সোনালী ব্যাংক থেকে চুরি হওয়া গ্রাহকের ১৩ লাখ টাকা উদ্ধার
ফরিদপুরে সোনালী ব্যাংক থেকে এক গ্রাহকের চুরি হওয়া ২০ লাখ টাকার মধ্য ১৩ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এরা হলেন- খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার হোগলাডাঙ্গা গ্রামের মো. ফারুক শেখ (৬০) ও মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কোলা গ্রামের মোহাম্মদ আলী (৪৫)।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (১৬ মার্চ) দুপুর ১টার দিকে ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) জামাল পাশা।
তিনি জানান, গত ৬ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর সদর উপজেলার বিলমামুদপুর এলাকার নূর মোহাম্মাদ ডাঙ্গী মহল্লার বাসিন্দা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (৪২) বাবার পেনশনের সঞ্চিত ২০ লাখ টাকা ফরিদপুর হেড পোস্ট অফিস থেকে তুলে পাশেই সোনালী ব্যাংক কোর্ট বিল্ডিং শাখায় জমা রাখার জন্য যান। তিনি ম্যানেজারের কক্ষে সোফার ওপর টাকার ব্যাগটি রাখেন। ম্যানেজার টাকা জমা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে বললে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার ডেস্কে যান। এই ফাঁকে মাত্র এক মিনিটের মধ্যে অজ্ঞাতনামা চোরেরা ২০ লাখ টাকার ব্যাগটি চুরি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।
বিজ্ঞাপন
জামাল পাশা জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম হাসান তদন্তকালে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করেন এবং আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তিনজনকে শনাক্ত করেন। পরবর্তীতে গত ১৫ মার্চ ভোর ৫টার দিকে খুলনার হোগলাডাঙ্গা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে মো. ফারুক শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ফারুকের কাছ থেকে চুরি হওয়া নগদ ৩ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে ফারুকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ওইদিন বেলা ১১টার দিকে মুন্সীগঞ্জ এলাকায় শ্বশুরবাড়ি থেকে মোহাম্মদ আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর মোহাম্মদ আলীর স্বীকারোক্তি ও দেখানো মতে চুরি যাওয়া নগদ ৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে গ্রেপ্তার দুইজনের দেওয়া তথ্য মতে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার উত্তর চাঁদসিরা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু তৃতীয় আসামি বাসা থেকে আগেই পালিয়ে যান। পরে তার বাসা থেকে আরও নগদ ৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তাররা দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর ধরে এই পেশার সঙ্গে জড়িত। তারা ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চুরি করে। মূলত তারা পোস্ট অফিস ও সরকারি ব্যাংকে বয়স্ক লোকদের টার্গেট করে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে একই ধরনের অপরাধে গাইবান্ধা জেলাসহ বিভিন্ন জেলায় একাধিক মামলা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) জামাল পাশা জানান, এ ঘটনায় মোট চারজন জড়িত ছিল। সবাইকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। বাকি দুইজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। বাকি দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা গেলে তাদের কাছ থেকে বাকি ৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার, ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শামীম হাসান উপস্থিত ছিলেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শামীম হাসান বলেন, বুধবার বিকেলে ২০ লাখ টাকা চুরির ঘটনায় গ্রেপ্তার মো. ফারুক শেখ ও মোহাম্মদ আলী ফরিদপুরের এক নম্বর আমলি আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শফিকুল রহমানের কাছে দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদালতের নির্দেশে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
জহির হোসেন/আরএআর