ভোগাই নদের বালু উত্তোলনে ঝুঁকিতে সেতু
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই নদের নিষিদ্ধ সীমানার মধ্যে বালু উত্তোলন চলছে দেদার। ফলে নদী ধ্বংসের পাশাপাশি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত চরআলী সেতুটির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত স্থানীয় এলাকাবাসী। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে শেলো মেশিন দিয়ে নদ রক্ষা বাঁধ ভেঙে বালু তুলছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই ও চেল্লাখালী নদ-নদী দুটির মোট তিনটি বালুমহালকে এক বছর মেয়াদি ইজারা প্রদান করা হয়। এসব মহাল থেকে বালু উত্তোলনের জন্য রয়েছে নানা শর্ত। সেসব শর্ত পূরণ করে বালু উত্তোলনের চুক্তি থাকলেও কতিপয় অসাধু বালু উত্তোলনকারী নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছে না।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে নয়াবিলের সঙ্গে রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের সীমান্ত সড়কে ভোগাই নদের ওপর ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের চারআলী সেতু নির্মাণ করা হয়। গত বৈশাখ মাসে ভোগাই নদের ৪টি মৌজায় বালু তুলতে ৯০ লাখ টাকায় ইজারা পায় ‘মা-এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। গত ২৩ নভেম্বর জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বালু তোলার পরিধি আরও বাড়ানো হয়। তবে চারআলী সেতুর ৫০০ মিটার ভাটি ও উজান থেকে বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে কালাকুমা ও হাতিপাগার এলাকায় আরও কয়েকজন বালু উত্তোলনকারী প্রশাসনের কোনো বিধিনিষেধ না মেনে নদের তীর ধ্বংস করে বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিষিদ্ধ সীমানাসহ শর্ত না মেনে বালু উত্তোলন করায় সামনে বর্ষা মৌসুমে নদের উল্লিখিত স্থানসমূহে তীব্র ভাঙন দেখা দেবে। তাই অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি এলাকাবাসীসহ সচেতন মহলের।
অভিযোগ রয়েছে, উল্লিখিত বালু উত্তোলনকারীরা প্রশাসনের লাল রঙের পতাকা বা নিষিদ্ধ সীমানার চিহ্ন সরিয়ে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। সেতুর দুই দিকে ৫০০ মিটার করে মোট এক হাজার মিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছেন কেউ। এতে নদীর দুই পাড় ভেঙে গভীর গর্ত হয়ে সেতুটি পড়েছে ঝুঁকিতে।
বিজ্ঞাপন
নাম না প্রকাশ করার শর্তে একাধিক এলাকাবাসী অভিযোগ জানিয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছি না। কারণ বালু উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়ায় এসব করছে।
লিখিত অভিযোগে তারা জানান, সেতুর ২০০ মিটার দূরত্বের স্থান থেকে ৪টি শ্যালো মেশিন বসিয়ে নদী থেকে লম্বা পাইপের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ ছাড়া সেতুর ৪০০ মিটার ভাটিতে কালাকুমা ও হাতিপাগার নদ রক্ষা বাঁধ ভেঙে ৭ থেকে ৮টি শেলো মেশিনে দীর্ঘ পাইপ বসিয়ে উচ্চ বালুর টিবি করা হচ্ছে। এ ছাড়া মেশিনের তীব্র শব্দে আমাদের ঘরে থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হেলেনা পারভীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে সেতুর কাছ থেকে বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ইতিমধ্যে এক বালু ব্যবসায়ীকে আর্থিক জরিমানাও করা হয়েছে। তারপরও যদি কেউ সেতুর কাছ থেকে বা বাঁধ ভেঙে অবৈধভাবে বালু তুলে থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইন প্রয়োগে কঠোর হব।
এ বিষয়ে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও বালু ব্যবসায়ী কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাদের ব্যবহৃত মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।
নয়াবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আমজাদ হোসেন বলেন, বালু ব্যবসায়ীরা কারও কোনো কথা শুনছেন না। সরকানি কোনো বিধিনিষেধও মানছে না। তারা নদ ও সেতুর ক্ষতি করে বালু তুলেই যাচ্ছে।
জাহিদুল খান সৌরভ/এনএ