাদেশে এসব বিষয় উল্লেখ নেই, শিক্ষার্থীদের চাপে রাখতেই এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গত রোববার (১৯ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর লিয়াকত আলী স্বাক্ষরিত 'রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশে বিধিবদ্ধ আইনের আলোকে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নিয়ম-শৃঙ্খলা' শিরোনামে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে এ ১৭টি নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরে ওই বিজ্ঞপ্তি আবাসিক হলগুলোসহ বিভিন্ন দফতরে নোটিশ আকারে প্রকাশ করা এবং ব্যাপক প্রচারের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ করা হয়।
বিজ্ঞাপন
কিন্তু যে অধ্যাদেশের কথা বলে এমন নির্দেশনা, অধ্যাদেশ খুঁজে সেরকম কিছু পাওয়া যায়নি।
বিজ্ঞপ্তিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, Voll-2, প্রক্টোরিয়াল পদ্ধতি ও বিভিন্ন শৃঙ্খলা, নবম অধ্যায়, ধারা, A. 2 (i), (ii), পৃ. ১৯৮ কে সূত্র ধরে ১ নম্বর নিয়ম-শৃঙ্খলায় বলা হয়েছে ১. বিশ্ববিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন অনুষদের ছাত্র-ছাত্রীদের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকবেন প্রক্টর যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে হলসমূহের বাইরে অবস্থিত ছাত্র-ছাত্রীদের কমন রুম ও ক্যান্টিন পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে।
বিজ্ঞাপন
এ ধরনের মোট ১৭টি নির্দেশনাতে একই উৎস (৭৩ এর অধ্যাদেশ) ব্যবহার করে উদ্বৃতি দেওয়া হয়েছে।
যদিও এসব নিয়ম কানুনের উল্লেখ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডারে আছে, অধ্যাদেশে নয়। অধ্যাদেশ আর ক্যালেন্ডারের মধ্যে পার্থক্য আছে উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাদিকুল ইসলাম সাগর বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ আর ক্যালেন্ডারের মধ্যে পার্থক্য আছে। অধ্যাদেশ অবশ্যই রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরিত একটা আইন। আর ক্যালেন্ডার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা আলাদা কিছু নিয়ম।
১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে নেই- এমনকিছু অধ্যাদেশ হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর লিয়াকত আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ঠিক আছে সেটা আমি চেক করে দেখব। এটা রেডি করা ছিল, আমার নিজস্ব লেখা কোনো কিছু নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেই এটা আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশে বিধিবিধান আছে শিক্ষার্থীদের জন্য, এসব তাদের জানা থাকা দরকার। যেগুলোর কালচার নেই সেগুলো নিয়ে আমি কিছু বলছি না।’
এদিকে ১৭ নির্দেশনার এই নোটিশকে একপাক্ষিক ভীতি প্রদর্শন করে নবীন শিক্ষার্থীদের চাপে রাখার হাতিয়ার উল্লেখ করে ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মিটুন চন্দ্র মোহন্ত বলেন, যদি ৭৩ এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা হয় তবে আগে রাকসু নির্বাচন দেওয়া হোক। হলগুলো থেকে বহিরাগতদের বের করে বৈধ সিট নিশ্চিত করা হোক। সমস্ত কিছুই চলবে অধ্যাদেশ বিরোধী অথচ ছাত্রদের বেলায় অধ্যাদেশের নাম ভাঙিয়ে তথাকথিত নোটিশ দেবে- এটা কোনোভাবেই ঠিক নয়।
তিনি বলেন, এটি আসলে নবীন শিক্ষার্থীদের প্রথম থেকেই ভীতির মধ্যে রাখার ব্যবস্থা। এতে শিক্ষার্থীরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পাবে। তাই আমরা আহ্বান জানাব, ৭৩ এর অধ্যাদেশকে ছাত্র-শিক্ষকবান্ধব হিসেবে উপস্থাপন করে সেই অনুযায়ী রাকসু নির্বাচন দিয়ে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা হোক।
১৭ নির্দেশনার মধ্যে আছে এমন কয়েকটি হলো-
প্রক্টরিয়াল বডির ক্ষমতা থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসসহ প্রত্যেক হলের কমন রুম ও ক্যান্টিনে।
রাতের খাবারের পর হলে প্রাধ্যক্ষের ইচ্ছেমতো সময়ে রোল কল হবে, এ সময় অবশ্যই নিজকক্ষে থাকতে হবে।
চলাচলের নিয়ম না মানলে প্রক্টর যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিবেন।
শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় ও হল ছাত্র সংসদ, বিভাগীয় সমিতি ছাড়া কোনো সংগঠন গঠন করতে পারবে না।
অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের মেস বদল করতে হল প্রাধ্যক্ষের অনুমতি লাগবে।
আবাসিক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হলে অবস্থান করা আবশ্যক।
মেশকাত মিশু/আরআই