পাবনায় মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) আবাসিক হলে এক বাসের সুপারভাইজারকে ধরে নিয়ে গিয়ে মারধরের অভিযোগে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা।
বুধবার (২৩ মার্চ) ভোর থেকে পাবনা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সামনে অবস্থান নিয়ে ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন পরিবহন শ্রমিকরা।
বিজ্ঞাপন
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানায়, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার গাবতলী থেকে এমএম ট্রাভেলস পাবনার উদ্দেশে রওনা দেয়। বাসটি মাঝপথে সিরাজগঞ্জের একটি হোটেলে যাত্রাবিরতি করে। বিরতির নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১০ মিনিট পার হলেও পাবিপ্রবির এক শিক্ষার্থী উচ্ছৃঙ্খল আচরণ শুরু করে। পথে একাধিবার বাসের চালক-হেলপার ও সুপারভাইজারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান ওই শিক্ষার্থী।
ভোরে বাসটি পাবিপ্রবির প্রধান গেটের সামনে পৌঁছালে আগে থেকেই অবস্থান করা কিছু শিক্ষার্থী বাসের সুপারভাইজারকে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু আবাসিক হলে নিয়ে যান। সেখানে তাকে ব্যাপক নির্যাতন করা হয় এবং তার কাছে থাকা টাকা কেড়ে নেওয়া হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বিজ্ঞাপন
এ ঘটনা পাবনার পরিবহন শ্রমিকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সকাল ৭টা থেকে তারা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এতে ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।
নির্যাতিত সুপারভাইজার আব্দুল বারেক আসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘হোটেলে ১০ মিনিট দেরি হওয়ায় আমাকে গালাগাল করেন ওই শিক্ষার্থী। এ সময় আমি তাকে বুঝিয়ে বলি, বাসটি যেন ভোরে নিরাপদ সময়ে পাবনায় পৌঁছায় এজন্য আমরা একটু সময় ধীরে ধীরে যাই। পথে বাসের লাইট জ্বালানোর জন্যও তিনি খারাপ ব্যবহার করেন। তখনও আমি তাকে বলি, এই সময়ে মহাসড়কে ডাকাতির সম্ভাবনা থাকে, তাই লাইট জ্বালানো থাকে। এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে ৮/১০ শিক্ষার্থী আমাকে তুলে হলে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে বেঁধে ব্যাপক মারধর করে। হাত-পায়ে খুর দিয়েও আঘাত করে।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন সেকশন অফিসার আসমা হক। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পাবনা জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের আহ্বায়ক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এ ঘটনায় আমাদের শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ। একজন শিক্ষার্থী সুপারভাইজারকে তুচ্ছ ঘটনায় এভাবে নির্যাতন করে সেটা মেনে নেওয়া যায় না। সন্ধ্যায় পরিবহন শ্রমিক-মালিকদের জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে আমাদের জেলা প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও উপস্থিত থাকবেন। যদি সেখানে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান না হয় তাহলে আগামীকাল থেকে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
পাবনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সেখানে বিশৃঙ্খল কোনো কাজ না করার জন্য শ্রমিকদের অনুরোধ করা হয়েছে। মারধরের ঘটনার বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাকিব হাসনাত/এসপি