ঝলমলে রোদ। এক ঝাঁক শিকারি হৈ হুল্লোড় করে নেমেছেন বিলে। অনেকে আবার বিলে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ দৃশ্য নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার পলাশতলী ইউনিয়নের খলিলাবাদ গ্রামের। ওই গ্রামের খলিলাবাদ বিলে দিনব্যাপী চলছে পলো-বাওয়া দিয়ে মাছ ধরার উৎসব। এতে অংশ নিয়েছেন নরসিংদী ও আশপাশের জেলার প্রায় ২ হাজার মাছ শিকারি।

স্থানীয়রা জানায়, শত বছরের বেশি সময় ধরে এই বিলে পলো দিয়ে মাছ ধরা হয়। তবে বিলে পানি ও মাছের ওপর ভিত্তি করে বছরে দুইবারও উৎসব হয়।

নরসিংদীর বিভিন্ন উপজেলার শখের মাছ শিকারিদের একটি করে দল রয়েছে। সেই দলের প্রধানরা মিলে সিদ্ধান্ত নেন একেক সপ্তাহে একেক বিলে মাছ শিকার করবেন। সেই ঘোষণা গ্রুপের অন্যান্য সদস্যরা ছড়িয়ে দেয় পরিচিতদের কাছে। এভাবেই নির্দিষ্ট দিনে সকাল থেকে বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মিনি ট্রাকযোগে হাজির হন নরসিংদীর পলাশ, মনোহরদী, শিবপুর, বোলাবো, গাজীপুরের কাপাসিয়া ও কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীসহ আশপাশের অঞ্চলের মাছ শিকারিরা।

আবদুল্লাহ বন্দুকশি নামে ষাটোর্ধ্ব এক মাছ শিকারি বলেন, আমি এসেছি গাজীপুর থেকে।  প্রতি বছর এখানে আসি। এবারও এসেছি।  মাছ পাওয়া না পাওয়া বিষয় না। সবাই মিলে আনন্দ করছি, হৈ হুল্লোড় করছি এটাই অনেক।

ওসমান গণি নামে একজন বলেন, আমি এসেছি মনোহরদী থেকে। একটা মাঝারি সাইজের শোল মাছ পেয়েছি। আনন্দ লাগছে।  দিনব্যাপী চলবে এই পলো-বাওয়া উৎসব।

লিটন মিয়া নামে আরেক মাছ শিকারি বলেন, আমি একটি বোয়াল পেয়েছি। এতেই আমি খুশি। লাখ টাকা দিলেও এই মাছ আমি বিক্রি করব না। এটা শখের জিনিস। আমি বাড়ি নিয়ে যাব।

মোবারক হোসেন কবির নামে এক এলাকাবাসী জানান, ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই উৎসব চলে আসছে। এখন মাছ কমে গেছে। আগে বেশি মাছ পাওয়া যেত। তবুও প্রতি বছর দেড় থেকে দুই হাজার মানুষ এখানে পলো উৎসবে অংশ নেয়। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে আশপাশের গ্রামে নাইওরী আসে।

বিল্লাল মিয়া আরেক এলাকাবাসী বলেন, আমার বয়স ৪০ বছর। আমার বাবাও ঠিক করে বলতে পারেন না কবে থেকে এই পলো বাওয়া উৎসব শুরু হয়েছিলে। আমি ছোট থেকে পলো-বাওয়া দেখতেছি। আমার বাপ-দাদাও দেখে আসছে। তবে আনুমানিক দেড়শো বছর হবে এই বিলের বয়স।

শফিকুল ইসলাম নামে এক আয়োজক বলেন, প্রতি উপজেলায় আমাদের দল আছে। একেক সময় জেলার বিভিন্ন বিলে পলো বাওয়া উৎসবের আয়োজনের দায়িত্ব পড়ে একেক উপজেলার দল প্রধানের ওপর। আমি পলাশ উপজেলার প্রধান। এই বিলের উৎসবের এইবারের আয়োজক আমি। আমরা সবাই মিলে দিন তারিখ ঠিক করে আজ এসেছি এখানে। কারও কাছ থেকে কোনো ফি নেওয়া হয়নি। সবার জন্য উন্মুক্ত এই বিল।

পলাশতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ভূঞা জানান, প্রতি বছরই এই বিলে উৎসবমুখর পরিবেশে পলো-বাওয়া উৎসব হয়। এই বিল সবার জন্য উন্মুক্ত। সবাই এখানে সারা বছরই মাছ ধরতে পারে।

এসপি