সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর ও তার স্ত্রীর নির্যাতন থেকে পালিয়ে বেঁচেছেন এক গৃহকর্মী। দীর্ঘ সাত বছর ধরে গৃহকর্মী হিসেবে আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছে নির্যাতনের শিকার কিশোরী মিম (১৫)। পালিয়ে যাওয়ার পর শুক্রবার (১১ মার্চ) সকালে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২৯ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ বাঘিয়া শাহপরান সড়কের কবির হাওলাদারের বাড়ি থেকে ওই গৃহকর্মীকে উদ্ধার করে পুলিশ। 

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহজালাল কবির।

তিনি জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে এয়ারপোর্ট থানা এলাকার দক্ষিণ বাঘিয়া থেকে ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হচ্ছে। তার স্বজনদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। স্বজনরা এলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। 

নির্যাতনের শিকার মীম জানান, তার বাড়ি পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার তুলসিপুর গ্রামে। তার পিতার নাম ওরেন ও মা মনিকা ছোটবেলায় মারা গেছনি। স্বপন নামে তার চাচার কাছে প্রতিপালিত হচ্ছিলেন। তবে সাত বছর পূর্বে তাকে সেনাবাহিনীর মেজর আকিমুল ইসলামের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে দেন। সেখানে তার স্ত্রী ও তিনি নিজে অকথ্য নির্যাতন চালাত। মারধর করত। রাত ৩টা থেকে তাকে ঘরের কাজ করতে হতো। 

সারা দিনে দুই বেলা খাবার দিত উল্লেখ করে মীম আরও জানান, তাদের নির্যাতনের হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে অনেকদিন ধরেই সে সুযোগ খুঁজচ্ছিল। অবশেষে বৃহস্পতিবার গেট খোলা পেয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে আসে। হাঁটতে হাঁটতে বিএম কলেজের সামনে এসে রিকশা চালক আরিফের কাছে ঘটনা খুলে বললে তিনি তার বাসায় নিয়ে আশ্রয় দেন। মিম জানান, দুই-তিন বছর আগে তারা বরিশালে এসেছেন এবং গৃহকর্তা অবসরপ্রাপ্ত মেজর আকিমুল ইসলাম ওষুধ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান কেমিস্ট ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের সিইও পদে কাজে যোগ দেন। 

এয়ারপোর্ট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) উত্তম কুমার দে বলেন, এই এলাকার কবির হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকেন রিকশাচালক আরিফ। তিনি বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) রাতে মেয়েটিকে বিএম কলেজের সামনে পান। মেয়েটি তার কাছে সাহায্য চাইলে নিজের রিকশায় করে এনে বাসায় স্ত্রীর জিম্মায় রাখেন। সকালে থানায় অবহিত করলে আমরা এসে উদ্ধার করি। যেহেতু ঘটনাস্থল কোতয়ালী থানা এলাকায় তাই উদ্ধারকৃত কিশোরীকে কোতয়ালী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি জানান, রিকশাচালক আরিফ অত্যন্ত মানবিক কাজ করেছেন। তিনি না থাকলে হয়ত মেয়েটির অন্য কিছুও হয়ে যেতে পারত। 

আরিফের স্ত্রী হাফিজা বলেন, মেয়েটিকে আমার স্বামী বিএম কলেজের সামনে পেয়েছেন। মেয়েটি অসহায়, এ জন্য তাকে বাসায় এনে আশ্রয় দিয়েছেন। এরপরে আমরা পুলিশের কাছে তুলে দিয়েছি যেন মেয়েটিকে নিরাপদে তার স্বজনদের কাছে পৌঁছে দিতে পারে। 

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে অবসরপ্রাপ্ত মেজর ও ওষুধ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান ক্যামিস্ট ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের সিইও আকিমুল ইসলাম বলেন, মারধরের যে অভিযোগ করেছে তা সঠিক নয়। সম্পূর্ণ মিথ্যা। তার (মীম) কিছুটা মানসিক সমস্যা আছে। তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু সে তার ঠিকানা সঠিকভাবে বলতে পারে না। মিম পিতা-মাতার ঠিকানা বলতে না পারলে আপনার (মেজর) বাড়িতে কীভাবে এল প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, গাজীপুরে থাকা অবস্থায় তাকে এক লোকের মাধ্যমে পেয়েছিলাম। একজন মেজর হয়েও বাসায় শিশু গৃহকর্মী রাখা অন্যায় কি না প্রশ্ন করা হলে কোনো সদুত্তর না দিয়ে গাড়িতে উঠে চলে যান আকিমুল ইসলাম।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরআই