অভাবকে জয় করে চিকিৎসক হবার স্বপ্নে বিভোর সুবর্ণা আক্তার রুমি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। গত মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) এমবিবিএস কোর্সের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে রুমির মেরিট পজিশন ৩৮৫৬। চলতি শিক্ষাবর্ষে জামালপুরের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে এ মেধাবী শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

ফলাফল প্রকাশের পর থেকে খানিকটা সময় চোখে মুখে হাসির ঝিলিক থাকলেও এখন চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কপালে। দারিদ্রতার কষাঘাতে বেড়ে ওঠা সুবর্ণা আক্তার রুমি শঙ্কিত পারিবারিক দৈন্যদশায়। শেষ পর্যন্ত মেডিকেল কলেজে ভর্তি এবং চিকিৎসক হবার স্বপ্ন পূরণে দারিদ্রতা কোনো বাধা হয় কি না, সেটাই ভাবাচ্ছে পুরো পরিবারকে।

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার দ্বারিকাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সুবর্ণা আক্তার রুমি। তার বাবা শহিদুল ইসলাম স্থানীয় একটি মাদরাসার পিয়ন। অভাব অনটনের সংসার হলেও মেয়ের অদম্য ইচ্ছা পূরণে লেখাপড়ায় বরাবরই উৎসাহ দিয়ে আসছেন তিনি। 

নিজের জায়গা জমি আর সামর্থ্য না থাকলেও মেয়েকে কখনো হতাশ হতে দেননি শহিদুল। রুমিও স্বপ্ন দুয়ারে পৌঁছতে লেখাপড়ায় ছিলেন অটল। অবশেষে মেডিকেল কলেজে তার ভর্তির সুযোগ হয়েছে।

সুবর্ণা আক্তার রুমি রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এর আগে পীরগঞ্জ শেখ হাসিনা আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। মেধাবী এই শিক্ষার্থী প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হবার সঙ্গে বৃত্তিপ্রাপ্ত হয়েছেন।

পরিবারের চার মেয়ে সন্তানের মধ্যে রুমি দ্বিতীয়। বাবা পিয়ন পদে ছোট্ট একটা চাকরি করলে তার মা একজন আদর্শ গৃহিনী। রুমির বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। বর্তমানে এক বোন উচ্চ মাধ্যমিকে এবং সব ছোট বোনটি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছেন। এখন পরিবারের সবার চাওয়া রুমি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে এমবিবিএস শেষ করে মানবিক চিকিৎসক হবেন। কিন্তু তাদের এ স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দারিদ্রতা।

চিকিৎসক হবার ইচ্ছে প্রসঙ্গে সুবর্ণা আক্তার রুমি জানান, যখন সে ছোট ছিল, তখন হঠাৎ করে তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।  তখন বাবার সঙ্গে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেখানে বাবাকে প্রশ্ন করেছিলেন চিকিৎসক হতে হলে কি করতে হয়? উত্তরে তার বাবা খুব ভালোভাবে পড়াশোনা করতে বলেছিলেন। বাবার সেই কথা অন্তরে লালন করে চিকিৎসক হবার স্বপ্ন বুনতে থাকেন তিনি। স্বপ্ন পূরণে শত কষ্টের মাঝেও কমতি ছিল না চেষ্টা আর পড়ালেখায়।

রুমি বলেন, আমার হাতে স্মার্টফোন নেই, এ কথাটি কেউই বিশ্বাস করতে চায় না। আধুনিক যুগে হয়তো ফোন ছাড়া থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু আমি স্মার্টফোন ব্যবহার করিনি। কারণ স্মার্টফোন আশক্তি খুবই ক্ষতিকর। যথেষ্ট সময়ের অপচয় হয়। ফোন না থাকায় সবসময় লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করতে সুবিধা হয়েছে। আমার পড়াশোনার কোনো নির্ধারিত সময় ছিল না। যখন ইচ্ছে হয়েছে বইখাতা নিয়ে বসে পড়েছি।

তিনি আরও বলেন, রাতে পড়তে বসে তন্দ্রাছন্ন হলে চোখে পানি দিয়ে কিংবা চা পান করে তন্দ্রাভাব দূর করতাম। এতেও কাজ না হলে অনেক সময় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়তাম। তবে আজকে স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যাবার পথে আমার পরিবারের সদস্য ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা এবং সহযোগিতা আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছে।

সুবর্ণা আক্তার রুমি রংপুর শহরের একটি কোচিং সেন্টারে মেডিকেল ভর্তি কোচিং করেছেন। সেখানে ভালো ফলাফলের জন্য একাধিকবার পুরস্কৃত হয়েছেন। সব বাধা পেরিয়ে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়াটাই এখন রুমির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তবে রুমির ইচ্ছে, ভালো মানের চিকিৎসক হয়ে প্রতি মাসের যে কোনো একটি দিন করে গ্রামের মানুষদের অর্থ ছাড়াই চিকিৎসাসেবা প্রদান
করবেন। এজন্য সে দেশবাসীর কাছে দোয়া ও সহযোগিতাও চান।  

চাকরির সামান্য বেতনে পরিবারের বর্তমান ৫ সদস্যের সব খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে শহিদুল ইসলামকে। এ পরিস্থিতিতে মেডিকেল কলেজে রুমির ভর্তিতে যে অর্থের প্রয়োজন, তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি। পরিবারের খরচের পাশাপাশি রুমির শিক্ষাক্ষেত্রে অর্থ যোগান নিয়ে চিন্তিত শহিদুলের আকুতি, সমাজের বিত্তবান মানুষের সহযোগিতা পেলে মেয়ের স্বপ্ন পূরণের অগ্রযাত্রাটা মসৃণ হবে। এ কারণে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস