‘মহাসড়কই এখন আমাদের ঘরবাড়ি, এখানেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন আমাদের থাকতে হয়। নাওয়া-খাওয়া নাই, মহাসড়কেই দিন পার করতে হয়। দৌলতদিয়া ঘাট মানেই হচ্ছে ভোগান্তি। কখনো ভোগান্তি ছাড়া এ ঘাট দিয়ে পার হতে পারিনি।’

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন চুয়াডাঙ্গা থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে আসা নারায়ণগঞ্জগামী ট্রাকচালক শহিদুল ইসলাম।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ফেরি পার হতে আসা পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সিরিয়াল তৈরি হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ সিরিয়াল আরও বাড়তে থাকে। পদ্মার পানি কমে যাওয়ায় ফেরিঘাটের পন্টুন নিচু হয়ে গেছে। ফলে ফেরিতে গাড়ি লোড-আনলোডে আগের চেয়ে দ্বিগুণ সময় ব্যয় হচ্ছে। এ ছাড়া ঘাটে ফেরি-সংকটও দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঘাটে অপেক্ষা করে দেখা যায়, ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ রেলগেট পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। অপেক্ষমাণ এসব যানবাহনের মধ্যে যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যা কম। দীর্ঘ সময় সিরিয়ালে আটকে থাকা এসব যানবাহনের চালকদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

এ ছাড়া ঘাট এলাকায় যানজট কমাতে ঘাট থেকে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার পেছনে গোয়ালন্দ মোড়ে অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে আটকে দিচ্ছে পুলিশ। এতে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কে আরও দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ট্রাকের সিরিয়াল তৈরি হয়েছে।

বেনাপোল বন্দর থেকে চাল বোঝাই করে আসেন ট্রাকচালক ইসহাক আলী। তিনি ঢাকার কারওয়ান বাজারে যাবেন। ভোগান্তির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ড্রাইভারদের কোনো জীবন আছে নাকি? নাওয়া নাই, খাওয়া নাই, গোসল নাই। সারা দিন রাস্তায় পড়ে থাকতে হয়, তারপর আবার ফেরির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এ ভোগান্তির শেষ কোথায়।

রাজবাড়ী থেকে কুরিয়ারের মাল বোঝাই করে ঢাকা আব্দুল্লাহপুর যাচ্ছেন মিরাজ শেখ। তিনি বলেন, বুধবার রাত ১২টার দিকে গোয়ালন্দ মোড়ে এসে আটকা পড়ি। আজ সকালে দৌলতদিয়া ঘাটে এসেও ট্রাকের সিরিয়ালে রয়েছি। টয়লেটের সমস্যা, খাওয়ার সমস্যা নিয়ে জীবন শেষ। জানি না কত দিন নদী পার হতে এ ভোগান্তি পোহাতে হবে। একটা ব্রিজ হলে ভালো হতো।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. শিহাব উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে এই রুটে ফেরি-সংকট দেখা দিয়েছে। আগে যেখানে ২০টি ফেরি চলাচল করত, এখন সেখানে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। ৩টি ফেরি ডাকওয়ার্ডে মেরামতের জন্য রয়েছে।

এ ছাড়া নদীতে পানি কমে গিয়ে পন্টুন নিচু হয়ে গেছে। ফলে প্রতিটি ফেরি লোড-আনলোডে দ্বিগুণ সময় লাগছে। ঢাকাগামী অতিরিক্ত গাড়ির চাপ থাকায় দৌলতদিয়া প্রান্তেও যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

মীর সামসুজ্জামান/এনএ