ভোটারদের আটকানোর কায়দা শেখালেন আ.লীগ নেতা
আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন
১৪ ফেব্রুয়ারি আলমডাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচন। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থী ও সমর্থকরা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা, পথসভা, আলোচনা সভা, সমাবেশ করছেন। এসবের ছবি প্রতিনিয়তই পত্রিকার পাতায় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখে পড়ছে। তবে মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে আলমডাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান কাদির গনুর সমর্থনে আয়োজিত এক শ্রমিক সমাবেশের ভিডিও। পুরো জেলাজুড়ে এ নিয়ে আলোচনা সমালোচলার ঝড় উঠেছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন আলমডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন। কীভাবে ভোটের আগের দিন রাতে ভোটারদের আটকাতে হয় সেই ‘কায়দা’ও শিখিয়ে দিয়েছেন কর্মীদের।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন ‘এটা বিএনপির লোক, এটা জামায়াতের লোক। আমি ওই লোকদের ব্যারিকেড দিয়ে ভোট আটকে দেব। আমরা নৌকাকে ভোট দিয়ে দেব। তাহলে কী হবে জানেন? বিএনপি-জামায়াতের যারা ভোট দিতে যাতি পারল না, আমাদের ৫শ ভোট ৫শই থেকে গেল। ভোটে অনেক কৌশল আছে। কৌশলগতভাবে আগালি বিপুল ভোটে জয়ী হবেন।’
‘আপনারা কি সবাই একমত?’ সমস্বরে সবাই উত্তরে ‘জ্বি’ বলে সাড়া দিলে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘কারা কারা একমত, একটু হাত উঁচু করে দেখান।’ উপস্থিত লোকজন হাত তুললে তিনি বলেন, ‘থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ।’
বিজ্ঞাপন
‘আমরা এখানে পরিশ্রম করছি কিসির জন্যি? ভোটের জন্যি। এই ভোটগুলো কীভাবে বাড়ির কাছে আটকে দেব? গলির মদ্যি জামাত-বিএনপি। টুক করে ভোটের আগের রাত্রি গলির মদ্যি বুলে আসতি হবে, তুই বাড়ির মদ্যিতি নড়বিনে। নড়লি তোর খবর আছে। কারণ তুই হচ্ছি রাজাকার, তুই হচ্ছি জামাত।’
ভোট করার কায়দা আছে, অনেক কায়দা আছে। আগে থাকতি ভোট কইরে ফেলতি হবে। ভোট স্যান্টারে (কেন্দ্রে) যায়ে ভোট হবে না।
একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন, শুক্রবার আলমডাঙ্গা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে আসন্ন আলমডাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান কাদির গনুর সমর্থনে আয়োজিত এক শ্রমিক সমাবেশে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন এসব বক্তব্য দেন।
আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন- আলমডাঙ্গা আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসান কাদির গনু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) ইয়াকুব আলী এবং আলমডাঙ্গা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রিয়াদ হোসেন।
কে বা কারা এই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিয়েছেন তা জানা যায়নি।স্থানীয়দের কাছে এই ভিডিও সম্পর্কে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তারা।
আলমডাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান মেয়র হাসান কাদির গনু (নৌকা), জেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাবেক মেয়র মীর মহিউদ্দিন (ধানের শীষ) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী (মোবাইল ফোন) বীর মুক্তিযোদ্ধা এম সবেদ আলী।
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা এম সবেদ আলী বলেন, ভিডিওটি আমি দেখেছি। এলাকায় ৮০ শতাংশ ভোট আমার। আমরা যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রস্তুত আছি। প্রশাসন যদি ঠিক থাকে তাইলে জনগণ আমাকেই বেছে নেবেন।
ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মীর মহিউদ্দিন বলেন, ‘ভিডিওটি আমি দেখেছি। এ বিষয়ে আমি আর কোনো মন্তব্য করব না। কিছু বললেই আমার ও নেতাকর্মীদের উপর চাপ আসবে। তবে আমি আতঙ্কে আছি। প্রশাসনকে জানিয়েছি।
ভিডিওতে দেওয়া বক্তব্য সম্পর্কে দেলোয়ার হোসেনের কাছে জানতে তার মুঠোফোনে কর দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।
নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান মেয়র হাসান কাদির গনু বলেন, আমি এই ভিডিওটি এখনও দেখিনি।
কী আছে এই ভিডিওতে? ভিডিও বক্তব্যের একাংশ বললে তিনি বলেন, এমন কিছু তিনি (দেলোয়ার হোসেন) বলেননি। আপনি ভালো করে মিলিয়ে দেখেন।
পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমি ভিডিও সম্পর্কে জেনেছি। এতে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছি না। ভোটের মাঠে দেখবেন আপনারা। ভোট অবাধ সুষ্ঠু হবে।
জেলা নির্বাচন কমিশন ও আলমডাঙ্গা পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা তারেক আহমেদ বলেন, মঙ্গলবার আইনশৃঙ্খলা কমিটির একটি মিটিংয়ে ভিডিওটি সম্পর্কে জেনেছি। আমরা এই ভিডিওটি কোনোভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি না। ভোট হবে ইভিএমে। কোনো কারচুপির সুযোগ নেই। ভিডিওটি সম্পর্কে আমি পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি। তিনি ব্যবস্থা নেবেন।
আফজালুল হক/এসপি