বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার পাঙ্গাশিয়া গ্রামের মৃত কালিদাস মন্ডলের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যাওয়ায় আল্পনা হালদার নামে এক শিক্ষকের পরিবারকে একঘরে করে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে শিক্ষক পরিবার।তারা বসতভিটা বিক্রি করে অন্য গ্রামে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। 

শিক্ষক আল্পনা হালদার চিতলমারী উপজেলার পাঙ্গাশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

শিক্ষক আল্পনা হালদার বলেন, গত ১৮ মার্চ পাঙ্গাশিয়া গ্রামের মৃত কালিদাস মন্ডলের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে আমার স্বামী সভা রঞ্জন গুহ অংশগ্রহণ করেন। সেখানে অতিথি আপ্যায়নে সহযোগিতা করেন তিনি। এ ঘটনার জের ধরে সমাজ ডেকে মুক্তবাংলা চারিপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মৃনাল কান্তি গুহ আমাদের পরিবারকে একঘরে ঘোষণা করেছেন। সেইসঙ্গে সমাজ থেকে আমাদের বাদ দিয়ে সব ধরনের আচার-অনুষ্ঠান করছেন।

শিক্ষক আল্পনা হালদারের স্বামী সভা রঞ্জন গুহ বলেন, একজন মৃত মানুষের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য আমাদের পরিবারকে সমাজ থেকে একঘরে করা হয়েছে। এখন বসতভিটা বিক্রি করে এলাকা ত্যাগ করা ছাড়া আমার কোনো উপায় নেই।

একঘরে ঘোষণাকারী মুক্তবাংলা চারিপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মৃনাল কান্তি গুহ বলেন, রঞ্জন গুহর বিষয়টি সামাজিক সিদ্ধান্ত। সমাজ প্রধান হিসেবে আমি বিষয়টি ঘোষণা দিয়েছি মাত্র। সভায় রঞ্জন গুহও উপস্থিত ছিলেন। 

মুক্তবাংলা চারিপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও মৃত কালিদাস মন্ডলের ভাই রুহিদাস মন্ডল বলেন, সমাজে যারা প্রধান তারা তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পুঁথি-পুস্তকের বাইরে সমাজে কিছু নিয়ম জারি করেছে। সমাজের নিরীহ মানুষদের ওপর তারা ওই নিয়ম চাপিয়ে দেন। যারা ওই নিয়ম মানতে চায় না, সমাজপতিরা তাদের একঘরে ঘোষণা করেন। শুধু সভা রঞ্জন একা নয়, আগেও বহু পরিবারকে একঘরে ঘোষণা করেছে ওই সমাজপতিরা।

স্থানীয় হিজলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী আবু সাহিন বলেন, ‘বিষয়টি আমিও শুনেছি। ওই এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। সেই বিরোধের জেরে এমনটা ঘটতে পারে। খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দেন তিনি।

চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইয়েদা ফয়জুন্নেছা বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। তারপরও বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখব।

তানজীম আহমেদ/এসপি