কয়েকটি ইটভাটা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়

কুষ্টিয়ার সদর উপজেলায় অভিযান চালিয়ে ১১ ইটভাটা মালিকের কাছ থেকে ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ইট পোড়ানোর দায়ে ইটভাটা মালিকদের এ জরিমানা করা হয়। 

এর মধ্যে কয়েকটি ইটভাটা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় এবং কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের কুষ্টিয়া কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্র জানায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া ইট পোড়ানোর দায়ে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পূর্ব আব্দালপুর এলাকার স্বাধীন ব্রিকসের মালিক ফজলুর রহমান স্বাধীনকে দুই লাখ টাকা, কীর্তিনগর এলাকার এনএসআরএস ব্রিকসের মালিক রেজাউল করিম বাচ্চুকে পাঁচ  লাখ টাকা, কীর্তিনগর এলাকার ফাইভ স্টার ব্রিকসের মালিক বশির উদ্দিনকে চার লাখ টাকা, লক্ষ্মীপুর এলাকার এইচএনআর ব্রিকসের মালিক আলী হাসানকে চার লাখ টাকা, লক্ষীপুর এলাকার এএফএনআর ব্রিকসের মালিক আবু সাইদকে চার লাখ টাকা, লক্ষ্মীপুর এলাকার এমকে ব্রিকসের মালিক আব্দুল মাজেদকে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা, বৃত্তিপাড়া এলাকার এইচএপিএমবি ব্রিকসের মালিক হযরত আলীকে তিন লাখ টাকা, আলামপুর এলাকার ডায়মন্ড ব্রিকসের মালিক মোফাজ্জেল হোসেনকে তিন লাখ টাকা, নওয়াপাড়া (দহকুলা) এলাকার ফিমা ব্রিকসের মালিক ফিরোজুর রহমান সোলেমানকে তিন লাখ টাকা, নওয়াপাড়া এলাকার বিআরবিএফ ব্রিকসের মালিক দাউদ হোসেনকে পাঁচ লাখ টাকা ও বটতৈল দক্ষিণপাড়া এলাকার এমএমএস ব্রিকসের মালিক মকবুল হোসেনকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার ছয় উপজেলায় ইটভাটার সংখ্যা ১৯১টি। এর মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে চলছে ৫০টি ইটভাটা। বাকি ১৪১টি ইটভাটার মধ্যে শতাধিক হাইকোর্টে রিট করে ব্যবসা পরিচালনা করছে। এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়ায় ইটভাটা রয়েছে ১৯১টি। এর মধ্যে জিগজ্যাক ইটভাটা ৬২টি, ড্রাম চিমনি ইটভাটা ৩০টি ও ১২০ ফুট ফিক্সড চিমনি ইটভাটা ৯৯টি। রিটের সময়মতো জবাব না দেয়া ও দীর্ঘসূত্রিতার কারণে বন্ধ আছে ভাটার অনুমোদন। অধিকাংশ ইটভাটায় কয়লার বদলে পুড়ছে কাঠ। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অধিকাংশ ইটভাটা পরিচালিত হয়।

জানা গেছে, কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ৩৬টি, কুমারখালীতে ১৮টি, মিরপুরে ২৫টি, ভেড়ামারায় ৩০টি ও দৌলতপুরে ২৬টি ড্রাম চিমনি ও ১২০ ফুট ফিক্সড চিমনি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে একটি বড় অংশ ভাটা স্থাপন নীতিমালা অনুযায়ী অনুমোদন না পাওয়ায় হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন।

কুষ্টিয়া র‌্যাব-১২ এর সিপিসি-১ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর গাফ্ফারুজ্জামানের নেতৃত্বে পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাদিকুর রহমান সবুজ ভ্রাম্যমাণ আদলত পরিচালনা করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতে সার্বিক সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান।

অভিযানে ইটভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক কমল কুমার বর্মন। এ সময় অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমানসহ পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ, র‍্যাব-১২, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিবেশগত ছাড়পত্র ও ইট পোড়ানোর লাইসেন্স ছাড়াই ভাটাগুলো পরিচালিত হচ্ছিল। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনের বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘনের দায়ে ১১টি ইটভাটার মালিকের কাছে থেকে ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। পর্যায়ক্রমে প্রতি উপজেলার সব ইটভাটায় অভিযান অব্যাহত থাকবে।

তিনি আরও বলেন, জেলার ছয় উপজেলায় অনুমোদিত ইটভাটার সংখ্যা ৫০টি। ১৪১টি ইটভাটার মধ্যে অনেকে হাইকোর্টে রিট করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। অবৈধ এসব ইটভাটায় আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছি। আগামীতেও অভিযান পরিচালনা করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অবৈধ ইটভাটা মালিকদের জরিমানা করা হবে।

কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাসিবুর শাহীদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইটভাটার চিমনি নিচু হলে মানুষ ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ধোঁয়ায় গাছ, ফল ও ফসল নষ্ট হয়ে যায়। কয়লা থেকে ব্যাপকভাবে কার্বন মনোক্সাইড নির্গত হওয়ায় মানুষ সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত জানুয়ারি মাসে কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তর সাতটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। অভিযানে অবৈধ ১৮টি ইটভাটা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ৩৭টি ইটভাটার মালিকের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরে মামলা হয় এবং অবৈধভাবে ইটভাটা পরিচালনা করার অপরাধে ৩৭টি ইটভাটা মালিকের কাছ থেকে এক কোটি ২৫ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। 

রাজু আহমেদ/আরএআর