২ টাকায় কপি বিক্রি কৃষকের, দিনে ৫ হাজার টাকা লাভ পাইকারের
সাটুরিয়ার গোলড়া পাইকারি বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজি বিক্রি করতে এসেছেন চাষিরা
অনুকূল আবহাওয়া আর উত্তম পরিচর্যায় প্রতি বছরই সবজির বাম্পার ফলন হয় মানিকগঞ্জে। স্বল্প খরচে অধিক মুনাফা পাওয়া যায় বলে দিন দিন সবজি চাষাবাদে ঝুঁকছেন জেলার কৃষকেরা। তবে চলতি মৌসুমে সবজির উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম নেই বললেই চলে। এ নিয়ে চরম হতাশ সবজিচাষিরা। তবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন চাষিদের কাছ থেকে এসব সবজি কিনে বিক্রি করে ৪-৫ হাজার টাকা লাভ করছেন।
ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা থাকায় মানিকগঞ্জে উৎপাদিত রকমারি সবজি বাজারজাতকরণে কষ্ট হয় না চাষিদের। কারওয়ান বাজার, রায়ের বাজার, স্লুইসগেট, যাত্রাবাড়ী, খিলক্ষেত, আশুলিয়া, সাভারের বাইপাইল, বলিভদ্র-রপ্তানি, নবীনগর পুরগাঁও, কাঠগড়া বাজার, জিরাবো ও মির্জাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় মানিকগঞ্জের সবজির চাহিদা ব্যাপক।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভ্যান, ঘোড়ার গাড়ি, রিকশা ও মাথায় করে রকমারি সবজি বাজারে নিয়ে আসেন চাষিরা। দরদাম করে এসব সবজি বিক্রি হয়।
গোলড়ার পাইকারি সবজি বাজারে দেখা যায়, বড় ফুল ও বাঁধাকপির পিস চার টাকা, ছোট ফুল ও বাঁধাকপির পিস দুই টাকা, বেগুনের মণ ৩৫০-৪০০ টাকা, শিমের কেজি ১২-১৩ টাকা, কাঁচা মরিচের কেজি ৪০-৪৫ টাকা, টমেটোর মণ ৭০০-৮০০ টাকা, লাউয়ের পিস ১৫-২০ টাকা, মুলা এক ভ্যান ৪০০ টাকা, সবুজ শাকের আঁটি দুই টাকা, লাউ শাকের আঁটি ১০ টাকা, কলাই শাকের আঁটি তিন টাকা, লাল শাকের আঁটি তিন টাকা, ধনিয়া পাতার আঁটি চার টাকা ও মিষ্টি কুমড়ার পিস ৪০-৪৫ টাকা।
বিজ্ঞাপন
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলায় আট হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ২১ হাজার মেট্রিক টন। প্রতি হেক্টরে সবজির উৎপাদন ২৬ মেট্রিক টন ধরা হয়েছে।
সাটুরিয়া উপজেলার জান্না গ্রামের সবজিচাষি হাবিব মিয়া বলেন, চলতি মৌসুমে তিন বিঘা জমিতে রকমারি সবজির আবাদ করেছি। এতে আমার খরচ হয়েছে ৩০-৩৫ হাজার টাকা। আগাম সবজি আবাদে লাভ হলেও অনেক সবজিতে লোকসান হয়।
সাটুরিয়া উপজেলা তিল্লি গ্রামের চাষি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দুই বিঘা জমিতে মিষ্টি লাউ, বেগুন ও মরিচ চাষ করে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত ২৫ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছি। বাজারে দুই মণ কাঁচা মরিচ বিক্রির জন্য এসেছি। পাইকাররা ৩৫-৪০ টাকা কেজি বলতেছেন। আরেকটু বাড়ালে বিক্রি করব। এত শ্রম দিয়ে কম দামে জিনিস বিক্রি করলে আমাদের পোষায় না।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী বিপ্লব বলেন, প্রতিদিন মির্জাপুর থেকে সাটুরিয়ার গোলড়া পাইকারি বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজি কিনতে আসি। প্রতিদিন ১০-১২ হাজার টাকার বিভিন্ন ধরনের সবজি কিনে মির্জাপুরের খুচরা বাজারে বিক্রি করি। সব খরচ বাদ দিয়ে দিনে ২-৩ হাজার টাকা আয় হয় আমার।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন বলেন, ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি বাজারে মানিকগঞ্জের সবজির চাহিদা বেশ। এজন্য প্রতিদিন ২০-২৫ হাজার টাকার সবজি কিনে কারওয়ান বাজারে বিক্রি করি। সব খরচ বাদ দিয়ে দিনে ৪-৫ হাজার টাকা লাভ হয়। তবে সবজির উৎপাদন বেশি হওয়ায় এবার দাম কম।
গোলড়া এলাকার কৃষক আলাল বলেন, পাইকারি বাজারে সবজির দাম এখন অনেক কম। আমরা কৃষক, কৃষিকাজ করে সংসার চালাই। পাইকারি বাজারে সবজি দাম ভালো পাইলে সংসার ভালো চলে; কম পাইলে কষ্ট করে চলতে হয় আমাদের।
একই এলাকার কৃষক সোলায়মান বলেন, অহন বাজারে সবজির দামটা মন্দা। কৃষিকাজ কইরা আমাগো চলতে হয়। দাম কম পাইলেও বিক্রি করতে হয়। তয় এহন যে বাজারদর তাতে লাভ হয় না।
গোলড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকার সবজি বাজারের আড়তদার মো. লিয়াকত আলী বলেন, আমাদের আড়তে ২০০ পাইকারি ব্যবসায়ী সবজি কিনতে আসেন। এখন পাইকারি বাজারদর আগের চেয়ে কম। এখানে প্রতিদিন ২-৩ লাখ টাকার সবজি বেচাকেনা হয়। তবে কৃষকরা এখন কম দামেই সবজি বিক্রি করেন।
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শাহ্জাহান আলী বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, চলতি মৌসুমে মানিকগঞ্জে আট হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। এ বছর জেলায় সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। শীতকালীন আগাম সবজি চাষাবাদে জেলার কৃষকরা বেশ লাভবান হয়েছেন। তবে সবজির আমদানি বেশি থাকায় চাষিরা এখন দাম কম পাচ্ছেন।
সোহেল হোসেন/এএম