সহকারী শিক্ষিকা শামসুন্নাহার

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শামসুন্নাহারের ছেলের সঙ্গে ওই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে (১১) বিয়ে দেওয়ার সত্যতা পেয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এ ঘটনার পর ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিভাগীয় ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম কুমার কুণ্ডু।

বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম ভূইয়া। 

তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্কুলশিক্ষিকা তার অবস্থান থেকে এমন কাজ করতে পারেন না। তার অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলের সঙ্গে অপ্রাপ্তবয়স্ক স্কুলছাত্রীর বিয়ে দিয়েছেন এটা চরম আইন লঙ্ঘন। আমরা ঘটনার সত্যতা পেয়েছি।  আগামীকাল মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কর্তৃক ওই শিক্ষিকার সাময়িক বরখাস্তের চিঠি আমাদের হাতে চলে আসবে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও করা হবে।

এর আগে ২৮ মার্চ সকালে জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে ‘পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীর সঙ্গে ছেলের বিয়ে দিলেন স্কুলশিক্ষিকা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে। এরপর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম কুমার কুণ্ডু ঘটনা তদন্তে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুমা আক্তারকে সরেজমিনে পাঠান। সরেজমিন তদন্তে অভিযুক্ত শিক্ষিকা শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুমা আক্তারের কাছে ঘটনা স্বীকার করেন এবং লিখিত বক্তব্য দেন।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার উত্তম কুমার কুণ্ডু ঢাকা পোস্টকে বলেন, গণমাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে সোমবার সকালে  সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুমা আক্তারকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। পরে ওই শিক্ষিকা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন। এরপর আমি তাৎক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। 

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন। ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

গত ২০ মার্চ চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের ছোটশলুয়া গ্রামের ওই ছাত্রীর সঙ্গে একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শামসুন্নাহারের ছেলে যদুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র আব্দুর রহমানের বিয়ে দেওয়া হয়। প্রথম কয়েকদিন বিষয়টি গোপন থাকলেও বর নববধূকে নিয়ে ঘটা করে শ্বশুরবাড়ি ছোটশলুয়া গ্রামে বেড়াতে আসলে তা জানাজানি হয়ে যায়। এ নিয়ে সচেতন মহলে নানা সমালোচনা শুরু হয়।

সরেজমিনে বেগমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায়, মেহেদি রাঙা হাতে ক্লাস করছে ওই ছাত্রী। বিয়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে, ‘এক সপ্তাহ আগে ম্যাডামের ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে। বর্তমানে জামাই আমাদের বাড়িতে আছে। আমি বাড়িতে এসে স্কুলে ক্লাস করছি।’

এ সময় ক্লাস নিচ্ছিলেন অভিযুক্ত শিক্ষিকা শামসুন্নাহার। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীর সঙ্গে নিজের ছেলের বাল্যবিবাহ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ির অবস্থা খুব একটা ভালো না। বিশেষ করে আমার মায়ের খুব শরীর খারাপ। মায়ের ইচ্ছা নাতি ছেলের বউ দেখার। মায়ের ইচ্ছা পূরণ করার জন্যই ছেলের সঙ্গে ছাত্রীর বিয়ে দিয়েছি। তবে বিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয়নি। বেগমপুর দাখিল মাদরাসার শিক্ষক ও বেগমপুর ইউনিয়নের কাজি মফিজুল ইসলাম ধর্মীয় রীতি মেনে বিয়ে দিয়েছেন।’

আফজালুল হক/আরএআর